সেই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ছিল আমার পাণ্ডুলিপির নিখোঁজ হওয়া অথচ তখনও আমি এতটাই অপদার্থ ছিলাম যে, হারিয়ে যাওয়ার কষ্টটাও অনুধাবন করতে পারিনি, উল্টো সবকিছু ভুলে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম আরেক প্রেমিকার সাথে। এবারের প্রেমিকাটিও কিন্তু কবিতার খুড়তুতো বোন "গান"। হ্যাঁ আমি গানের পথে পা বাড়িয়ে ছিলাম কবিতার শরীরের কথা ভুলে। এভাবে সুরের সোনার পাহাড়ে উঠতে গিয়ে যখন পা পিছলে পড়লাম খাদে তখন শত্রুপক্ষ মানে কবিতার সৈনিকেরা আমাকে নাৎসি ভেবে ধরে নিয়ে গেলো কবিতার মিত্র শক্তিদের আখড়ায়। সেখানে দশ দশটি বছর কাব্যিক গুয়ান্তানামোতে থেকে লাঠি পেটা খেয়ে আবার যখন বুঝতে শিখলাম আমি কবি; তাই ছুটে গেলাম হোসে মাহতির সুর ও কবিতার বাগানে, গুয়ান্তানামারা ... আহ সে সুর এবং কথা আজও স্পষ্ট বেজে যায়, আমি বার বার শুনি কবি, তুমি শুনছো কবি!
বব ডিল্যানের অনিন্দ্য-বেহায়া-সুন্দরী কবিতাগুলো যখন আমার কাছে আসলো কালো রঙের মারাত্মক যৌনাত্বক ক্ষীণ বিকিনি পরে তখন অন্য প্রান্তে পল সাইমনের সুশীল সমাজের ভদ্র কবিতাগুলো আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ভিক্টোরিয়ান যুগের হাঁটু অবধি গাউন পরিহিতা নান হিসেবে। আমি ভাবতে লাগলাম পাহাড়ি পথে, আমি কোন পথে যাবো! মনে রাখতে হবে ততদিনে আমি মারিয়ে এসেছিলাম জন ডেনভারের সদ্য হাইস্কুল পাশ করা শান্ত রোমাঞ্চকর প্রেমিকের মেঠো পথের গান... almost heaven West Virginia blue ridge mountain Shenandoah river... তুমিও তো জানো কবি গানটির কথা কতোটাই নিরিহ গোছের, যদি একবার তুলনা করে দেখি বব ডিল্যানের কটাক্ষ ও বিদ্রুপাত্তক কাবিক্যতার সাথে। সোজাসাপটা তুলনা হতে পারে ষাট দশকের অড্রে-হেপবার্ন আর এযুগের পর্ণ তারকা সানি-লিওনির সাথে!
ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় একদিন দ্যাখা হল দাবা বোর্ডের এক পুরনো বন্ধুর সাথে, হাতে ছিল তার একটা অনুবাদ গ্রন্থ, বইয়ের নাম ‘দি প্রফেট’ আর কবির নাম কাহলিল জিব্রান। বইটি পড়ে আমি এতটাই অভিভূত হলাম যে, তার পরের তিনটি বছর আমি আর কোন সুন্দরি কবিতার গায়ে হাত দিই নি, কদাচিৎ রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দের শঙ্খচিলদের বাদে। অসাধারণ তার লেখনী, পরিমিত বোধ। জিব্রানের কবিতার জগতকে অনুধাবন করতে গিয়ে আমি বহুবার ক্লান্ত দেহে বসেছিলাম সিডার গাছের ছায়ায়, বৈরুতের মেরোনাইট খ্রিস্টানদের আশ্রয়স্থলে, সিমেট্রিতে স্বপ্নের ভেতর। আর তার আঁকা স্বর্গ তাড়ানো, পবিত্র নগ্ন মানব-মানবীদের চিত্র যেন গাঁজার ধোঁয়ার স্বপ্নিল স্বর্গীয় ধোঁয়া, যা বারে বারে তার পবিত্র দার্শনিক লাইনগুলির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে সাহাজ্য করে। কি আছে এখানে? অথবা কি নাই এখানে? আমি বার বার ভেবেছি, দেখেছি, ছুঁয়েছি অবধারিতভাবে ব্যাপ্টাইজ্ডও হয়েছি তার হাতে; কখনো কখনো মনে হয়েছে স্বয়ং "জনের" হাতেই ব্যাপ্টাইজ্ড হয়েছি প্যালেস্টাইনের পবিত্র কোনো জলধারায়!
বার বার মনে পড়ে জিব্রানের একটা কথা, "আমি তো এতো কিছু লিখতে চাইনি, শুধু একটি লাইন লিখতে চেয়েছিলাম!" বুঝতে পেরেছো কবি, গ্রেটনেস অফ সিম্পলিসিটি কাকে বলে!
২৪শে জুন