হারাম-জাদি কখনো কোন পুরুষের কামনার পাত্রি ছিল
না, সেই এখন গভীর রাত্রির পাহারাদার হয়ে ছলছল
চোখে তাকিয়ে থাকে, কালো মেঘ ভরা দূর আকাশের
পানে, তাঁরার সাথে হিসেবের গড়মিলে, চিলে ছোঁ দেয় ভাবনার
আকাশে, রক্তাক্ত চোখের নিশানায় কাঁপে নিষিদ্ধ রাতের প্রদীপ
নিভে যায় নিমেষে সর্প দংশনে, তার সারা গায়ে দহন জ্বালা আর
কালনাগিনীর বিষ, জোড়া তালির স্বপ্নের গায়ে চির ধরে
নিঃস্ব হয়ে, হারামজাদী নামে আজ নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। অশান্ত
ঢেউয়ের প্রদিক্ষনে, বিষণ্ণ হয়ে ওঠে জীবন তরী। লেপটে
যাওয়া কাজল, আর বাইজীর নুপুরে, বিষাক্ত নিঃশ্বাসে পুড়ে
যায় জ্বলজ্বলে সোনালী দুপুর।
নেশাখোর লাল চোখের জারজগুলো এখনো দাফিয়ে বেড়ায় গ্রহ
থেকে গ্রহে, ভূখণ্ডের সীমানায় নেমে আসে কালো ছায়া, আঁধার
নির্জন গুমোট ধাঁধাঁ থমথমে রাতে, হায়নার নখের আঁচড়ে রক্তাক্ত হয়
কিশোরী আলোয়। কুকুরের ছানাগুলো জাত পাত ভুলে মুখ দেয়, মুক্ত
মানবতার স্বপ্নে। যারা হামলে পড়ে সীমানা অতিক্রম করে, মায়ের ছায়াকে
ধর্ষণ করে, উল্লাসে মেতে ওঠে।
হারাম জাদি যে ছিল গোলাপের ঘ্রাণের মত লুকানো, বিত্ত
বিভব আর আশীর্বাদে পরিপুষ্ট ভগ্নী মাতা। যাকে নিশীথ রাতে
চাঁদের কল্পনায়, নয়নাভিরাম কাননে তারি পাশে বসিয়ে, কোন
এক পুরুষ ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখত। তারি রক্তাক্ত দেহ দেখে
বিপ্লবের আগুনে পুড়িয়ে, তাকে ফিরে পেতে মরিয়া। দেহ
ভোগের উন্মাদনায়, আজ বিপর্যস্ত সোনালী জীবন। পশুত্বের
থাবায় শাবকের ছলছল চোখ যতটা কাঁদিয়ে যায়, সেই চোখে
আমার বোনের করুণ আকুতি মিলিয়ে যায়, লোলুপ দৃষ্টির
কীর্তিনাশা স্রোতে। নিত্য খবরের কাগজে গল্পের মুখরোচক উপদায়ে
হয়ে, কারো মনে শিহরণ হয়। ত্রস্ত মনে, মলিন মুখে তারে খুঁজি
ঝোপ ঝাড়, পুরনো রেললাইনের ধারে, ভাগাড়ে পড়ে থাকে দেহ
শকুনের খাবার হয়ে। স্নেহময়ি বোন আমার, নিশাচররের সেবিকা
ভেবনা তুমি হারিয়ে গেছ? পুঞ্জিভূত ব্যাথাগুলো হৃদয়ে আমার
বিদ্রোহের দাবানল জ্বালিয়ে দেয়।
মায়ের মুখে মুখে যুদ্ধ করা ছিল যার নিত্য খেলা, সেই মা
উনুন পাড়ে গিয়ে চোখ ভিজিয়ে আগুন নিভিয়ে দেয়। পিতাকে যে
পুত্রের মত শাসিয়ে ওষুধ খাইয়েছে, তার হাতে মেহেদী পড়ানোর
আগেই, পুরো পৃথিবীর বুকে, মেহেদী রঙে লালে লাল হয়ে গেছে।
পাগলির মায়াভরা দুষ্টমি আমাকে, উন্মাদ পাগলের মত করে
দিত, তাকে পায়ে নুপুর পরিয়ে হাসাতে পারিনি হে নিষ্ঠুর অমানবিক
বিশ্ব। যে নিজে অভুক্ত থেকে পরম মমতায়, আদরের ছোট বোনকে খাইয়ে
দিত, তাকে মিষ্টি খাইয়ে তার ঝরে যাওয়া জীবন রাঙাতে পারিনি
ওরে বিধ্বস্ত মানবতা। বুক ফাটা কান্নার মাতম তুলে আমাকে
আর লজ্জিত কর না লক্ষ্মী বোনটি আমার। তোমার রক্তাক্ত কাফন
ছুঁয়ে শপথ করেছি, আমি উন্মুখ হয়ে আছি, আমি উন্মুখ হয়ে আছি
সেই দুর্ধর্ষ কালো রাত্রির অপেক্ষায়, যে দিন হায়নাদের বুকে তলোয়ার
বসিয়ে, আমি খুনে লাল হয়ে, প্রতিশোধের মৃত্যুর উল্লাসে মেতে উঠবো
অট্টহাসির দহনে পুড়িয়ে, ছারখার করে দেব অনর্থ বিশ্বের বিচার।