[অসাধ্য সাধন]

রাত থাকতেই জেগে ওঠে ফিরতে হবে বাড়ি
সঙ্গী টাকা বারোশো আর নড়বড়ে এক গাড়ি।
গাড়ি মানে সাইকেল এক ভাঙা প্যাডেলটাও
তবুও মনে জেদ সম্বল ফিরবে নিজের গাঁও।
ফিরতে হবে সাতশো মাইল পরোয়া নেই তাতে
বাহন যদি সহায় থাকে ফিরবেই তিন রাতে।
পথের ক্লান্তি সঙ্গী জানা বিপদ বড়ই আছে
সেসব চিন্তা ঠাঁই দেয়না নিজের মনের কাছে।
চিন্তা এখন একটাই তার ফের আটকায় পাছে
ফিরতে হবে ঘরেতে যে মেয়ে বউয়ের কাছে।
এক এক করে পার হয়েছে একুশটা দিন তার
মন মানে না আর একটুও ফেরার যে দরকার।
দূর গাঁয়েতেই রয়েছে পড়ে দিন আনা পরিবার
মা-মেয়েতে বন্দী সেথায় মন পড়ে আছে তার।
কেমন করে কাটছে তাদের এই এতদিন ধরে
চিন্তাতে আর মন মানেনা চাই যে ফেরা ঘরে।
ফেরার জেদে এগিয়ে চলে নেইযে তার বিরাম
পৌঁছে দেশে থামবে তবে তারপরেতে আরাম।
জোরে লাগায় প্যাডেলে চাপ বাড়ে চলার গতি
গ্রামের থেকে পেরিয়ে শহর চলার নাই বিরতি।
এমনি করেই দিন পেরিয়ে রাতের শেষ প্রহরে
পথের ধারেই এলিয়ে দেহ ঘুমায় ক্ষণের তরে।
পথের মানুষ ভালোবাসায় ভরিয়ে দেয় তারে
উৎসাহ দেয় সাহস যোগায় যেমনটা যে পারে।
চলতে চলতে দুদিন পরেই বাহন রাখে দেহ
আঁধার ঢাকে নয়ন তারায় হার মানেনা সেও।
এগিয়ে আসে গ্রামের মানুষ কাহিনি শুনে তার
সাইকেল দেয় জোগাড় করে রাহা-খরচ আর।
মনের জোরে প্যাডেলেতে আবারও দেয় চাপ
মনেতে এই ভালোবাসার জমিয়ে রাখে ছাপ।
অভাবনীয় ভালোবাসায় মনখানা যায় ভরে
তরতর করে এগিয়ে চলে ঘরের ছেলে ঘরে।
তিন রাত্তির পেরিয়ে ঢোকে গাঁয়ের সীমানায়
ক্লান্তি ভুলে বাড়ায় গতি সময় যে বয়ে যায়।
চেনা পথের বাঁক পেরিয়ে মাটির দাওয়া 'পরে
পরিবারকে দেখতে পেয়েই কুয়াশা যায় সরে।
প্রশান্তি ছায় মনের কোণে খুশিতে নাচে মন
মনের জোরে করে ফেলে এক অসাধ্য সাধন।

[দুবাই, ১৭ই এপ্রিল ২০২০]
©চিন্ময়
[এক সত্য কাহিনি অবলম্বনে রচিত]