উড়োনযানের জালনার পাশে
ভাবছে মজনু একা ,
আর কিছুক্ষন পরেই হবে ,
আমার দেশটা দেখা।
আহারে , কত সরল মনের ,
আমার দেশের মানুষ ,
সাদামাঠা তাদের জীবনযাপন ,
না ,আছে কোনো দোষ।
কুড়ি বছর দেখিনা তাদের ,
বুকটা করে খা ,খা
স্বপ্নে কত দেখেছি তাদের ,
মুখগুলো মায়ামাখা।
উড়োনযানের ঝাকুনিতে ,
মজনুর ফিরলো হুশ ,
অজানা এক ভীতিতে ,
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে , ফুস।
বিমানবন্দরে নেমে দেখে ,
ব্যাগটা তাহার নাই ,
কর্তাবাবুর টেবিলের পাশে ,
দাঁড়িয়ে রইলো ঠাঁই।
ধমক মেরে কর্তাবাবু ,
বলল ব্যাটা যা ,
ব্যাগটা তোর পেতে হলে ,
দিতে হবে খরচা।
শর্ত মেনে ব্যাগটা পেল ,
তাও আবার , তালা ভাঙ্গা ,
প্রহরীর কাছে বলতে গিয়ে ,
খেতে হলো ডান্ডা।
কাঁদো ,কাঁদো হয়ে ফিরে এলো সে ,
রওনা দিলো বাড়ী ,
গেটের সামনে পেয়ে গেলো এক ,
ভাড়ায় চালিত গাড়ী।
গাড়িতে ওঠে চুপচাপ মজনু ,
বাহির পানে চায় ,
কি জানি এক সুভাষ পেল ,
মজনুর জানা নাই।
অবশেষে মজনু ফিরে পেল জ্ঞান ,
বইছে মৃদু হাওয়া,
তাকিয়ে মজনু বুঝতে পারে ,
ফুটপাতের ধারে শোয়া।
কত মানুষ যে , ছোটছে চলে
তাহারি পাশ দিয়ে ,
কেউ নাহি তারে দেখিলো একটু ,
মুখখানি ফিরিয়ে।
দূর্বল মজনু কোনরকম উঠে ,
চড়িলো লোকাল বাসে ,
কন্ট্রাক্টর ব্যাটা ধমক মেরে ,
ভাড়া চাহিল তার কাছে।
পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেখে ,
পকেটটা তার কাটা ,
নীরব চোখে তাকিয়ে আছে ,
ঘোরছে তাহার মাথা।
রাস্তার পাশে খানিক উঁচুতে ,
করেছে এক আসন ,
সেথায় দাঁড়িয়ে ,গলা ফাটিয়ে,
দিচ্ছে নেতা ভাষণ।
গাড়িটা আর যাবেনা বলে ,
সবাই গেল নেমে ,
প্রখর রোদে , বেহাল দশা ,
গোসল হলো, ঘেমে।
পায়ে হেটে তাই , কিছু দূর গিয়ে ,
চড়িলো আবার গাড়িতে,
অবশেষে মজনু ,ফিরতে পারলো ,
নিজের প্রিয় বাড়িতে।
বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে মজনু ,
নয়ন জলে ভাসে ,
আত্মীয় -স্বজন মজনুকে দেখে ,
সবাই ছুটে আসে।
শূন্য হাতে, মজনুকে দেখে ,
সবাই যেন হতাশ ,
রাত্রি তখন অনেক হলো ,
বইছে মৃদু বাতাস।
ঘটনা গুলো কল্পনা করে ,
বিড়বিড় করে বলে ,
দেশটা আমার চলে গিয়েছে,
একেবারে রসাতলে।
আফসোস করে বলে মজনু ,
কেন যে ,এলাম ফিরিয়া ,
এর চাইতে অনেক ভালো ,
প্রবাস জীবন , সিরিয়া।