'এই খোকা','না না খোকা'
কিছু বলা যাবে না;
গলাটি চড়ালে,ব্যস
অমনি সে খাবে না।

ভুলেও বা কভু যদি
মামনিটা ধমকায়;
থাকবেনা ঘরে আর
সিধে খোকা রাস্তায়।

অভিমানে,ভেজা চোখে
আনমনে পথে ঘুরে;
ভাবে খোকা হারাবে সে
মা'র থেকে বহু দুরে।

এমনি ছিলো সে খোকা
অদ্ভুত পাগলাটে;
মায়ের আঁচলে বেড়ে
কিছুটা বোকাও বটে।

অভিমান আবদার
সবি তার মা'র কাছে;
কানেকানে ফিসফিস
বাবা সব শুনে পাছে।

দুষ্টুমি দেখে তার
বাবা কভু রাগলে;
আঁচলে জড়িয়ে তারে
মা'ই নিতো আগলে।

ডরাতো যমের মতো
রাশভারী বাবারে;
ঘুরাতো সে ছড়ি একা
আর বাকি সবারে।

ঘুম পাড়ানিয়া গানে
মা'ই ঘুম পাড়াতো;
অস্থির গোটা পাড়া
সেটুকুনি জুড়াতো।

যন্ত্রনা শেষ নেই;
মা'র নেই শান্তি;
মা'কে জ্বালানোতে তার
নেই কোন ক্লান্তি।

সারাটা জীবন খোকা
রয়ে গেলো এমনি;
হবেইনা কেন বলো
ঢাল ছিলো মামনি।

কি ছোট,কি বড়বেলা
খোকা র'লো খোকাই;
হেসে কয় মা আহারে
রয়ে গেলি বোকাই।

একগ্লাস পানিও সে
ঢেলে খেতে জানেনা;
পৃথিবী একাই তার
কাউরে সে মানেনা।

খেলাধুলো রাজনীতি
রংবাজি মারামারি;
কোনটি করেনি খোকা
হামেশাই বাড়াবাড়ি।

ঝামেলা পাকানো তার
কাজ ছিলো নিত্য;
খোকার আর চিন্তে কি
মা'যে তার ভৃত্য!

তোমরা শুনেছ স্রেফ
মা'য়ে আছে জাদু;
আদতে জানতে যদি
শুনে ক'তে সাধু।

খোকার জেগেছে সাধ
কভু কিছু খেতে;
ঘরে ফিরে দেখে রেডি
সাজানো তা ট্রে'তে!!

পলিটিক্স করে কভু
খোকা গেলো জেলে;
সাতদিন লাগে প্রায়
বের হতে বেল-এ।

বাবা যদি জানে 'ফাঁসি'
খোকা সেই ডরে;
'দোস্তের বোনবিয়ে'
চিঠি দিলো ঘরে।

জামিনে বেড়িয়ে ফেরে
বীরর্দপে ঘরেতে;
চেহারা দেখে মা কয়
তুই ছিলি জেলেতে!!

কি আজব কও দিনি
কি আছে সে মা'তে!
খোকাও পারেনি মা'রে
কিছুই লুকাতে।

কিঞ্চিত ডরও ছিলো
করে যত কান্ড;
জানে মুখ দেখেই মা
ফুঁড়ে দেবে ভান্ড।

টেলিপ্যাথি,সিক্সথসেন্স
কি বা থার্ড আই;
আছে জেনো ঠিকঠিক
জানে সে-ই মা'ই।

এভাবেই চলছিলো
খোকা ছিলো সুখে;
হঠাৎ এক ঝড়ে সব
উড়ে এক ফুঁকে।

বাবা নেই সন্দেশে
পা হারালো মাটি;
জীবনের বিভীষিকা
বুঝলো খোকাটি।

পাথুরে পাহাড় যেনো
বুকে হলো জড়ো;
এক নিমিষেই খোকা
হয়ে গেলো বড়।

উপহাস,নাকি খেল!
বিধি কারে বলে?
ঠিক ক'টা দিন পরে
মা'ও গেলো চলে।

শেষ সয্যাটি নিয়ে
বাবার সে শোকে;
খোকারে মা ছেড়ে গেলো
রোগে ধুকে ধুকে।

খাটিয়ায় শোয়া মা'র
নিথর সে মুখ;
কি করে সইবে খোকা
ফাটে কচি বুক।

যেই বুকে মাথা গুজে
সদা প্রাণ জুড়ালো;
সেই মা'রে কি করে সে
কবরেতে শোয়ালো!!

খোকার কি দশা তব
করেছ কি কল্প?
এভাবেই শুরু তার
আঁধারের গল্প।

জীবনতো থেমে নেই
চলে তার গতিতে;
খোকা শুধু রয়ে যায়
মধূর সে অতীতে।

স্বার্থের এ পৃথিবীতে
নয় কেউ কারো;
যত দাও,তত চাই
আরো দাও আরো।

যে যারটা বুঝে নিয়ে
ছেড়ে গেছে যত প্রিয়;
খোকাই হারিয়ে সব
বোলহীন সদা ম্রিয়।

মা যেনো বলে উঠে
খোকা ওরে খোকা;
হবিনে মানুষ তুই
রয়ে গেলি বোকা।

যে হারায়,সে-ই বুঝে
মায়ের কি মমতা;
অপূর্ব নেয়ামত
কি অসীম ক্ষমতা!

পানি ঢেলে খেত না যে
আজ টানে বোঝা;
মনের গহীনে চলে
আজো মা'রে খোঁজা।

আজ ফের সেই খোকা
আনমনে,ভেজা চোখে;
একা একা পথেপথে
হেঁটে চলে এক রোখে।

উদভ্রান্তের মতো
কি আপন বুঝে;
পথিক সে বোকা খোকা
কারে যেনো খুঁজে!!

মা'রে ও মাগো মোর
কোথা গেলে চলে;
পারছিনা আমি আর
বুক যায় জ্বলে।

খোকা আজো প্রতি রাতে
খুঁজে মা'র ওম;
নেই পাড়ানিয়া গান
আসেনাকো ঘুম।

চিৎকারে 'মা' 'মা' বলে
বুক ফাটা সাধে;
মায়ের সে প্রিয় খোকা
প্রায় প্রায় কাঁদে।

বীরপুরুষ উপাখ্যান
এখানেই শেষ;
আধো মরা,আধো প্রাণে
আছে খোকা বেশ।

তোমরা চেনো না যারা
বলি এই ফাঁকে;
আজকাল প্রায় রাতে
মা'যে তারে ডাকে।

মা'হীন ধরায় আজ
ছয় সাল পুরালো;
খোকাও বুঝেছে ঠিকি
তারো প্রায় ফুরালো।