তুমি স্বীকৃত ব্যবস্থায় একটি শিশুর মা হতে চাও, হে নারি!
তুমি চাও মাতৃত্বের অহংকারে গর্বিতা হতে-
দু’হাত ভ’রে আদর করতে নবজাতককে।
কিন্তু তুমি জানো নারী, কাপুরুষ শাসিত এ সমাজ
তোমাকে সেই স্বীকৃত অধিকার থেকে
মুহূর্তেই বঞ্চিত ক’রে দিতে পারে?
তার ক্রুর দন্তপাটির অন্তরালে যে বিষ জ’মে আছে
তার দংশনে তোমার ওই দেহটাকে
বিষপাথর ক’রে দিতে পারে?
দিতে পারে তোমায় অক্ষচ্যূত ক’রে, সম্ভ্রমে তোমার
হায়েনার জর্জর লোলুপ চিহ্ন দিতে?
যে ভালোবাসা তোমার বুকে, মুখে সবুজ হাসি
কাজলটানা চোখে কী মায়াবী স্বপ্ন-
একজন কৃতার্থ পুরুষের কাছে যা স্বপ্নের মতো মনে হয়।
অনেক প্রার্থনায় তাকে সাধন করতে হয়-
আর তার সমস্তই কোন কৃতঘ্ন পুরুষের পায়ের নীচে
ভাঙচুর হয়ে গড়াগড়ি যেতে কতক্ষণ?
কতক্ষণ নারী ভালোবাসার রঙ্গিন বেলুন
ফুলে ফেঁপে সমূহ অস্তিত্বে ফেটে পড়তে?
মুহূর্তে তোমার চন্দন হৃদয়ে কলঙ্কের
দাগ পড়তে কতক্ষণ?
তোমার যে ভালোবাসার পায়রা ডানা মেলে
উড়ে যায় নারী। উড়ে যায় – আর ফিরে না
সূর্যরঙিন বিকেল ঘরে নিয়ে।
নারী, আর কেন নির্ঘুম রাত্রি যাপন একা–
কেরোসিন প্রদীপ নিভে আসে দেখ
দূরে কোথাও মুখ ভেংচে ওঠে পেচা–
তুমি যাকে বেঁধেছিলে,
আঁচলে আলিঙ্গনে আদর ক’রে-
মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সব নিয়ে চ’লে যায় সে
বন্ধ্যা ব’লে সমস্ত অভিশাপ তার
তোমার উপর উগড়ে ঢেলে দিয়ে যায়।
সেই কাপুরুষ আর ফিরে আসে না ঘরে।
তাকিয়ে দেখ নারী –
জমকালো অন্ধকারে পাঁচতারা হোটেলের
নীচে অসংখ্য পতঙ্গের মত মানুষ,
যে বস্তিতে একত্রিত ওঁত পেতে আছে
তার আশেপাশে বাতাশ থমকে আছে।
অসংখ্য শিশুর সুতীব্র চিৎকারে
অদৃশ্য ঈশ্বরের আত্মা অনবরত জর্জরিত হচ্ছে।
কোথায় তাদের স্বীকৃত অধিকার –
জন্ম-জন্মান্তরের নির্লিপ্ত আকাঙ্ক্ষা
মায়ের বুকের এক ফোঁটা দুধে গলা ভেজাবার পিপাসা।
নারী, বাঁচার জন্য ন্যূনতম অধিকারের দরখাস্ত নিয়ে
যে শিশুরা সারিবদ্ধ প্রতীক্ষায় –
কে দেবে তাদের ছাড়পত্র?
তোমার বুকের ভিতর কি আর একটি
মা তেরেজার অদৃশ্য বৃক্ষ শেকড় গেড়ে ওঠে না?
তোমার শুভ্র হাতের পরশে অসংখ্য নবজাতকদের
শরীরের কালি ধুয়ে যেতে পারে না?
আর নয় দুর্বিনীত কাপুরুষ,
আর নয় পতিতা লাঞ্ছিতা মা-বোন।
এবার এ সমস্ত ‘জারজদের’ মধ্যে জন্ম দাও হে নারি-
পবিত্র মানব সন্তানের।
-দাও মহান মানব সন্তান!