জানো?
ওই রাতটা ছিলো বিদ্যুৎহীন,
শব্দের চেয়ে ভারী ছিলো নিস্তব্ধতা,
শহরের বাতাসে বারুদের গন্ধ,
আর শোনা যাচ্ছিলো
কোনো এক মায়ের চাপা কান্না।
একটা লাশ পড়ে ছিলো রাস্তায়,
হয়তো একটা নাম ছিলো তারও,
কিন্তু এখন সে শুধু
সংখ্যা, হিসেব, পরিসংখ্যান।
তবু জানো?
রক্ত শুকিয়ে যায়,
কিন্তু রক্তের গল্প মরে না।
একদিন ঠিকই কারও শিরায়-শিরায়
আগুন হয়ে জ্বলে ওঠে!
ওরা ভেবেছিলো,
গুলির শব্দে বিদ্রোহ মরে যায়,
জুলাইয়ের গলা চেপে ধরলেই মরে যাবে
প্রতিবাদের সমস্ত সুর!
কিন্তু ইতিহাস কি কাঁদতে জানে?
না, ইতিহাস বদলা নিতে জানে!
সেই রাতের কান্না,
সেই রক্তে লাল হওয়া শহর,
সেই বুকচাপা আগুনের উত্তাপ
আজও এই শহরের বাতাসে ঘুরে বেড়ায়।
আজ যদি তুমি চুপ থাকো,
কাল তোমার নামেও একটা হিসেব হবে!
তাই বলি,
কণ্ঠ খুলো, আগুন ধরাও,
কারণ,
জুলাইয়ের খুন—স্মরণীয়,
কিন্তু প্রতিশোধ—অপরিহার্য!
একটা লাশ মানে একটা জীবন,
একটা স্বপ্ন, একটা প্রেম,
একটা মায়ের বুকের ভেতর
অশ্রু-ভেজা রক্তের ঋণ।
ওরা যখন বুটের নিচে
চেপে রাখে স্বাধীনতার গান,
তখন প্রতিটি দেয়ালে দেয়ালে
লাল হয়ে ওঠে প্রতিবাদের মানচিত্র!
মাটির গভীরে শেকড়ের মতো
গেঁথে যায় শহীদদের চিৎকার,
তুমি শুনতে পাও না?
রাতের বাতাসে ভেসে আসে
সেই চাপা কান্না, সেই হতাশা,
সেই বুলেট-বিদ্ধ বুকের আর্তনাদ।
যে হাত একদিন বই ধরেছিলো,
আজ সে হাত গুলি গুনছে,
যে চোখ একদিন আকাশ দেখেছিলো,
আজ সে চোখ পাথরের মতো স্থির।
ওরা চেয়েছিলো সব শেষ হবে,
রক্ত ধুয়ে যাবে বৃষ্টির জলে,
কিন্তু ইতিহাস কি কখনও মুছে যায়?
ইতিহাস লাল হয়ে জ্বলতে থাকে!
তুমি কি ভয় পাও?
বিপ্লবের ডাক কি তোমাকে কাঁপিয়ে দেয়?
নাকি সেই রক্ত, সেই খুন
তোমার শিরায় শিরায় আগুন ধরিয়ে দেয়?
এখনো সময় আছে!
শোনো সেই শহীদদের চিৎকার!
তাদের রক্ত আমাদের হাত ধরে
নিয়ে যায় বিপ্লবের মিছিলে!
আমরা কি চুপ থাকবো?
আমরা কি মাথা নত করবো?
না!
জুলাইয়ের প্রতিটি গুলির শব্দ
আজও প্রতিশোধের অঙ্গীকার।
ওরা ভেবেছিলো, ভয় দেখিয়ে
আমাদের রুখে দেবে,
কিন্তু জানে না—
যতবার ওরা একজনকে মারবে,
ততোবার হাজার জন উঠে দাঁড়াবে!
বুকের ভেতর যে আগুন
জুলাইয়ের রক্ত ঝরিয়ে জ্বালিয়েছে,
সে আগুন নিভবে না!
আগুন জ্বালিয়ে ফাগুন এসেছে,
আমরাও দ্বিগুণ হয়েছি।
সে আগুন একদিন
প্রলয়ের ঝড় হয়ে নামবে,
আর সেই দিন—
ওদের পতন অবশ্যম্ভাবী!
রক্তের ঋণ রক্তে শোধ হবে,
ওদের বিচার হবে রাজপথে,
আর জুলাইয়ের শহীদদের নাম
লিখা থাকবে বিজয়ের প্রতিটি ধাপে!
তাই, দাঁড়াও!
শপথ নাও!
এই রক্ত বৃথা যেতে পারে না,
এই লাশ সংখ্যায় রূপ নিতে পারে না!
তুমি যদি আজ না জাগো,
কাল আর কোনো জুলাই আসবে না!
তুমি যদি আজ না লড়ো,
কাল আর কারো কণ্ঠ থাকবে না!
তাই, শহীদদের নামে শপথ—
জুলাইয়ের খুনের প্রতিশোধ
বিপ্লবের আগুনেই নেবো!
এই মাটি সেই থেকেই রক্তস্নাত,
এখানে ইতিহাস জেগে আছে,
গোঙ্গাচ্ছে লাশ,
বুকের রক্তে লেখা প্রতিজ্ঞা—
এবার দেশ গড়ার পালা!
যে রক্ত ঝরেছিলো রাজপথে,
যে কান্না ছুঁয়েছিলো আকাশ,
সেই রক্তের দাগ মুছে গেছে,
কিন্তু ইতিহাস?
ইতিহাস লিখেছে—
বধ্যভূমি থেকে একদিন
জন্ম নেবে নতুন সূর্য!
খুনি হাসিনা পালিয়ে গেছে,
তার রাজত্বের ভাঙা মূর্তি
এখন পথের ধুলোয় গড়াগড়ি খায়।
কেউ আর শোনে না তার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি,
কেউ আর দেখেও না তার ছায়া।
এখন আমরা নতুন পথের পথিক,
এখন আমরা নতুন স্বপ্নের নির্মাতা!
এবার আর রক্ত ঝরবে না,
এবার লুটেরা রাজত্ব থাকবে না,
এবার আর শ্রমিক কাঁদবে না,
এবার নারীর সম্মান হারাবে না!
এবার শিক্ষা হবে মুক্তির আলো,
নিপীড়নের শিকল ভেঙে ফেলে
শিক্ষার্থীরা শিখবে মুক্ত চিন্তা,
জীবন গড়ার, দেশ গড়ার পাঠ।
শ্রমিক আর রক্ত দেবে না,
শ্রমিক তার ন্যায্য মজুরি পাবে!
কারখানায়, মাঠে, বন্দরে,
ওরা আর নিঃশেষ হবে না!
ওদের ঘামে গড়া শহর,
ওদের ঘামে গড়া সভ্যতা,
ওদের ঘামেই এবার নতুন দেশ!
নারীর চোখে আর ভয় থাকবে না,
কোনো ধর্ষকের আর সাহস হবে না,
এই মাটিতে জন্ম নেবে
নারীর জন্য নিরাপদ এক পৃথিবী!
ধর্ষণ, হত্যা, দুঃশাসন,
নিপীড়নের সেই পুরনো দিন—
আজকে পোড়ানো হবে!
আগুন জ্বলবে প্রতিটি প্রাসাদে,
যেখানে লুকিয়ে ছিলো শকুনেরা,
যারা এই দেশটাকে লুটেছিলো!
নতুন সূর্য উঠেছে,
এবার প্রতিটি শহরে,
প্রতিটি গ্রামে—
গড়ে তুলবো সত্যের,
ন্যায়ের, মানুষের দেশ!
এখানে কৃষকের চোখে থাকবে আশা,
এখানে শ্রমিকের হাতে থাকবে অধিকার,
এখানে মজুরির টাকা যাবে তার ঘরে,
লুটেরার ব্যাংক একাউন্টে নয়!
এখানে শিক্ষক পড়াবেন মুক্তি,
শিক্ষা হবে সত্যের হাতিয়ার,
এখানে আর ঘুষ চলবে না,
সত্যিকারের জ্ঞান ছড়াবে আলো!
বুলেটের শব্দ থেমেছে,
গুমের রাজনীতি শেষ হয়েছে,
এবার আর অন্ধকার ফিরবে না!
এবার দেশ হবে মানুষের,
এবার দেশ হবে শ্রমিকের,
এবার দেশ হবে নারীর,
এবার দেশ হবে জনতার,
এবার দেশ হবে আমাদের!
তাই এসো, শপথ নিই—
এই রক্ত, এই বিদ্রোহ,
এই লড়াই— বৃথা যাবে না!
আমরা গড়বো এক নতুন যুগ,
আমরা গড়বো এক নতুন ইতিহাস!