দুখু মিয়া, আপনি ঠিকই বলেছেন।
দেশটা একেবারেই উজাড় হয়ে গেছে।
আমি এখন বেগমপাড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।
আর আমার পিছনে সারি সারি দেখতে পাচ্ছেন
বাহারি আলিশান অট্টালিকা যত।
সেখানে আমাদের বেগমরা চিরশান্তিতেই
অবস্থান করছেন। এই আমাদের বেগমদের
সাহেবরা কিন্তু স্থায়ীভাবে তাঁদের
অনেকেই এখানে নেই।
তাঁরা হরহামেশা হুটহাট আসেন।
আবার দেশে চলে যান। উনারা সকলেই
যার যার মত দেশেই বহাল তবিয়তে আছেন।
তাঁরা তাঁদের চলমান ব্যবসায় নিয়েই ব্যতিব্যস্ত।
তাঁরা সকলেই যে ভাবেই পারছেন চার হাত পায়
দেদারসে কামাচ্ছেন। আর সাধ্যমত মালপানি
পাচার করে দিচ্ছেন তাঁদের বেগমদের আস্তানায়।
আর সাহেবদের যারা এখানে আছেন
তাঁরা তাঁদের বয়সের ভারে নুয়ে পড়া জীবন নিয়ে
অবসর জীবন কাটাচ্ছেন নির্বিঘ্নে।
আমি এখন এখানে বেগমপাড়ায় দাঁড়িয়ে।
এখন নিজেকেও বেশ সাহেবি মনে হচ্ছে।
মনে হচ্ছে জীবনের যত রসের আর যত মধুর নহবত
এখানে এই বেগমপাড়ায় চিরবহমান।
আপনি চিন্তা করতে পারবেন না দুখু মিয়া।
দেশের আমাদের গরিবের টাকা কীভাবে
এই বেগমপাড়ায় চলে এসেছে। চলে এখনও আসছে।
আগামিতেও আসবে। এই চলে আসা এক নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া।
আপনি দেখতে পাচ্ছেন, ওই যে ওদিকে খোলা বিস্তীর্ণ এলাকা
ওখানে এখন মাটি ভরাটের কাজ চলছে।
যতসব খানাখন্দ, বনাঞ্চল সবই চলে এসেছে
বেগমপাড়া প্রকল্পের আওতায়।
দুখু মিয়া, আপনি নিশ্চয় দেখতে পাচ্ছেন
একেকটা অট্টালিকার সামনে সারি সারি কত গাড়ি!
কত দামি গাড়ি! রাস্তার এ পাশে, ও পাশে
সব খোলা জায়গা দখল হয়ে আছে এই সমস্ত গাড়িতে!
আর, আমাদের দেশি সাহেবদের ঔরসে
প্রবাসী বেগমদের গর্ভজাত ছাপোনারা সকলেই এখানে এখন
ঘরবন্দি হয়ে আছে। করোনার কারণে
তাদের স্কুলকলেজের গেইট বন্ধ হয়ে গেছে। আর এখন তারা
নিজেদের অন্দরমহলেই অনলাইনে তাদের পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত।
দেশের যে চাষাভূষা, দিনমজুর, সাধারণ চাকুরিজীবী, কারখানার মজুর,
দেশের বাইরের যত ঘর্মাক্ত রেমিট্যান্সযোদ্ধা তাদের করের টাকায়
গড়ে উঠেছে ক্রমবর্ধিষ্ণু এই বেগমপাড়া। আজ এখানে দাঁড়িয়ে
এ সময় এখন তাঁদের কথাই মনে পড়ছে কেবল।
এখানে অবস্থানকারী বেগমদের অনেকেই নিকট অতীতেও
দেশে বাঁদির মতন দিনরাত হেঁশেলে খেটে মরেছেন।
অনেকে আবার গ্রামেই চুলা ঠেলেছেন।
দুখু মিয়া, আপনি দেখুন। তাঁদের ভাগ্যের কী বাহানা!
কাল তাঁরা কোথায় ছিলেন। আর আজ কোথায় আছেন!
আজ বেগমপাড়ার উপকথার প্রথম পর্বের এ পর্যায় ইতি টানছি।
নীরব দর্শক
দুঃসময় সংবাদ
বেগমপাড়া, কানাডা।