পৌষ মাসের কেবল শুরু,
চারিপাশ কুয়াশায় মোড়া,
হিমেল গামী বাতাসে,
গায়ের লোমে দেয় সাড়া।

রাত্রি তখন ১১টা ছুঁই, ছুঁই,
জড়সড় হয়ে ধরেছি বাড়ীর পথ,
রাস্তার ধারে, ঝুপড়ি ঘরের
পলিথিনের চালাটা উড়চ্ছে  পত,পত।

কয়েকজন ভ্যানচালক একত্রে বসা,
সামনে খড়কুটোর আগুন,
শীতের রাতেও জীবিকার সন্ধান,
পেটের জালাও দিগুণ।

দুটি মাটির চুলা জ্বলছে,
তৈরী হচ্ছে পিঠা-পুলি,
পরম যত্নে বানাচ্ছেন, এক মহিলা,
যেন, শিল্পির হাতে রং- তুলি।

তেল চটচটে হাত দু'খানা,
পরনে পাতলা পুরনো শাড়ি,
ঘোমটা মাথায়, বানাচ্ছে পিঠা
মাঝবয়েসী এক নারী।

ধোঁয়াউঠা চুলায়, আগুন জ্বালে,
চোখ দুটি ছলছল,
ধরে নিলাম আমি, এসব বুঝি
মাটির চুলার ফল।

পুরাতন একটি  তক্তার উপর
সাজানো কয়েকটি বাটি,
বিভিন্ন রকম ভর্তা তাতে,
খেতে মুটামুটি।

ভাপা, চিতই বানান তিনি,
গরম,গরম খাওয়া,
খদ্দের এসে, খেয়ে চলে যাই,
তার হয়না যাওয়া।

কত জনের কত চাওয়া,
কতরকম অভিযোগ,
ঝাল হইছে গো, মিষ্টি হয় নাই,
তবুও তিনি,  খুবি চুপ।

অনাহারী মুখ, ফ্যাকাশে দেখায়,
পিদিম জ্বালা আলোতে,
সব পিঠায় সে বিক্রি করে,
তুলে না হাতের তালুতে।

দুটি পিঠা খেয়ে আমি,
করিলাম তার সুনাম,
চোখের পাতা কাপিলো, শুধু
এটুকুই বুঝিলাম।

কোন কথা কহিল না সে,
ব্যাস্ত আপন কাজে,
একটি পিঠা গুজিয়া রাখিল
আঁচলেরি ভাঁজে।

মানুষজন কমে গেছে,
রাত্রি  গেছে বেড়ে,
দোকান টা তার বন্ধ করচ্ছে,
হাতটা একটু  নেড়ে।

টাকার থলেটা সযত্নে রাখা,
মনে খানিকটা ভয়,
বাড়ি অবধি পৌঁছে গেলেই,
অনাহারী বুঝি জয়।

কাঁপা, কাঁপা  হাতে পিদিম তুলে,
রওনা হলো বাড়ি,
পথের বাঁকে মিলিয়ে গেল,
মাঝ বয়সী ঐ নারী।

কুয়াশার ফাঁকে উঁকি দিয়ে,
চাঁদটা হলো বিলিন,
মাঝ রাতের শীতের পিঠা,
লাগলো বড়োই মলিন।