নিজের হাতে সেলাই করা
পুরোনো জুতা পড়ে ,
যাচ্ছে হরি ,দাওয়াত খেতে ,
ছাতাখানা তার ঘাড়ে।
হাতে রয়েছে মিষ্টির হাড়ি ,
পড়েছে মলিন ধূতি ,
ফতোয়াটা তার রং চটেছে
কিন্তু খাঁটি সুতি।
রাস্তার মোড়ে ,বটের তলে
হরির ছোট্ট দোকান ,
ছেঁড়া জুতার খদ্দের যেন ,
হরির ভগবান।
জুতা সেলাই আর কালি লাগাতে ,
হরির বেশ সোনাম ,
সব রকমের মানুষকে হরি
করে থাকে প্রণাম।
পাশের গলির শিলপট্টির
আব্দুর রহমান ,
হরিলালের বন্ধুবর্গ
দুজনের বেশ টান।
তাইতো হরি ,যাচ্ছে আজি
রহমানের দেওয়া দাওয়াতে ,
ব্যবসায় তাহার লোকসান হলেও ,
ক্ষতি নেই একটুও তাহাতে।
রহমানের বাড়ির মালিক
মস্ত টাকাওয়ালা ,
বিশাল তাহার অট্টলিকা
না জানি ,কত তলা।
পায়ে হেঁটেই পৌঁছে গেল
নিমন্ত্রণ পাওয়া বাড়িতে ,
চট করে একবার দৃষ্টি দিল ,
সঙ্গে আনা হাড়িতে।
নানা রকম আলোকবাতিই
সারা বাড়ি মোড়া ,
সাহেবি লোকের আনাগোনা,
কত ফুলের তোড়া।
গেটের সামনে দাঁড়িয়ে হরি
দুরু দুরু কাঁপে,
বাবুসাবরা মুসকি হেসে ,
বাঁকা চোখে দেখে।
কতজনের মুখটা চেনা ,
খদ্দের হওয়ার ফলে ,
আজ তাহারা , হরিকে দেখে
নাকে রুমাল তুলে।
খানিক বাদে ,রহমান এলো
হন্তদন্ত হয়ে ,
সারাটা শরীর ভিজে গেছে তার ,
ঘাম পড়তেছে বেয়ে।
বন্ধুকে নিয়ে ভিতরে গেল ,
ভিড়টা সামনে ঠেলে ,
সারি ,সারি খাবার টেবিল ,
রেখেছে বাতি জেলে।
নামি ,দামি খাবার দাবার
সাজানো থরে ,থরে ,
হরির যেন, হঠাৎ করে
কি জানি মনে পড়ে।
খাচ্ছে সবাই ,হেলায় ফেলায়,
নষ্ট হচ্ছে কত ,
তাই দেখিয়া হরি লালের,
মনে জাগে ক্ষত।
বাবুরা যেন, খেতে নাহি ,
নষ্ট করতেই আসে ,
খাবার ফেলে পাহাড় করতে
তাহারা ভালবাসে।
এক কোণেতে ,দুজন মিলে
খাচ্ছে মাদুর পেতে ,
রহমান হঠাৎ বলিয়া উঠে
আজ পারবনা যেতে।
থাকিবে তুমি সঙ্গে আমার ,
রাতেই আসল মজা ,
নাচ ,গান আর হৈ হুল্লোড়ে
মনটা হবে তাজা।
বলিল হরি ,বিয়েটা বুঝি
মালিকের কোন ছেলের ?
এত আয়োজন ,কত লোকজন ,
ঝুলছে মালা ফুলের।
খিলখিলিয়ে হাসিয়া উঠিল
আব্দুর রহমান ,
হাসির কারন জানতে হরি
বাড়িয়ে দিলো কান।
বন্ধুর কাছে চুপি ,চুপি
বলিলো বিয়ে নয় ,
আজকে যাহা হইতেছে ,
বার্থডে নাকি কয়।
সাহেবের ছোট মেয়ের,
আদুরে বিড়াল ছানা ,
তারিতো আজ জন্মদিন ,
তাইতো এত খানা।
হরি যেন ,ধপাস করে
আকাশ থেকে পড়ে ,
অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ,
একটুও নাহি নড়ে।
অনাহারে রয়েছে কত
আমাদের মত মানুষ ,
তাহাদের পানে চায়না কেউ
না আছে কোন হোশ।
ভাবতেই হরির কান্না পেলো
চোখ করে ছল ,ছল,
বিলাস জীবন কাটছে তাদের,
বাড়ছে ক্ষুধার্তের দল।
বাপের দেওয়া নামটাও আজ
বদলে যে দেয় তারা ,
নিত্যদিনের কাজটাও আবার ,
হয়না মোদের ছাড়া।
আমরা যদি বলতে যাই ,
বলি নাকি ,বেফাঁস,
এর কি কোন শেষ হবেনা ?
তাইতো আমি হতাশ।