সেদিন তখন সন্ধে
শহরে সদ্য লক ডাউন ঘোষণা হয়েছে
নাহলে ভাইরাস দখল নেবে মানুষের ফুসফুস অবশেষে
মৃত্যুর করাল কালো স্রোতকে চিরকাল ভয়ই পেয়েছে প্রতিটি মানুষ!

তোমাকেও পেলাম না গিয়ে
কারণ বাড়িতে শুধু বৃদ্ধ বাবা আর মা
এদিকে সংসারে লাগে যে সমস্ত জিনিসপাতি নিত্য দরকারে
সেই সন্ধ্যায় তোমার তা না আনলেই নয়!
কী অবলীলায় এরপর তুমি বলেছিলে ফোন ধরে,
‘ আর হয়তো আমাদের দেখাই হবে না!'
এরকম রসিকতা আর ভুলেও কোরো না লক্ষ্মীটি
স্বপ্নেও যেন তা আর সত্যি না হয়!


এখন শহর লক ডাউন
রোজ কথা বলি তোমার সাথে
ফোনের এপারে তোমার মন ভালো করা গলা ভেসে এলেই
আমার কাছে নয়ন শোভিত হয় খাঁ খাঁ রাজপথ,
পুকুরের স্বচ্ছ জলে আকাশ লীন হয় তার বেলোয়ারি নীল রঙ নিয়ে
নির্জন চৈত্র দুপুরে গাছের নতুন পাতায় সূর্যের আলো চিকমিক করলে
কত নাম-না-জানা পাখি ডালে উড়ে এসে বসে।
কী মধুর তাদের কূজন, যেন এতোদিনের কোনো রুদ্ধসঙ্গীত
আজ সর্বসাধারণের সামনে পরিবেশিত হচ্ছে।

অনেকটা পথ উজিয়ে, ভর সন্ধেবেলায় যখন স্ট্রিটল্যাম্পের আলোয় ফাঁকা রাস্তাঘাটে শুধু ভাইরাস বাঁচে, জোর করে তোমার সাথে দেখা করতে গেলে হয়তো এখনকার মতো রাতের দু:স্বপ্নগুলোর আনাগোনা বন্ধ করতে পারতাম, কিন্তু তারপর দু:স্বপ্নের ঘুম ভেঙে ধড়মড় করে উঠে বসলেই তোমার ঘুমিয়ে থাকা নিশ্চিন্ত মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতো, আর মনে পড়ে যেত তুমি বলেছিলে, ‘আর হয়তো আমাদের দেখাই হবেনা!'
তাই লকডাউন ভাঙা ঠিক হবেনা বলে নয় কিন্তু
পাছে তোমার রসিকতা সত্যি হয়ে যায়,
এই জাঁকিয়ে বসা আশঙ্কা থেকেই এ ক'দিন তোমার কাছে যাই না আর!

তার চেয়ে বরং এসো,
সুনীল যেমন নীরাকে লিখেছিলেন ‘এ কবিতা মধ্যরাতে তোমার নিভৃত মুখ লক্ষ্য করে,’
ভালোয় ভালোয় এ ক'টা দিন আমরা কাটিয়ে দিই
ফোনের ওপারে থেকে তুমি আর এপারেতে আমি,
আর ভালোবাসা বয়ে নিয়ে যাক তোমার কাছে আমার কবিতারা অক্ষরে অক্ষরে।
সুনীলবাবুও বলেছিলেন নীরাকে, ‘তুমি জানতে পারবে না –তোমার সম্পূর্ণ শরীরে মিশে আছে আমার একটি অতি ব্যক্তিগত কবিতার প্রতিটি শব্দের আত্মা।’