||বাসর : রাজপথের শেষে||

শেষ ল্যাম্পপোস্টটার ধারে,
যেখানে থেমেছে রাজপথ,
সেখানে কেউ দাঁড়িয়ে আছে
আমার অপেক্ষায়।
আমাকে ঘরে ফেরাতে,
বহুদিনের বহু প্রচেষ্টার পর
আজ তার আশা
পূর্ণ হতে যাচ্ছে।
মিছিলের অগ্রভাগে থাকা
আমার বুক ভেদ করে
যাওয়া একরাশ তপ্ত
বুলেটের ছিদ্র নিয়ে আমার
অসাড় দেহ।
আঁচলে চোখ মুছে,
আমার গুলিখাওয়া প্রাণহীন
দেহটাই তার

বাসরের উপহার।


|| মানসপট ||


অভিমান করে থাকিসনা।
তুই কি ভেবেছিস?
আমি তোকে ভুলে যাব?

এত অভিমান কেন তোর?

তোর অমৃতরস মিশে গেছে
আমার রক্তে।

সে বহুকাল আগেই।

মানসপটে তোর ছবি এঁকে
জীবনপথে অবিরাম ছুটে চলি
গ্রাহামের ব্যাপনসুত্র মেনে
ইতস্ততঃ

এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে
বিশ্বজগতের।

সর্বক্ষণ তুই আমার
ভেতরেই আছিস

কংস।


|| ফিরে এসেছি ||


অনেকদিন পর পা রাখলাম
এই রাজপথে।
অনেক পরিবর্তিত সব
আজ।

এইতো সেদিন হাঁটছিলাম
এক বন্ধুকে নিয়ে,
গলাগলি করে।

তখন অনেক হানাহানি
চলছিল চারপাশে।
এখনও চলছে।

চলতেই থাকবে।
আবহমানকাল.…
চলবে....

সেই বন্ধুটিও হারিয়ে গেল
গোলমালে পড়ে।
তারপর থেকে
আমি একা।

একা...

শুধুই একা।

বেশ কিছুদিন এপথে আসিনি।
বন্ধুর খোঁজে আজ এলাম।

পাইনি তাকে।
সাড়ে ছ' কোটি বছর আগে
হারিয়েছিলাম যাকে।

সময় কি খুব বেশি গত হয়েছে?

আমি ফিরে এসেছি সেই
ডায়নোসর বন্ধুটির খোঁজে।


|| গণিকার হাসি ||


রাতের আকাশে ভরা পূর্ণিমা চাঁদ,
দেখার ফুরসৎ নাই।
একটু একটু করে জীবন
বয়ে চলে যায়।

নিস্তব্ধ রাতের রাজপথ তার সঙ্গী,
খোলা আকাশের দিকে না চেয়ে
দৃষ্টি ঐ সামনের রাস্তায়।
কেউ নেই তবু
সময় যে বয়ে যায়।

তারপর ভাগ্যের বাতি খুলে গেলে
সে ঝোঁপের আড়ালে ব্যাস্ত,
নিজের সবটুকু স্বপ্ন বিক্রিতে।

মৈথুন শেষ।
সাথী চলে যায়।

হাতে কিছু নোট,
তাই নিয়ে বেঁচে থাকা,
কিংবা বেঁচে থাকার
আপ্রাণ চেষ্টা,

সে মাঝরাতের রাজপথের সাথী,
অধরকোণে সুক্ষ্মহাসির
গণিকা।


|| পিছুটানকে ছুটি ||


আজ কেউ আমার অপেক্ষায় নেই।

আমিও কারও অপেক্ষায় নেই।

পিছুটান নেই তাই
আজ আমি ভারমুক্ত।

হাসিমুখে পিছুটান
তোমায় দিলাম ছুটি।


|| মহাকালের পরিব্রাজক ||


লক্ষ বছরের সীমাহীন পথের পরিব্রাজক আমি,

অবিরাম হেঁটে চলেছি

সীমাহীন পথটার শেষ সীমানার উদ্দেশ্যে।

মহাকালের সুদীর্ঘ সেপথ,


আমাকে ক্রমাগত হাতছানি দিচ্ছে।


দূরে।

বহুদূরে

আমার গন্তব্য।

আমি হাঁটছি,
হাঁটছি,

শুধুই হাঁটছি।


অন্তহীন আমার এ

হেঁটে চলা।


|| সুখস্বপ্ন অথবা দুঃস্বপ্ন বিলাস ||


আমি স্বপ্ন দেখিনা এখন আর।

স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছি।

দুঃস্বপ্নের পাঁকে ক্রমাগত তলিয়ে যাচ্ছি,

তবুও স্বপ্ন দেখার অলীক আশায় মগ্ন থাকি।

হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকা দুঃস্বপ্নগুলোর দিকেই

আমার নিরন্তর হেঁটে যাওয়া।

সহস্র দুঃস্বপ্নের নিরাশার মাঝে

একটু সুখের স্বপ্ন দেখার আশায়।


|| ইচ্ছা ||


মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয়
বুকের ভেতরে জমে থাকা
বারুদের সলতেটায়
আগুন ধরিয়ে ভরা
পূর্ণিমার চাঁদটাকে ঝলসে দিতে,

ইচ্ছা হয়
মহাসাগরে নীল জলরাশিকে
বাষ্প করে উড়িয়ে দিতে।

ইচ্ছা হয়
আকাশটাকে ভেঙ্গে
টুকরা টুকরা করে ফেলি।

ইচ্ছা,
তুমি থাক আমার মনের মাঝেই।

সভ্যতা তোমাকে চায় না।


|| প্রস্তরীভূত ||


সভ্যতার হাতুড়িতে মাথা থেঁতলে
গেছে ঘাসফড়িংটার।

খসে যাওয়া লেজের সন্ধানে
গঙ্গাফড়িংয়ের ছুটোছুটি।

কান খাড়া করে
খরগোশ শোনে প্রজাপতির
শেষ ডানা ঝাপ্টানোর শব্দ।

ঝুলে
আছে
বাবুইয়ের
মৃতদেহ।

ঘাসফুলের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে
যাবে তুমি?

|| যখন ভাতঘুম ||

অযথা কাব্যিকতার পাতা ছুঁয়ে
বাতাসের ভেজা স্পর্শ হারায়
তপ্ত মধ্যদুপুরের আঁধারে।

স্থবির মহাকাল
ক্ষীণকায় নদীটার মত
শীর্ণ হয়ে রয়।

নীলাকাশের হাত ধরে
দাবদাহ ছুটে বেড়ায়
যুগান্তর,
শতাব্দী পেরিয়ে।

ভোরের কর্কশ নীরবতা ভাঙে
দাঁড়কাকের গানে।

অতঃপর
পড়ন্ত বিকেলে পানকৌড়ির ঝাঁক
বাড়ি ফেরাকালে সূর্যাকার লাল
টিপ পড়িয়ে যায় মেঘাচ্ছন্ন
আকাশে।

ভূমন্ডলের ঝড়ো বাতাসে
ঢেউ ভেঙে সাঁতার কাটে
নিযুত ধূলিকণা।


|| শিরোনামছাড়া-১ ||

মনে পড়ে
একদা আমিও প্রেমিক ছিলাম।
কোন এক অষ্টাদশী অথবা বিংশবতী প্রেমিকার।
এই যা!
ভুল হয়ে গেল। সেতো
কখনও ভালবাসেনি আমায়।

ঘাসফুলের স্পর্শকে ভেবে নিতাম
তার ঠোঁটের ছোঁয়া।

একদা প্রেমিক ছিলাম।
যখন প্রাগৈতিহাসিক যুগ।

||শিরোনামছাড়া-২ ||

চিনি কালপুরুষটাকে।
আঁধারমাঝে ফণীমনসার কাঁটায়
প্রাণস্পন্দন খুঁজে পেয়ে
ঘাসফুলে শরীর মিশিয়েছি....