ভূগোলের সেই সচলচিত্র
এখন আর নেই। নেই তাকে
খুঁজে পাওয়ার কোন সম্ভাবনাও।
ইতোমধ্যে সকলের অগোচরেই
কোথায় হারিয়ে গেছে সেই সময়!
সেই নান্দনিক চিত্রমালা!
এখন কোন সমূহ সম্ভাবনাও নেই
আবার ফিরে পাওয়া যাবে
হারিয়ে যাওয়া সেই সময়।
ফিরে পাওয়া যাবে
সেই সূর্যঝলমল শ্যামলিমা।
আলোছায়ার মায়াবী লুকোচুরির
অন্তহীন দীঘলসময় কোথায় মিলিয়ে গেছে!
কোথায় হারিয়ে গেছে সেই দিনের প্রতিচ্ছবি?
এখন সবকিছুই কেম
রূপকথার গল্পকথার মতই মনে হচ্ছে।
যা একবার হারিয়ে যায় সময়ের আড়ালে
পর্দার ওপাশে চলে গেলে
তা কি আবার আসে ফিরে সহসাই?
আসে কি ধীরে আবার তার পূর্বেকার পরিসরে
একবার হারিয়ে যায় সময়?
আর যত হারিয়ে গেছে
মানবীয় দীর্ঘ আয়তনের
পরম্পরার শ্রেণীবদ্ধ সেই চিত্রমালা এ জগতের।
এ বিশ্বচরাচরের লম্বিত স্বচ্ছ অবয়বে
মানুষ আবার ফিরে পেতে
তাকায় সামনে। তাকায় পিছনেও।
নাহ্! সংকীর্ণই তার সম্ভাবনা।
যে পথে চলে গেছে সময়
সে পথে সাথে নিয়ে গেছে তার
সব নান্দনিক কিছু।
তাই এখন কী এক অনিবার্য বিবমিষা মানুষকে
ব্যাপৃত করে রাখে নিয়তই।
তার মননের বাইরের অন্য কিছু নিয়ে ভাবার
সেই সময়ও বুঝি আর নেই!
সুযোগও নেই আর!
নিত্যই বেঁচে থাকার একপ্রস্থ বিশুদ্ধ বাতাশ
খুঁজে পাবার সংগ্রামেই তাকে তটস্থ থাকতে হচ্ছে।
সেই পলিবিধৌত স্বচ্ছ জলধারাও নেই।
নেই নতুন শস্যের আবাদি নিসর্গ।
পাখ-পাখালির কলতান মুখর
সেই দখিনা বাতাশের নিপাট প্রবাহ।
নেই! কোথাও নেই ঝিঁ ঝিঁ পোকার
প্রাণ মাতানো সেই ছন্দমালা।
নেই, বাসন্তীবেলায় কোকিলের কুহুতান।
এতসব ছিল যখন,
তখন, এই ভূগোলের চিত্র ছিল কেমন
উদ্বেলিত প্রাণের আবেগে মত্ত।
সর্বত্রই মানুষের মায়াবী জীবনপাতায়
বিলাসী স্বপ্নজাল ছিল বিস্তৃত।
ছিল প্রকাশ্যে বিধৃত।
কিন্তু কখন মারীর অণুজীব হানা দেয়
স্বপ্নের প্রকোষ্ঠে একেবারেই অলক্ষ্যে।
কী এক অলৌকিক তাণ্ডবে মত্ত হয়!
সবকিছু ভেঙ্গেচুরে সমূহ জগতকে
করে বিধ্বস্ত।
আলোর সরোবরে যেখানে ছিল
সূর্যদীঘল সবুজের উচ্ছলতা
ছিল পরতে পরতে প্রাণের অনাবিল উন্মেষ
সেখানে সহসাই কী এক
ভয়ঙ্কর নেকড়ে রক্তনেশায় উন্মত্ত হয়ে
সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে দখলে নেয়।
সমূলেই জগতকে নির্জীব করে
মহাশ্মশানের রূপ দিতে!
আর ইতোমধ্যেই শ্মশানের নিস্তব্ধতা যেন
পুরো জগতটাকে আচ্ছন্ন করে দেয়।
জগতের প্রাণীকুল সবই যেন মৃত্যুশঙ্কায়
নিমগ্ন হয়ে পড়ে। তাদের যাপিত জীবনের অনুষঙ্গে
নেই প্রাণব্যাকুল মাতামাতি।
নেই সৃষ্টির মূর্ছনা।
চিত্র এখন ঠিক এমনই বিবর্ণ!
ঠিক এমনই পরাবাস্তবের
গুরুগম্ভির নিনাদে পর্যুদস্ত
মানবীয় জগত এখন!
সেপ্টেম্বর তিরিশ, দুই হাজার একুশ খ্রীষ্টাব্দ
রাত্রিঃ নয়টা তিরিশ