২০০৮ সাল ৫ জানুয়ারী বার শনি
বাবাকে ফোন দিলাম ঠিক সকাল এগারটায়। বাবা চোখে কম দেখতেন কিন্তু আওয়াজে খুব দ্রুত বুঝে নিতেন। তার মায়া মাখা প্রথম কথা, বাজান ক্যামন আছ?
ভাল, আব্বা আজ আমার জন্মদিন।
এটা কেউ জানেনা আর আমি কাউকে আমার জন্মদিনের কথা বলিওনা। বিশেষ মানুষটাকে(আব্বা) আমার জন্মদিনের কথা বলে আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেতাম। খুশি হয়ে বলতাম আব্বা এবার কিন্তু মিলে গেছে জানুয়ারী মাস, ৫ তারিখ, শনিবার। কোন কোন বছর জানুয়ারী ৫ মেলে তো শনিবার মেলেনা, শনিবার মেলে তো জানুয়ারী ৫ মেলেনা। ২০০২ সালে মিলেছিল। খুশি হয়ে বলেছিলাম আব্বা মিলে গেছে। আমি ৪র্থ সন্তান তাই হয়ত বাবার অত মনে থাকত না কিন্তু আমার বড় বোনের এবং ছোটভায়ের জন্মদিনের কথা বাবা কখনও ভুলতেন না। সে বিষয়ে তার কিছু একটা প্রস্তুতিও থাকত। তবু আমি আমাকেই সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান মনে করি। আমার জন্মদিনটা আব্বা মিলিয়ে দিয়েছিলেন। কঠিন সমীকরণ। “বাবা, জীবন এমনি, কোথাও মেলাতে পারবে কোথাও পারবে না। সুখি হওয়াটা খুব কঠিন কিছু নয় বাবা, তবে সৎ হওয়াটা বেশি জরুরী। আমি অন্তর থেকে তোর জন্য দোয়া করলাম যদিও সন্তানদের জন্য বাবা-মাকে মুখ ফুটে দোয়া করতে হয়না, তবু তোর জন্য তুই কোথাও আটকাবি না, আমার মনের জোরই তোর মনে রইল।“
বাবাকে বলছি, আব্বা আমি অতটাই সুখি যতটা সৎ থেকেছি, যতটা সার্বিক হতে চেয়েছি। আমি ভাগ্যবান, আরো কিছু ভাল উদ্দ্যোগ নিয়ে বিজয়ের দিনগুনতে চলেছি। আর আজ আপনার কথা খুব মনে পড়ছে, বোধকরি এখানে অক্সিজেনের বড় অভাব। হয়ত কবরগুলো শীত-গ্রীষ্মে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অক্সিজেনে ঠাঁসা। ইচ্ছে করছে বিস্তর মাঠ থেকে বিস্তৃর্ণ আকাশের দিকে চেয়ে চিৎকার করে বলি “আব্বা আমি কেমন আছি বলেন তো?“