মধুমতী
চারণকবি বৈদ্যনাথ
...............................................

মধুমতী কিষানবধূ সহজ দেহের ভাঁজ,
মেঠো কাদায় মধুমতীর ধান রোপনের কাজ।
আলগা-খোঁপায় লালকরবী প্রেম-সোহাগের দাম
মধুমতীর মনের মানুষ - বংশীবদন নাম।
লাঙল ডগায় লক্ষ্মী তোলে, সোনাধানের শিষ
মধুমতীর সঙ্গে কথা রাত্তিরে ফিস ফিস।
ঠোঁটের রেখায় চোখের পাতায় মধুমতীর লাজ
মধুমতী কিষানবধূ সহজ দেহের ভাঁজ।
আঁকা বাঁকা নকশা আঁকা গলায় হাঁসুলি
দুই কানে দুই দোলন-চাঁপা দুই হাতে রুলি।
যখন পাকে সোনার ফসল খামার ভরা ধান,
মধুমতী কাস্তে হাতে আহ্লাদে আটখান।
ঠোঁট দুফালি হাসির ঢেউয়ে উজান ধারা বয়,
মান-অভিমান সবকিছুতেই মধুমতীর জয়।
মধুমতীর ন-হাত শাড়ি, টিয়ে রঙের সাজ
মধুমতী কিষানবধু, সহজ দেহের ভাঁজ।

মধুমতী কিষানবধূ মুখশ্ৰী তার স্নান,
মধুমতীর শূন্য খামার নেইকো সোনার ধান
বর্গিতে আর বুলবুলিতে লোপাট করেছে
মধুমতীর মনের মানুষ - ঝান্ডা ধরেছে।
সোল জমিনের সবুজ মাটি -কঙ্কাবতীর চর
লড়াই করে দু-দিন ধরে মধুমতীর বর।
বাঁশিতে নেই রাখালি সুর বন্ধ জারি গান
মধুমতীর শূন্য খামার - নেইকো সোনার ধান।
মধুমতীর মনের মানুষ কোঁকড়ানো চুল তার
কালো কারের পদক গলায়, দেখতে চমৎকার,
ভাঙা ঘরের কপাট ফাঁকে মধুবর্তীর মন
মনের মানুষ ফিরবে কখন - ভাবছে সারাক্ষণ।
এলিয়ে পড়া আলগা খোঁপা ভ্রমর কালো চুল
লুটিয়ে পড়ে ভূঁই -জমিনে প্রেম-সোহাগের ফুল।
সাঝ-গোধুলি রক্তাভ মেঘ, টুকটুকে লাল ফাগ
মধুমতীর মেঘলা মনে লাগছে না তার দাগ।
ভোমরা কালো চোখ দু-খানি ব্যাকুল প্রতীক্ষায়
সবজালি ঘাস, সবুজ আকাশ-পথের পানে চায়।
এলিয়ে পড়া চুলের গোছায় হঠাৎ খুশির ঝড়
লড়াই করে আসছে ফিরে মধুমতীর বর।
ঠোঁট দু-ফালি হাসির ঢেউয়ে উজান ধারা বয়
মান অভিমান সবকিছুতেই মধুমতীর জয়।
বাঁশিতে আজ রাখালি সুর বাতাস গাহে গান
মধুমতীর শূন্য খামার -ভরবে সোনার ধান ॥