রক্তক্ষরণ! যেন বা হচ্ছেই প্রতিনিয়ত।
যেন বা রক্তক্ষরণ একটি নৈমিত্তিক সাধারণ বিষয়।
যেন বা রক্ত ঝরেই যাবে স্বাভাবিক গতিতে।
যদিবা মাত্রা অতিক্রম করে,
যদিবা কোনমতেই তাকে আর থামান না যায়।
যদিবা ধামাচাপা দেয়া না যায়। এমনকি যদি বা
পরিত্যক্ত অবস্থায় অগোচরে কোথাও ক্ষরণ হয় রক্তের
তা মাত্রা অতিক্রম করলেই প্রকাশ্যে আসে,
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।
এই ক্ষরণের সাথে আছে রক্তের সম্পর্ক।
আছে অশ্রু। আছে সুতীব্র বা নীরব হাহাকার।
একেবারে টগবগে লাল রক্তের কণিকায়
বিস্তৃত হয় জীবনের উপকথা।
জীবনের গতি এসে থমকে দাঁড়ায়
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে।
তারপর যখন ক্ষরণের শুরু
যখন চিত্রায়ন শুরু হয়
তখন তার প্রদীপের শিখা ক্রমশ
ম্লান হতে থাকে। প্রজ্বলিত হওয়া তো
অনেক দূরে, জীবন প্রদীপ নিভে নিভে
যেতেই যা সময়। তারপর।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
সব কিছুকে সসত্ত্বায় ঢেকে দেয়।
যেন পূর্ণিমার চাঁদ ঢেকে যায়
অমাবস্যার আঁধারে। যেন উন্মত্ত নদী
ঢাকা পড়ে যায় ভাটার টানে।
ঠিক তেমনই সমূহ সত্ত্বা
ঢাকা পড়ে যায় শুভ্র কফিনের
ঢাকনার নিচে। কফিনের সেই
ঢাকনা খুললেই লাল রক্তের
টানা দৃশ্যপট উপচে পড়তে চায়।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ধারাকে
কোন কিছুই আর বাধা দিতে পারে না।
রক্তক্ষরণ হয় মস্তিষ্কে। রক্তক্ষরণ হয় হৃদয়ে।
রক্তক্ষরণ হয় বুকে। রক্তক্ষরণ হয় ধমনিতে।
রক্তক্ষরণ হয় শিরায় উপশিরায়।
রক্তক্ষরণ হয় মানুষের সমূহ অস্তিত্বে।
কোথায় নেই এই যন্ত্রণার ইতিহাস?
ইতিহাস মানুষের রক্তাক্ত দলিল
যে দলিলে লেখা রয়েছে শুধুই
সময়ের কাছে সমর্পিত রক্তপাতের করুণ কথামালা।
মানুষ হয়েছে নিপীড়িত। হয়েছে যন্ত্রণাকাতর।
রক্তের অক্ষরে লেখা হয়েছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায়
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আলাপনের শব্দমালা।
মানুষ কতকাল, কতবার আর্তচিৎকারে
নিজেকে সমর্পিত করেছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই।
মানুষ কতকাল শ্বাসরুদ্ধকর চাপা নগ্নতায়
নিষ্পেষিত হয়েছে তারও ইয়ত্তা নেই।
বাঁচাও বাঁচাও বলে গলা ফাটিয়ে
নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েছে।
কিন্তু পারেনি মানুষ।
মানুষ পারেনি সফল হতে।
পারেনি তার আর্তচিৎকার অন্যের কর্ণকুহরে পৌঁছে দিতে।
অন্যের বুকে তার হাতের আঘাত
কোনভাবেই স্পন্দিত হতে পারেনি।
মানুষ মানুষের জন্য এই সাঙ্গিতিক বাণী
পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে বারবার।
তাই বরাবরই মানুষ হয়েছে রক্তাক্ত।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ।
বুকে রক্তক্ষরণ। ধমনীতে রক্তক্ষরণ।
শিরায় উপশিরায় রক্তক্ষরণ।
রক্তক্ষরণ তার সমূহ অস্তিত্বেই।
আহা মানুষ! তুমি তো পশু নও।
পশু পশুকে রক্তাক্ত করে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে।
পশু রক্তের পিছনে দ্রুতবেগে ছুটে চলে রক্তের নেশায়।
কিন্তু তুমি তো মানুষ। তুমি কেন রক্তের নেশায় উন্মত্ত?
তুমি কেন হায়েনার চরিত্র নিয়ে
চড়াও হও মানুষের উপর?
উদ্যত তোমার থাবা এবার গুঁটিয়ে নাও।
উন্মত্ত তোমার পাশবিকতায় লাগাম টেনে ধর।
মানুষ হয়ে মানুষকে আর নয়
রক্তাক্ত অবয়বে দেখা।
মানুষ হয়ে মানুষের অবারিত রক্তক্ষরণ কর বন্ধ।
এবার তোমার হাত বাড়িয়ে মুছে দাও মানুষের অশ্রু।
তার ক্ষত স্পর্শ কর। মুছে দাও তার রক্তক্ষরণ
তোমার পেলব হাতের ছোঁয়ায়।