-----------------------------------------

সেই কবে স্মরণাতীতকালে
নিজেই হাটে যেয়ে
সের দরে বিক্রি ক’রে দিয়েছিলাম
আমার পাণ্ডুলিপিগুলো।

নির্মম হাতে মুড়িয়ে
সূতলি দিয়ে শক্ত ক’রে বেঁধেছেধে সব
বস্তাবন্দি ক’রে
একেবারেই নির্দয়চিত্তে
মনের আক্রোশে
ছুঁড়ে মেরেছিলাম খোলা বারান্দায়।
আর আমার সেই পাণ্ডুলিপির দলা
গড়িয়ে পড়েছিল স্যাঁতস্যাঁতে উঠানে।
সেখানে কিছু আলগা মাটি ছিল।
সেই মাটির লাল আস্তরণ মেখে
মৃত্তিকাময় হয়েছিল আমার পাণ্ডুলিপি!

আর নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলাম চাঙ্গারিতে।
মাথায় তুলে সেই চাঙ্গারি
বয়ে নিয়ে হেটে গিয়েছিলাম উলুখোলা হাটে।
একেবারে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে
গিয়ে পা রেখেছিলাম লোকারণ্য চৈত্রময় হাটে।
মুদির দোকানে দোকানে ঘুরে
শেষতক উমা কাকার হাতে
তুলে দিয়ছিলাম আমার পাণ্ডুলিপির বস্তা।
তিনি ওদিনই আমার সামনেই
একটা একটা পৃষ্ঠা খুলে
আলগা ক’রে তাতে মশলা পেঁচিয়ে
শুকনো মরিচ পেঁচিয়ে; নুন ধূপ মুড়িয়ে
তাঁর নিয়মিত খদ্দেরদের হাতে
তুলে দিয়েছিলেন আমার পাণ্ডুলিপি।

আমি কিছুক্ষণ নির্বোধের মতো
দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম ব্যবচ্ছেদকাণ্ড!
আমার পাণ্ডুলিপির ময়নাতদন্ত!
আমার বুক ফেটে চোখ ভিজে
দু’গাল স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গিয়েছিল
আমার বাড়ির আলগা উঠানের ন্যায়।

মনে পড়ে-
আমি উমা কাকাকে বলেছিলাম,
কাকা আমাকে সাদাপাতা দেন তো।
গুল থাকলে, জর্দাও দেন সাথে।
তিনি আমার পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা খুলে
একটার দুইটার তিনটার মধ্যে
একে একে সাদাপাতা গুল জর্দা পেঁচিয়ে
তুলে দিয়েছিলেন আমার হাতে।
আমি হতভম্ব এক, তাঁরই কাছে
পাণ্ডুলিপি বিক্রির টাকা থেকে
গুণে গুণে নির্বোধের মতো
দাম পরিশোধ করেছিলাম।

মনে পড়ে-
বাড়ি যেয়ে আমি
মনের দুঃখে পানের সাথে
সাদাপাতা জর্দা খেয়েছিলাম।
গুল মুখে রেখে পরের দিন
ইছাপুরা গিয়েছিলাম
কবির লড়াই দেখতে।

আর এখন-
এতদিন পর
সেই অতীত এসে আমাকে
প্রচণ্ড ধাক্কা মারছে।
বাংলাবাজার থেকে
গণি সাহেব, মাযহারুল সাহেব
বার বার ফোন দিচ্ছেন।
সেই আপনার পাণ্ডুলিপিগুলো নিয়ে আসেন।
ওগুলোর বাজার খুবই চড়া এখন!

আর এই আমি বার বারই ফোন কেটে দেই।
তাঁরা ম্যাসেজ রাখছেন।
তা তো এখন করবেনই!
তা করতেই থাকুন তাঁরা।

আমি ততক্ষণে
আমার দণ্ডিত মস্তিষ্ক ঘাঁটতে থাকি।
কী কী লেখা
কী কী সব হিবিজিবি ছিল
আমার সেই পাণ্ডুলিপিতে!