এক বিধবার ঘর জ্বলে মিটিমিটি সন্ধ্যেবেলায়
ভীষণ ধূসর অন্ধকারে তার শিখা নড়ে চুপি চুপি বাতাশে।
গুমোট নিস্তব্দতা শব্দহীন সন্ধ্যেবেলায়
মনে হয় স্বামীর কবরের উপর কোন মহল গড়েছেন
শুধু নৈর্ব্যক্তিক বেঁচে থাকা, ভিটেকে আশ্রয় ক’রে –
এক বিধবার ঘর।
ছোট ছেলেটি তাঁর কাঁদে কোঁকিয়ে ইচ্ছামতো
গরম পিঠাপুলি নাকি দুধের জমাট সরের জন্যে
গড়াগড়ি খায় হাতপা ছুঁড়ে কান্না কেঁদে
অবোধ্য ভাষার প্রলেপ জড়ানো সে কান্না,
মনে হয় স্বগতঃ বাবার কথাই বলে সে।
বলে, ওদের মতো বাবা, কোথায় আমার
যে আমার গালে চুমু খাবে, কাঁধে নিয়ে বেড়াবে
সময় সময় নিমকি ভাজা এনে দেবে
ছোট লাল গেঞ্জি, খেলনা ঘড়ি -
নামার হাট থেকে শুক্কুরবার মঙ্গলবার দিনগুলোতে।
কিংবা এও হয়তো বলে-
মায়ের পাশের বিছানাটা বড্ড প’ড়ে থাকে
মধ্যরাতে মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে
ঈশ্বরের কাছে কী সব ব’লে চোখের জল ফেলে
এবং তৎক্ষণাৎ কেন তাকে জড়িয়ে ধরে
এইসব।
এক বিধবার ঘর। বড্ড অগোছাল
মনে হয় স্বামী তার এইমাত্র শহরে কাজে চ’লে গেছেন
সাংসারিক ঝামেলায় শাড়ির ছেঁড়াটা
অদ্যাবধি সেলাই করা হয়নি।
খিড়কীর খোলা ভাঙ্গা দেয়ালে
আজও পাটশোলার বেড়া হয়নি
নারকেল গাছের নিচে প’ড়ে থাকা
ভাঙ্গা চেয়ারটার হাতল পায়া হয়নি
ঠিক এই মিলিয়ে এক বিধবার ঘর।
স্বামীর মৃত্যুবার্ষিকী ঘরে আসে
প্রার্থনার দাবি নিয়ে।
তাঁর আত্মার কল্যাণে
কোনমতে চারটে মোমবাতির পয়সা
যোগাড় করতেই হয়।
মহিলা সমিতির সদস্যাদের নিয়ে
এক সন্ধ্যা শোক প্রার্থনা
স্বামীর ভিটায় বাতি জ্বালাবার নোতুন শপথ
প্রলোভনের মুখে প্রত্যয়ী হওয়ার অঙ্গীকার।
সন্তানদের একমাত্র সম্বল ক’রে
ইহ সংসার নিষ্পন্ন করার প্রতিজ্ঞা।
এক বিধবা ঠিক এমনি বেঁচে আছেন
স্বামীর ঘরকে আশ্রয় ক’রে।।