"কবিতাকে ভালোবেসে"
©চারণকবি বৈদ্যনাথ
............................................................
কবিতাকে ভালোবেসে আমি তো আউল হয়ে গেছি
জতুগৃহে পুড়ি নাই - দীর্ঘকাল তাই তো ফেরার
বৃহন্নলা বেশ ছেড়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে যদিও এসেছি
যুদ্ধের প্রবৃত্তি নেই আর ।

ভালোবাসা কাকে বলে, কাকে বলে প্রেমের মহিমা
জ্যামিতির রেখা টেনে আঁকা যায় নাকি তার সীমা !
বুকের বাগান জুড়ে অহরহ যার খেলা চলে।
গীতিকাব্য লেখা হয় যার সেই চোখের কাজলে।
যার জুন্যে হয়ে গেছি বারংবার বাউন্ডুলে কবি
হৃদয়ের ফ্রেমে আঁটা আহা সেই সহেলীর ছবি
তাকে নিয়ে ঘর করতে কেনা করে সাধ।
এটা কি আমার অপরাধ !

ছন্দের নূপুর পায়ে ডানা নেড়ে খেলা করি।
আহ্লাদে আটখান।
আমি যেন ঠিক সেই জীবনানন্দের বুনোহাঁস
কবিতাকে ভালোবেসে ধুলো মাটি গায়ে মাখি
এরই নাম দারিদ্র বিলাস ।
কবিতা সোহাগী মেয়ে বড়ো মিষ্টি মুখ
আনন্দেতে ছলকে পড়া বুক
একপিঠ মেঘ কুন্তল।
কবিতাকে জন্ম দেয় মিথিলার সেই রাজা।
জনকের হাতের লাঙল ।

শব্দের বাগান থেকে কৌশলে চয়ন করা
শব্দ তুলে মালা গেঁথে।
দরোজায় উঁকি দিচ্ছে কলকেপেড়ে শাড়ি
'জগতে আনন্দ যজ্ঞে' কী ভীষণ স্পিডে ছুটছে
কবিতার গাড়ি ।
অতএব আমি তাকে বিলক্ষণ চিনি
এ জীবনে কবিতার কাছে আমি বড় বেশি ঋণী ।
কবিতাকে ফ্রক দেবো, চুড়ি দেবো, কাঁচপোকার টিপ দেবো,
প্রজাপতি-সেফটিপিন, ম্যাক্সি কিংবা দেবো চুড়িদার
আদুরে কন্যার মতো কবিতা আমার ।

কখনো বিয়ের বউ, ভালোবেসে পরিয়েছি
বিষ্ণুপুরী তাঁতিদের হাতে বোনা বালুচরি শাড়ি
আদি লোকপল্লী কিংবা শালমহুয়ার গায়ে
বানিয়েছি কবিতার বাড়ি
এভাবেই কবিতাকে করেছি আদর,
ভূ-স্বর্গ কাশ্মীরে গেছি জাতীয় পতাকা হাতে,
এবং ফেরার পথে।
কবিতার জন্যে আমি কিনে আনছি শীতের চাদর ।

কবিতা কখন ওড়ে মুক্ত বিহঙ্গ যেন
নীল নীল আকাশের গায়,
কবিতা, মটিতে নেমে আয় ।
জনম দুখিনী মাগো, শুকনো স্তন মুখে গুঁজে দিয়ে
কোলে নিয়ে দুধের বাছাকে,
পালাবদলের গল্প আবার শোনাও মাগো,
এবং মাভৈঃ দাও ভেঙে ফেলতে শোষণ খাঁচাকে ।

কবিতা হৃদয়ময়ী, তাকে করো হৃদয়ে যতন।
সে যে এক অন্নময়ী শস্যময়ী স্নেহময়ী মায়ের মতন।
অবশ্যই মা।
কবিতা রাক্ষুসী তুই অ-কবি, না-কবি যত।
কবিতার শত্রুদের ।

মুন্ডুগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খা ।
বিশুদ্ধ কবিতা বলতে আঙ্গিকসর্বস্ব নয়,
অন্তরমথিত প্রেম জানি
কবিতা আমার কাছে জগৎজননী-মহারানি ॥