কিছু কিছু  শব্দ মনের গভীরে
বার বার আঘাত হানে। অনবরত।
তখন নিজেকে আর সামলে উঠে
সুস্থির হতে পারি না। একেবারেই মনের গভীরে
কী এক দুর্বিষহ অস্থিরতা!
কী এক টানা বৈকল্য ভাব মুষড়ে রাখে নিয়তই!

কেন? জীবনটা কি এমনই এক খেরোখাতা?
যার পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায় একই শব্দের পুনরাবৃত্তি?
ভালোবাসা! ভালোবাসা! ভালোবাসা!
কী এক অলৌকিক সংবেদে নিজেকে তাই
করেই রেখেছি মোহগ্রস্ত।
তা বুঝে উঠতেই অঢেল সময় হচ্ছে পার।
উঠতেই পারছি না বুঝে!
তাই টুকরো টুকরো মুহূর্তগুলো
কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
টুকরো টুকরো স্বপ্নমালা একই সমান্তরালে
সুস্থির হতে পারছে না আর।

তবে কি জীবনের তেমুখে এসে দাঁড়িয়ে
নিজেই পথ ভুলে বসে আছি?
যেদিকে তাকাই ভালোবাসা।
যেদিকেই ঘুরি ভালোবাসা।
হাত বাড়াই যেদিকে ভালোবাসাই সেই।
ওদিকে তাকিয়ে দেখি
সূর্যটা হেলে পড়েছে।
দূরে কার হাতল ভাঙা চেয়ার তাত্ত্বিকের মত
স্থবির হয়ে ইতিহাসের জাবর কাটছে।
এখানেও এই কিছুক্ষণ আগে
একজন প্রৌঢ় চোখে মোটা ফ্রেম সাঁটা
নিবিষ্টমনে দৈনিকের শিরোনাম হাতড়ে ফিরেছেন।
শেষে ভালোবাসার উৎপাতে অসহ্য হয়ে
বিরক্তি নিয়ে উঠে গেছেন অন্দরে।
তিনি চেয়েছিলেন সদ্যোজাত সংবাদগুলো
যেন তাঁর মস্তিষ্কে নাড়া দিয়ে
তাঁর এই পড়ন্ত জৈবিক ক্ষুধাকে নিবৃত করে।
কিন্তু, ভালোবাসা শব্দগুলো দৈনিকের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায়
বিজ্ঞাপন সমেত সমূলে আকীর্ণ হয়ে আছে।

তবে আমিও কি আমার ওই অগ্রজের মতো
উঠেই যাবো সময়ের তৈলাক্ত হাতল বেয়ে?
আর সিঁড়ির পাঁজরে পাঁজরে রেখে যাবো
সময়ের ধুলো। যেখানে ছড়িয়ে থাকবে
সূর্যাস্তের ঝকমকে সোনালি দানাগুলো।
আহা! কী সময় আমার ফেলে এসেছি পিছনে!
কী অনবদ্য সময় আমার
ভালোবাসার স্পন্দনে শব্দময় হয়ে থাকতো!
আর এখন আমিও যেদিকে তাকাই
দেখি, হাতল ভাঙা চেয়ারের
ত্রিভূজ অবয়বে ভাঙ্গনের মর্মান্তিক চিত্র কেবল!
এ চিত্রের সমাহারে
একটু সুস্থির হয়ে বসা যায় না।
দাঁড়িয়েও থাকা যায় না।
আমার চোখেও দেখি সেই কালো ফ্রেমের চশমা!
মোটা লেন্সের তির্যক প্রতিবিম্বে
সবকিছু কেমন গুলিয়ে যায়!

কোথায় ভালোবাসা? কোথায় কী?
পুরো জগতটাই দেখি
দৈনিকের চেহারায় শিরোনামের পর শিরোনামে
রাজ্যের সবকিছু নিয়ে গুলিয়ে আছে!
ভালোবাসা শব্দে প্রথম পৃষ্ঠার প্রধান শিরোনাম
বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে একাকার।
পাতা উল্টালে ভিতরে সম্পাদকীয় উপসম্পাদকীয় স্তম্ভে
এমন কি ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনে
সিনেমার পাতায় নারী চরিত্রে আকীর্ণ পোস্টারে
সেই একই শব্দ আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত লাভার মতো
টুকরো টুকরো ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
কোথাও এতটুকু পরিসর নেই। এমন কি শেষ পৃষ্ঠায় ও
সেই ভালোবাসা জমিন জুড়ে অবস্থান নিয়েছে।

তাই আমি এই তেমাথা থেকে সরে যেতে চাই।
আমি ওই ভাঙা হাতলের চেয়ারের বৃত্ত থেকে
বেরিয়ে যেতে চাই। আমি আমার সামনের ওই
সূর্যাস্তের চিত্রমালা আর সহ্য করতে পারছি না।
ওই সূর্যাস্ত মানেই তো শেষ হয়ে যাওয়া
তেমাথায় এসে দাঁড়ানো মানেই তো
মনোবৈকল্যে আবিষ্ট হয়ে
কোনদিকে যাবো বলে দ্বন্দ্বে পরিবৃত হওয়া।
না সূর্যাস্ত। না এই পথের সমাহার।
কোনটাই চাই না এখন, এ সময়।

এখন আমি আবার ফিরে যেতে যাই
আমার সংবেদের সেই পুরনো আবাসে।
যেখানে ভালোবাসাকে খুঁজে ফিরেছি অহরহ।
অনুক্ষণ। হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে ভালোবাসা
পেয়ে হয়েছি পরিতৃপ্ত!
তাহলে এখনই ঘুরে দাঁড়াই।
বুঝি। এখনই সময় নিজেকে ফেরাবার।
আমার উল্টো দিকেই অন্যচিত্র।
আমি কল্পনা করি।
এখানে সূর্যাস্তের লালাভ আলো নেই
আছে প্রভাতের অনুরণন। পাখির কিচিরমিচির।
আমি আবার দৌড়াই সেদিকে।

হা ভালোবাসা! ভালোবাসা!
আমি আবার হাতড়ে হাতড়ে
তোমাকে পেয়ে পরিতৃপ্ত হবো খুঁজে খুঁজে।
ওই তো দূরে, অনেক দূরে
দেখি আমার সেই অনবদ্য ভালোবাসা!
আমি আবার ভালোবাসার অনবদ্য
পাঠ নিতে চাই। নিমগ্ন হতে চাই
তার নব নব সূত্রমালা মুখস্থ করে।
চাই নান্দনিক ভালোবাসায় সমৃদ্ধ
বর্ণিল সংকলন!