(বুড়ি আর ছোটি দুই বোন। বাবা আদর করে বড় জনকে বুড়ি আর ছোট জনকে ছোটি বলে ডাকেন। সে নাম দুটিই কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে।)
------------

বুড়ি ও ছোটি দুই বোন, বয়সের তফাৎ বেশি নয়
বুড়ি যখন দেড় বছর, তখন ছোটির জন্ম হয়।
হঠাৎ যেদিন বুড়ি দেখে, ছোটি শুয়ে তার পাশে
ভেবেছিল নতুন পুতুল, তাকিয়ে দেখে হাসে।

ছোট্ট বুড়ি বোঝেনা কিছু, পুতুল কি দুধ খায়?
দুধের ফিডার কেড়ে নিয়ে, তার পিছনে লুকায়।
মা-বাবা আদরে বলে, ছোটিকে খেতে দাও
বুড়ি তখনও কথা পারেনা, ফেরত দিয়ে বলে নাও।

জামা জুতা কিনলে কিছু, লুকিয়ে রাখে বুড়ি
নিজে খুব আদর করে, অন্যের আদরে আড়ি।
ছোটি যখন কান্না করে, বুড়ি অনেক কষ্ট পায়
হাত বুলায় বুকে গালে, ছোটির কান্না থেমে যায়।

জন্ম থেকেই একটি রোগ, ছিল ছোটির বুকে
বুড়ি বোধহয় বুঝতে পারে, তার মলিন মুখ দেখে।
চিকিৎসায় রোগটি সারে, পরিস্ফুট হয় ছোটির মুখ
বুড়ি ও ছোটি মেতে থাকে, যেন একে অন্যের সুখ।

ছোটির যখন দেড় বছর, বুড়ির বয়স তখন তিন
চিকুনগুনিয়ায় ঝাপটে ধরে, পরিবারে বড় দুর্দিন।
সবার অসুখ ভালো হয়, বুড়ি আর ছোটিও সুস্থ
হঠাৎ ছোটির শ্বাসকষ্ট হলে, হয়ে যায় সবাই ব্যস্ত।

ছোটিকে নিয়ে হাসপাতালে, আই.সি.ইউ দরকার
আতকে উঠে মা-বাবার মন, বলে যখন ডাক্তার।
ছোটি যখন শুয়ে আছে, নিবিড় পর্যবেক্ষণ রুমে
মা-বাবা তখনও বেশ জানে, সোনামণি আছে ঘুমে।

বাবা দাঁড়িয়ে ছোটির পাশে, ছোট্ট মায়ার মুখ
তাকিয়ে থেকে ফুপিয়ে কাঁদে, কষ্ট ভরা বুক।
ভাবিস না তুই সোনামণি, বাবা আছে তোর পাশে
যা প্রয়োজন করবে বাবা, আছিস যে তুই নিঃশ্বাসে।

হাসপাতালে অস্থির সবাই, ঝরছে চোখের পানি
চিৎকার দিয়ে কাছে আসে, ছোটির এক খালামণি।
কান্নার চোখে তাকিয়ে বলে, চলেন এবার সবাই
উপরওয়ালার ফয়সালাতে, ছোটি যে আর নাই।

বাবার মনে অনুভূতি নাই, শূন্য হয়েছে বুক
কোথায় গেল সোনা জাদু, কোথায় পাবে সে মুখ!
ময়না পাখির তুলার দেহ, কোথায় রাখিবে এখন!
ছোটি মা বলে ডাকবে কাকে, মন পোড়াবে যখন!

বুড়ি কেমন স্তব্ধ যেন, এদিক ওদিক তাকায়
এ ঘর ও ঘর সব খোঁজে, ছোটিকে খোঁজে না পায়।
বিছানার দিকে তাকিয়ে বুড়ি, কি সব যেন ভাবে
একা কোথায় চলে গেল ছোটি, আসবে আবার কবে?

–--------------------------
লেখা- ৩০/০৪/২০১৭ ইং
ছোটির প্রয়াণ- ২৮/০৪/২০১৭ ইং, ভোর ৩.৪৮ মিনিট