উনার চোখে তাকালে এখন বিষণ্ণতা দেখি
ঘোলা চোখে জলে টইটম্বুর- সে জল গড়ায় না!
ঝাপসা চোখের ভিতর তাকিয়ে উনার অতীত দেখি
ঐ যে অল্পবয়সী তরুণী, পুরোদস্তুর গৃহীনি
সকাল থেকে সন্ধ্যা, সংসারের হাল ধরা ক্ষণ
কোমরে আঁচল বেঁধে নিত্য কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়া
আহা কি কষ্ট ক্ষণগুলো সেই, উনার মুখেই শোনা।
পাটায় পিষা মশলায় রান্না, ঢেঁকিতে ধান ভানা
মাটির ঘর লেপা, লাকড়ি যোগাড়ের দাও হাতে
কিংবা কলসে পুকুরের জল থৈ থৈ শ্রমের প্রহর।
উনি বলেন, প্রসব বেদনায় দুটো দিন ছটফট
ব্যথা পেটে রান্না চুলায়, ব্যথায় কুঁকড়ে যেতে যেতে
শুধু অস্ফুট কষ্ট ধ্বনি কাউকে বুঝতে না দিয়ে।
একে একে আট টি সন্তান এসেছে এই ধরায়
তাও তো কেটে গেছে প্রহর, থেমে থাকেনি
হাসি দুঃখ কষ্টে থেমে যায় নি জীবন, চলে গেছে।
বিষন্ন চোখে তাকিয়ে উনি বলেন দুঃখী গলায়,
এখন কেনো তবে সময় কাটে না, যেন সব স্থির
পার হয় না এক একটা পল, শুয়ে বসে আর কতো।
উফ, কি যে কষ্ট আমার বুকের ভিতর তুলে সুরাসুর
কি হবে এই দুনিয়ার রঙ্গ তামাশায় জীবন ডুবিয়ে
মেয়ে বেলার অপেক্ষা, বড় হব... একদিন
স্বপ্ন হবে পূরণ, চাকরী করব, সংসার হবে,
ভালবাসা হবে প্রেম হবে, প্রজাপতির ডানায় উড়ব
পাখি হব স্বাধীন নীলের বুকে....
সময় বয়ে যায়, কালের ডহরে হারায় স্বপ্ন
একে একে আশা পূর্ণতা পায় আবার পায় না,
অপেক্ষার শেষ এই যে সামনে, শুধু অপেক্ষা
চোখে বিরানভূমি, মরু ধুঁধু.... মরীচিকা সুখ।
কি ভয়ংকর আহ সেই অপেক্ষা, বুকে ব্যথার মোচড় ফের
গলা টিপে ধরবে জম, নিঃশ্বাস যাবে থেমে, নিথর দেহ
সব শেষ...... অন্তহীন নিদ্রায় শায়িত, অন্ধকার গোরে;??
উনার চোখের আয়নায় আমি আমাকেই দেখছি এখন
ক্ষমা করে দিয়ো প্রভু জানা অজানা সকল পাপ।
(১৫/৪/২০১৭)
শাশুড়ি তখন জীবিত ছিলেন। ২০১৯ এ চলে যান পরপারে। আল্লাহ উনাকে জান্নাতে ঠাঁই দিন।
"রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা"