সন্ধ্যা নামতেই , তেল মাখিয়ে
তৈরী হইয়া বসে ,
ভাবছে কলিম , যাইবে এবার,
ফিরবে রাত্রি শেষে।
অন্ধকারটা একটুখানি
ঘন হলেই চলবে ,
কাজটা আজকে করতে পারলে,
কপালটা আমার খোলবে।
পশ্চিম পাড়ার বড় বাড়ির
সবাই গেছে ঢাকা ,
নিশ্চিন্তে আজ মাল কামামু,
পুরা বাড়ি ফাঁকা।
থলে হাতে কলিমুদ্দিন ,
যাচ্ছে পশ্চিম পাড়া ,
হিসাব করে ,পা ফেলিয়া ,
কান রয়েছে খাড়া।
বড় বাড়ির পিছন দিয়া ,
এবার ঢুকার পালা ,
সদর গেটটা বন্ধ আছে ,
ঝুলছে বড় তালা।
ছোট -খাটো কলিমুদ্দিন ,
জানালা দিয়ে ঢুকে ,
ঘরের ভিতর পা ফেলিয়া,
থুথু ছিটায় বুকে।
চাল ,ডাল আর খাবার ,দাবার
যাহাই পড়লো হাতে ,
সবগুলো তাই ভরলো ব্যাগে ,
দম নিলো না তাতে।
ঘার ফিরিয়া , দেখিল একবার ,
এল নাহি কেউ পাছে ,
চট করিয়া ,ফিরিয়া আসিল
সেই জানালার কাছে।
বাহির হইয়া ,পা টিপিয়া
যেই দিবে এক দৌড় ,
কই থেকে যেন , বলিয়া উঠিল ,
ধর, ধর, ধর, ঐ গেল গো চোর।
কোনোদিকে আর না চাহিয়া ,
মারলো ঝাড়া ছুট,
কি জানি আসিয়া পড়িল মাথায় ,
পাহিল তাতে চোট।
তাহার পরে জানেনা কিছু ,
কলিমুদ্দিন চোর ,
চোখ মেলিয়া দেখিতে পায়,
হইয়া গেছে ভোর।
শত ,শত মানুষ তাকে
করিয়া আছে ভিড় ,
ব্যথায় শরীর টন ,টন করছে ,
চোখটা শুধু স্থির।
চাল ,ডাল আর খাবার ,দাবার
মাটিতে রয়েছে পড়ে ,
তাকিয়ে কলিম ভাবছে শুধু ,
ছেলেপুলে মোর অনাহারে।
হাঁক ছাড়িয়া কে যেন বলিল ,
ব্যাটাকে জলে ভাসা ,
জন্মের তরে বুঝবো মজা ,
এই বাড়িতে আসা।
চুল কাটিল ,কালি মাখিলো ,
চুপচাপ কলিম চোর ,
ভাবিতেছে শুধু, এই জীবনের
আর কতখানি দূর।
আমিতো আগে ছিলাম ভাল ,
সব তো নিছে তারা ,
এখন আমি চোর হইয়াছি ,
আমার মাথা ন্যাড়া।
দেশের সম্পদ লুটেও তারা
হয়েছে সমাজপতি ,
কর্তাবাবুদের চোরির জন্য ,
আমাদের এমন গতি।
উপরে তাদের মুখোশ পড়া ,
আসলে তারা ভন্ড ,
তারাই আমার চোর বানিয়ে ,
দিলো চোরের দন্ড।