(উৎসর্গ প্রেম ও দ্রোহের প্রিয়কবি প্রয়াত হেলাল হাফিজ (১৯৪৮-২০২৪) -কে )

প্রিয় হেলেন-
কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
আগুনের হোলি খেলায়
আর মেতে উঠবোনা,
করবোনা আর অগ্ন্যুৎসব

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
অচল প্রেমের পদ্য
আর লিখবোনা,
প্রার্থনার শিরার শিরায়
তোমাকেই নির্ণয় করবো

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
সমস্ত যুদ্ধ থেমে যাবে
শুরু হবে আমাদের অন্যরকম সংসার

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
সমস্ত বেলায় চাষ করবো
অমরের মহাকাব্য,
শর্তহীন সন্ধিতে
পরস্পরের পূর্ণতায় বিলীন হবো

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
শ্লীল সভ্যতার সমাজ গড়বো,
মানবতার প্রণয়ে সমর্পণ করবো সমস্ত বর্বরতা

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
পরাজয় মেনে নিয়ে
অহংসর্বস্ব দাম্ভিকতাকে ক্রুশবিদ্ধ করবো,
বিজয়ী তোমাকে কুর্নিশে জানিয়ে দেবো
আমি তোমারই আছি

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
সমস্ত দীর্ঘশ্বাস জুড়ে
শুধুই ফাল্গুন ছড়াবে,
অন্তরের আরতিতে সুখের
শ্লোক ওম দেবে

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
ঠিকঠাক থাকবে সবি
হবে সম্রাজ্ঞী- নিষ্কলুষ প্রকৃতি,
দু'জনার অসীম নিঃসঙ্গতা সেঁচে
বাড়াবো সাম্রাজ্য নিরবধি

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
ক্লান্তি ও কষ্টগুলো মৃত্যু ঘুমে
মহাকাল পার করবে,
কবিতাগুলোর আর কোনো অসুখ হবেনা

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
স্বাধীন পতাকার সমস্ত ক্ষত সুস্থ হবে,
দুঃখী কবিচিত্ত হবে প্রেমের জায়নামাজ

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
সর্বভুক এ কবিতা অল্পেই তুষ্ট হবে,
উর্বরা ফাগুনে প্রণয়ের বিনীত ইফতার করবে

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
অপেক্ষার ভয়ংকর তৃষ্ণা মিটে যাবে,
অবর্ণনীয় অভিমান নিপুণ ভঙ্গিতে আলিঙ্গন করবে

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
ভেতরের আগুনের জল
মুছে দেবে পুষ্প কমল,
বোকা উদ্ভিদের মতো মমতাহীন
আর পার করবেনা দিন

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
জীবনের মৌলিক কাহিনী হবে শুধু তুমিই,
অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত শুধু নিখুঁত সুখ

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
নিবিড় স্পর্শ আমাকে অলৌকিক শক্তি জোগাবে,
পরাজিত দুঃখ বাসন্তিক বিশুদ্ধতায় পূর্ণতা দেবে

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
আমার কবিতার শৈল্পিক মিলনে সভ্য হয়ে উঠবে সবি,
দূর হবে অশ্রাব্য শব্দের কানাকানি

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
তৃষ্ণার্ত ক্যানভাস উঠবে ভরে অম্লান শিল্পে
বর্গা চাষীর মৌসুম হবে বিজ্ঞানসম্মত লাবন্যের

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
পরানের অচিন পাখি ব্যস্ত হবে কাব্যিক কথামালায়,
যুদ্ধোত্তর প্রত্যাবর্তনে ধ্রুপদী গীতাঞ্জলি গায়বে কুঞ্জবনে

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
অবর্ণনীয় অভিমানী কাপুরুষের কলঙ্ক মুছে যাবে
যৌবনের মিছিল হবে স্লোগানে মুখর ঠিক লাল শাড়িটার মতো

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
আঙ্গুলগুলো আশ্রয় পাবে সামাজিক মঞ্চের অভ্যর্থনায়,
নোলক, দুল, চুড়ির সভায় বেহালা গাইবে এপিথেলামিয়াম

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
জীবনের অভিধান থেকে পতন শব্দটা রহিত হবে,
জীবন ঘুড়ির অদম্য উত্তান হবে আশ্চর্য বৈরী বাতাসে

কথা ছিলো
তোমাকে পেলে
নীল খাম বয়ে নিবে অনুপম সুখের সুঘ্রাণ,
পবিত্র জলের উদ্দাম স্নানে হবে প্রণয়ের আশ্রম

প্রিয় নেত্রকোনা
তোমার কিশোরী হেলেন
আসলোনা আমার কাছে;
নেই অভিযোগ আমার তোমাকে নিয়ে

প্রিয়তমা হেলেন
কথা অনেক ছিলো যদি তুমি আসতে
দ্যাখো, বিধ্বস্ত এক এ আমি যাচ্ছি চলে
তোমাকে পেলে সত্যিই যেতামনা এভাবে

বিদায় হেলেন বিদায় তোমাকে
বিদায় অসীম নিঃসঙ্গ এ আমাকে

হে প্রেম, বড়ই নিষ্ঠুর তুমি বর্বর জল্লাদ
তোমার অবিমৃষ্য খড়গে জীবন বরবাদ


© মাহতাব বাঙ্গালী
১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪
চট্টগ্রাম


বিঃ দ্রঃ - কবির বিভিন্ন কবিতার কথামালা এবং ভাব অনুসরণে এটি রচিত।