শারীরিক জরুরি পরিসেবার ডাক বিলম্বিত করানো যায় কিন্তু বন্ধু হাফিজের ডাক বিলম্বিত করার উপায় নেই! বন্ধু হাফিজের পীড়াপীড়িতেই অগত্যা বাধ্য হয়েই বইমেলায় আসলাম। বন্ধু আবু কালাম ও আলী হাসানও আছে সাথে।দু'এক কলম লেখার অভ্যেস আছে আমার।"আমি কালো তুমি লাল,আমি দিঘি তুমি খাল" এ জাতীয় কবিতা লিখেই পাঠক মহলে না হলেও বন্ধু মহলে বেশ জনপ্রিয় কবির খেতাব পেয়েছি! অনেকে আবার ব্যঙ্গ করে কবিরাজ বলেও ডাকে! হাফিজ আমার আদিকালের বন্ধু।মানে ল্যাংটা কালের বন্ধু।ছাত্রাবস্থায় বিবাহিত সূত্রে ডজন খানেক শ্যালিকার দুলাভাই সে।সে সুবাদে বন্ধু মহলে এক্সট্রা খাতির যত্ন পায়। বিশেষ করে আবু কালাম,আলী হাসান আর বন্ধু বাবুল,সুপার গ্লো'র মতো লেখেই থাকে হাফিজের সাথে। হাফিজের শ্বশুর বাড়িতেও ওদের কয়েকবার যাওয়া আসা হয়ে গেছে।মাঝে মাঝে কবিতা লিখে ওয়াকফ করে দিতে হয় হাফিজের শ্যালিকাদের জন্য!তারা স্কুল-কলেজের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় স্বরচিত কবিতা বলে চালিয়ে দেয়!মাঝে মাঝে সেগুলো পুরস্কারও লাভ করে বলে জানতে পারি।তাতেই গর্বে ফুলে উঠে এ অধম লেখকের বুক।
বইমেলায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে বই দেখছি। (গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবে!তাই নিজের সম্পর্কে প্রকৃত সত্যটা বরং গোপনই থাক)আর ওরা দেখছে বউ!চমৎকার চমৎকার সব বউ দেখার জন্যই মূলতঃ বইমেলায় ওদের আগমন!কারণ ঢাকা শহরের সব সুন্দর সুন্দর বউ এসে জমায়েত হয় বইমেলায়।তাই দৃষ্টি জুড়ানোর সুখে খামোখাই অনেকে প্রতিদিন বইমেলায় তাশরিফ আনয়ন করেন।অনেকেই মজা করে একে বউ মেলা বলে!সাংবাদিকেরা খুঁজে খুঁজে এসব সুন্দর সুন্দর বউদের স্বাক্ষাৎকার প্রচার করেন টিভি চ্যানেলে।কিন্তু আমরা খুঁজে পাইনা কোনো টিভি চ্যানেলের লোককে!বই- বউ সবমিলিয়ে দারুণ জমে উঠে মেলা।বই মেলায় ঢুকেই আচমকা আমার বন্ধুদের ভিতরেও কবিত্ব ভর করতে থাকে!আলী হাসান বলে উঠল-
এসেছিলাম হে,বইমেলাতে
দেখলাম শুধু বৌ!
রসিক ভোমর খেয়েছে চুষে
ফুলের সমস্ত মৌ!
লোকজনের জটলা দেখে অন্যভুবন স্টলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। জনপ্রিয় কবি মুহাম্মদ আমির হোসেন এসেছেন আজ। দ্রোহের কবি,আধ্যাত্মিকতার কবি,জাগরণের কবি বলে পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত তিনি।পাঠকরা অটোগ্রাফের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে! হ য ব র ল অবস্থা!একেই বলে কবি।উনাকে দেখে নিজেকে আর কবি বলতে ইচ্ছে করে না। নিজেকে বটতলায় না খেয়ে পড়ে থাকা কবিদের কাতারের লোক বলে মনে হয়!ইচ্ছে ছিল তাঁর সাথে একটা সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে নিজের বিজ্ঞাপণ দিবো!পাঠক কিংবা বন্ধু-বান্ধব দেখুক- কত বড় বড় কবিদের সাথে সখ্যতা আমার!সে সুযোগ জুটলো না কপালে!
কয়েক স্টল সামনে যেতেই তরুণ স্ব-বিখ্যাত কবি চিশতী ভাইয়ের দেখা মিলল।প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য ব্যাপক সংগ্রাম করে যাচ্ছেন বেচারা কবি ভাই।ফেসবুক ভিত্তিক প্রায় সকল গ্রুপের অনুষ্ঠানেই তাকে দেখতে পাওয়া যায়।দাওয়াত পেলেও যান, না পেলেও যান! অতিথি হয়ে আসা বড় বড় কবি,এমপি -মন্ত্রীদের সাথে সেলফি তুলে নিজের টাইমলাইনে প্রচার করেন।অনেকেই তাকে অ-দাওয়াতি কবি কিংবা সেলফি কবি বলে ব্যঙ্গ করে থাকে।বিরস বদনে প্রায় জনশূন্য একটি স্টলে বসে আছেন তিঁনি।জোর করে লোকেদের ডেকে ধরে এনে অটোগ্রাফ দেয়ার চেষ্টা করছেন!তবুও লোকজনের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।চিশতী ভাইয়ের অসহায় অবস্থা দেখে বেশ মায়াই লাগল।এই বয়সেই তার মাথা সাহারা মরুভূমি!বোঝাই যায়- কবিতার ছন্দ-মিল মেলাতে উনার মাথার উপর দিয়ে কতটা ধকল যায়!টাকের উপর খাঁটি সরিষার তেল চুপচুপ করে মেখেছেন চিশতী ভাই!টাকের উপর সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে দারুণ চকচক করছে!ব্যাপক আশাবাদী মানুষ।অফুরন্ত প্রাণ শক্তিতে বলীয়ান।তাঁর মাথার চুল আবারও গজাবে এখনও তিনি সে বিশ্বাস পুষে রেখেছেন!একই পালের গরু আমরা!সে সুবাদে বেশ পরিচয় আছে কবি চিশতী ভাইয়ের সাথে।যদিও তিনি নিজেকে আমার চেয়ে বহু প্রতিভাবান বড় কবি মনে করেন। তার সাথে আমার একটি বিড়ম্বনার ঘটনাও আছে!ছোট্ট করে বলেই ফেলি।দেশের বড় বড় জাতীয় দৈনিকে আজ পর্যন্ত আমার কোনো লেখাই প্রকাশ হয়নি। বহুবার লেখা পাঠিয়েছি।মনে হয় আমার সেসব পাণ্ডুলিপি দিয়ে টেবিলে পড়া চা-কফি মোছেন ভারি কাঁচের চশমা পড়া সম্পাদক মহাশয়!কথা প্রসঙ্গে চিশতী ভাই ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে বললেন-টিপস জানতে হয় ভাই।আপনার সেরা কয়েকটি লেখা আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে দিয়েন।আগামী শুক্রবারই প্রকাশ করার ব্যবস্থা করে দেবো।
খুশিতে আত্মহারা হয়ে তৎক্ষণাৎ চিশতী ভাইকে নিজের সেরা কয়েকটি কবিতা হোয়াটসঅ্যাপ করলাম।বন্ধু-বান্ধব,এমনকি শ্বশুর বাড়ির লোকজনকেও আগামী শুক্রবার দেশের বড় বড় কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে চোখ রাখতে বললাম। প্রতীক্ষার প্রহর ভেঙ্গে শুক্রবার এল। নিজেও কয়েকটি পত্রিকা কিনলাম।পত্রিকার সাহিত্য পাতায় চোখ পড়তেই আমার চক্ষু কপালে উঠল!আমার লেখা কবিতা পেলাম ঠিকই কিন্তু লাদেন সার্চ দিয়েও নিজের নামটি খুঁজে পেলাম না!আমার কবিতা,কিন্তু নামের যায়গায় সাগরিকা চৌধুরী!তরুণীর সুন্দর একটি ছবিও ছাপা হয়েছে!বন্ধু-বান্ধব,শালা-শালি টিটকারী কাটতে শুরু করল!রাগে দুঃখে ব্যথিত হয়ে চিশতী ভাইকে ফোন দিলাম।চিশতী ভাই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে যা উত্তর দিলেন-শুনে হাসব না কাঁদব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না!চিশতী ভাই বললেন -ভাই,পত্রিকার সম্পাদক আপনাদের মতো অখ্যাত লেখকদের লেখা খুব কমই ছাপেন!তাই আপনার কবিতাগুলো সাগরিকা চৌধুরী নামে কয়েকটি পত্রিকা অফিসে ইমেইল করেছিলাম।গুগল থেকে সুন্দরী এক তরুণীর ছবি কালেক্ট করে এটাস্ট করে দিয়েছিলাম।বাকিটা ইতিহাস!চিশতী ভাইয়ের কথাগুলো বেকুব হয়ে শুধু শুনেছিলাম সেদিন!
চোখ পড়তেই চিশতী ভাই ব্যাপক উৎসাহী হয়ে কাছে যাওয়ার ইশারা করলেন।
স্টলের ভিতরে নিয়ে বসালেন।সেলফি তুললেন।লাল চা অর্ডার দিলেন।তিনি যে আসলে কত বড় মাপের লেখক তা আমার বন্ধুদের কাছেও প্রচার করতে লাগলেন!অর্থাৎ নিজেই নিজের ব্যাপক প্রশংসা শুরু করে দিলেন।অর্থাভাবে একক বই এখনও করতে পারেননি।কিন্তু তার দশটি যৌথ বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।এবার বই মেলাতেও তার একটি যৌথ বই বের হয়েছে।তার বিক্রি কিংবা প্রচার করতেই তিনি বইমেলায় আসেন রোজ।কিছুটা আক্ষেপের সুরে বললেন-আসলে কিছু কাটে ধারে আর কিছু কাটে ভারে। আমাদের ধার আছে কিন্তু ভার নাই।তাই আমরা যত ভালোই লিখি না কেন পাঠক তা খায় না।ঐ যে দেখেন কবি মুহম্মদ আমির হোসেন যে স্টলে বসেছেন,সেখানে কী ভিড়!উনি যা তা গু মোত নিয়ে লিখলেই পাবলিক তা টাকা দিয়ে কিনে নেয়। পত্রিকার লোকেরা বাসায় লাইন ধরে থাকেন।আর আমরা উনার চেয়ে বহুগুণ ভালো লিখেও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আবাল পাবলিকগুলানরে মাগনা খাওয়াতেই পারি না!
এরপর চিশতী ভাই নিজের অটোগ্রাফ সম্বলিত একটি যৌথ বই আমাকে উপহার দিলেন।কাব্যের মায়াজাল।সম্পাদনায়-কবি ফারুক ইসলাম।এখানে চিশতী ভাইয়ের দেড়টি কবিতা স্থান পেয়েছে।একটি বিশ লাইনের কবিতা আরেকটি এগারো লাইনের।তাতেই চিশতী ভাই আনন্দে আত্মহারা!বই থেকে নিজের কবিতা পাঠ করে শোনাতে লাগলেন।বিশ লাইনের কবিতাটি শাক-সবজি ফলমূল বিষয়ক।বোঝা গেল এটা আমার বন্ধুরাও খেল না। কিন্তু লিমেরিক স্টাইলের স্যাটায়ারধর্মী এগারো লাইনের কবিতাটি আমারও ভালো লাগলো শুনে।
বন্ধু-বান্ধব আমার কাছে চাইলে টাকা ধার
দেইনা কভু নিরাশ করে হাত ফিরায়ে তার।
দরকারে সে চায়গো যাহা
পুরোপুরিই পায়গো তাহা,
দুইশো টাকা দেইগো অধিক করতে নহে নাম ।
অবাক হয়ে জানতে সে চায়
দুইশো টাকা ক্যান বেশি হায়,
মুচকি হেসে বলি তারে এটা বাঁশের দাম !
উপকার যে করলো বাছায়
বাঁশটা দিবে তারি পাছায়,
সেই বাঁশের দামটা আগেভাগেই দিয়ে রাখলাম !
এসব কাব্যিক আলোচনা ভালো লাগছে না বন্ধুদের।চা শেষ না হওয়া অবদি একপ্রকার জোর করেই শুনেছে কিছুক্ষণ।একটু পরেই দেখি ওরা হাওয়া হয়ে গেছে!আমারও যে খুব আগ্রহ ঠিক তা ও নয়।সৌজন্যতা রক্ষার জন্যই কেবল জ্বি,হা,ঠিক বলে যাচ্ছি।
-তা ভাই সাব,ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন চলছে। চিশতী ভাই প্রসঙ্গ পাল্টালেন।
-এই চলছে আর কী।তবে এবার পশু থেকে মানুষের দিকে ব্যবসাটা ডাইভার্ট করেছি।
-মানে?চরম কৌতুহলী হয়ে চিশতী ভাই জানতে চাইলেন।
-মুচকি হেসে বললাম,মানে আগে খৈল-ভুষির ব্যবসা করতাম এখন ওসব বাদ দিয়ে চাল-ডাল,চিনি,আটা-ময়দার হোল সেল করছি আর কী।
-যাক আপনি পশু থেকে মানুষের দিকে পরিবর্তন হয়েছেন শুনে খুশি হলাম।চিশতী ভাইও মজার ছলে বললেন।
-তা ভাইসাব,ফেসবুকে আপনাকে পাই না কেন?লেখালেখি কি আটা-ময়দার সাথেই গুলিয়ে ফেলেছেন? শ্লেষাত্মক স্বরেই কথাগুলো বললেন।
-টুকটাক লিখে ডায়েরির ভিতরেই রেখে দেই। ফেসবুক টেসবুকে আর পোস্ট করি না।
-কেন?
-ফেসবুকে ওসব কেউ পড়ে? বলুন চিশতী ভাই?
-কী বলেন এসব? ফেসবুক-ই তো এখন সাহিত্য চর্চার মেইন প্লাটফর্ম।আজকাল বড় বড় কবিরাও তো ফেসবুকে লেখেন। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে উনারাও হয়তো লিখতেন। সম্ভবত আমার সাথে একমত হতে পারেননি চিশতী ভাই।
-উনারা লিখতেন কি না জানি না কিন্তু আমার আর ফেসবুক টেসবুক ভালো লাগে না।সবাই এখানে ফেস দেখতে আসে বুক পড়তে নয়। বুঝলেন।
-আপনার কথা মানতে পারলাম না।আসলে লেখার মতো লেখা হলে সবাই তা পড়ে। আবারো শ্লেষাত্মক সুর চিশতী ভাইয়ের কণ্ঠে।ভালো লেখা পোস্ট করেন দেখবেন কত লাইক কমেন্ট পড়ে।আমার তো প্রতিটি লেখাতেই পাঠকেরা পরিতৃপ্ত হয়ে সুন্দর,চমৎকার, অসাধারণ,দারুণ হয়েছে এসব কমেন্ট করে। আত্মগর্বে গর্ভবতী হওয়ার অবস্থা চিশতী ভাইয়ের!
-চিশতী ভাই,আপনি কি মনে করেন সবাই আপনার পুরো কবিতা পড়েই এসব মন্তব্য করে? একদমই না।অন্যসবার লেখাতেও দেখবেন একই রকমের মন্তব্য।একটা মন্তব্য লিখে শুধু কপি পেস্ট করে সব লেখাতেই।খেয়াল করে দেখেছি মৃত্যু সংবাদ লেখাতেও কিছু কিছু বেয়াক্কেল দারুণ,অসাধারণ,চমৎকার এসব কমেন্ট পেস্ট করে! এখানে সবাই কবি।পাঠক একজনও নাই।সবাই শুধু নিজের লেখাটাই অন্যদের পড়াতে চায় কিন্তু অন্যেরটা কেউ পড়তে চায় না।গবেষকেরা বলেন কবিরা শব্দ সৃষ্টি করেন। কিন্তু আমি বলি কবিরা শব্দকে পঁচিয়েও দেন।এই ফেসবুকের কবিদের কারণেই সুন্দর শব্দ তার প্রকৃত সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে!দারুণ, চমৎকার শব্দ তার চমৎকারকারিত্ব কব্বর দিয়েছে!সবাই শুধু না পড়েই লেখার ঢালাওভাবে প্রশংসাই করে যায় কেউই সমালোচনা করে ভুলত্রুটিগুলোকে ধরিয়ে দেন না। আবার কেউ সমালোচনা করলেও তা আমরা হজম করতে পারি না।তাই এসব ফেসবুকে সাহিত্য চর্চা করে দুই পয়সারও কোনো উপকার নেই চিশতী ভাই।এই যে আমার এত সুন্দর একটি রম্য গল্প ফেসবুকে পোস্ট করলাম তা মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন হয়তো পড়বেন আর বাকিরা কপি পেস্ট করা সুন্দর,চমৎকার,অসাধারণ এসব মন্তব্যই করবেন দেইখেন!কে পড়ে আর কে না পড়ে মন্তব্য করে তা এসব মন্তব্য দেখেই বোঝা যায়।
এ গল্পটা সবার জন্য নয়। সত্যিকারের পাঠকদের জন্য।চিশতী ভাইয়ের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে উঠল। ফেসবুক প্রসঙ্গ তাই পাল্টালেন।
-তা ভাই সাব বই বের করছেন না কেন? আপনার তো আর টাকা পয়সার কমতি নেই।
-ভাই, আজকাল এসব কবিতার বই-টই পাঠক খায় না।আনকমন কিছু লিখতে হবে। নিষিদ্ধ জিনিস নিয়ে লিখতে হবে। কারণ নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আদম সন্তানের আগ্রহটা বেশি।
-যেমন? গভীর আগ্রহ নিয়ে চিশতী ভাই জিজ্ঞেস করলেন।
-যেমন ধরুন,মতিউর রহমান রেন্টু হাসু আপার কু-কর্ম নিয়ে বই লিখেছেন "আমার ফাঁসি চাই। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর ডালিম লিখেছেন-আমি মেজর ডালিম বলছি,যা দেখেছি,যা বুঝেছি,যা করেছি ইত্যাদি।কি দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এসব নিষিদ্ধ বই।
-উনারা হয়তো ঘটনাক্রমে ঐ সকল ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন তাই সেসব বাস্তব কাহিনী নিয়ে লিখতে পেরেছেন।আমি আপনি তা পারবো?তাহলে আমাদেরও তো আগে বিখ্যাত কাউকে না কাউকে খুন করে হাইলাইট হতে হবে।কাকে খুন করবেন বলেন?
-দারুণ আইডিয়া এসেছে চিশতী ভাই।আমরা আরও বড় কিছু ঘটনা ঘটায়ে তারপর বই লিখবো।গোটা বিশ্বটাকে যারা অশান্ত করে রেখেছেন সেই আমেরিকা,ইসরাইলের প্রেসিডেন্টকে দু'জন খুন করে আসি চলেন।
মরলেও শহীদের মর্যাদা পাওয়া যাবে।একজন আমেরিকা আর একজন চলে যাবো ইসরাইলে। আমার পাসপোর্ট রেডি আছে। আপনার কি পাসপোর্ট করা আছে? চিন্তা করবেন না।যত টাকা লাগে সব আমি বহন করব।কী বলেন চিশতী ভাই?
চিশতী ভাইয়ের মুখে কোনো সাড়া শব্দ নাই। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। হয়তোবা মনে মনে ভাবছেন আমি কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষই না। এতক্ষণ তিনি এক তাড়ছেঁড়া পাগলের সাথে বেহুদাই আলাপচারিতা করছিলেন!