নয়ন পল্লবের বর্ণীল আকাশে হাজার কথা লিখতে লিখতে আমি
ক্লান্ত পথের যাত্রী, অগভীর নদী যে, কত গভীর হয় তা
পৃথিবীর জীব কণার নিঃশ্বাস না থাকলেই বুঝতে সক্ষম। কল্পনা
প্রসূত ভাবনা নিয়ে জীবনের রঙ্গলীলা লেখা যায় জগতের
নিয়মে তারও শেষ আছে। যে কলমের কালি ফুরায়ে গেছে, সেই
কলমের নিঃশেষ যাত্রা বলে আর কিছুই নাই। যে শেষের মধ্যে
শুরু দেখতে পায় সেই বিশ্বাসী, আর যে শুরুতেই শেষ দেখে
বসে সে কালকূট, অবিশ্বাসী, ধ্বংস। পথের মায়ায় পড়ে পিছনে
তাকাবার মনবাসনা চঞ্চল বালকের মত এদিক ওদিক ছুটতে
উদ্যত হয়। সরু পথে দাঁড়ালে পিছনে জট বেঁধে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার
উপক্রম হবে বলে সীমানা পাড়ের বিভেদ রেখা প্রশস্ত হয়ে কুয়াশার
মাঝে বিলীন হয়ে গেছে। সেই পাড়ের উদ্বাস্তুদের ঘটি বাটির ঝনঝন
আওয়াজ নাই। পিনপন নীরবতায় এ পাড়ের মানুষ ভেবে ব্যকুল
না জানি ওপাড়ের প্রলয় ঝড় এখানটাই দোল দিয়া যায়। বিবস্ত্র হাওয়ার
পালে গোধূলি বিকেল সন্ন্যাসী হয়ে হারিয়ে যায়, নিশীথের আঁধার বনে।
চিরতার শরবত পান করে হৃদয়ের অমরত্বের তৃষ্ণা মিটানোর দ্বায়
অকালেই দাফন হয়ে যায়, পৃথিবীর অমোঘ নিয়মে। বড্ড বেরসিক মাছরাঙ্গা
শিকার করে নেয় জীবনের ক্ষণ ক্ষণ আয়ু। একটি ঝরা পাতার
আত্নহননে ফেটে পড়ে প্রকৃতি, কালের স্রোতেই তার নিত্য খেলা। ত্রস্ত
মনে তার শোভা কে মনে রাখে? দণ্ডিত কালের পুরুষ স্থির হয়ে
বসে রয়, ধ্বংস তরীর মাঝে। শ্বেত সুখের উত্থানে, কালো মুখোশের পতন
বার্তা লিখে দিয়ে যায় বিপ্লবের বাণী। প্রভাতফেরী গেয়ে যায় জীবনের
জয়গান ভর সন্ধ্যায় শালিকের কালো চোখে তার হয় অবসান।
দূরদূর কাঁপা বাবুই পাখির নীড়ে, কখনো চিলের নখের আঘাতের দহন জ্বালা
নতুন পৃথিবীর খোঁজে ব্যাকুল করে তোলে। ক্ষুধিত হাড্ডিসার বুকে জেগে
ওঠে, কাল্পনিক প্রেমের মোহ। উজ্জীবিত তরুণ তরুণী এখনো খেলে যায় সাগর
তীরে বেলাভূমির চঞ্চল ঢেউয়ে। এখানে চির মুক্তির আওভানে জীবন ডেকে যায়
কোকিলের মত সুরেলা কণ্ঠে, তবুও কি বিষণ্ণ যাত্রা, কি করুণ প্রস্থান!