বাইরে বাড়ির সকল লোকজন বসে আছে, সারাদিনের কাজেকর্মে আমি খুবই ক্লান্ত হয়ে গেছি,আমার আর ওখানে থাকতে ভালো লাগছিল না তাই আমি পিসি ঠাম্মার ঘরে বিছানায় শুয়ে পড়ি।‌ তখন আমার নজর পিসি ঠাম্মার খুব পুরনো জং ধরা টিনের বাক্সর উপরে পড়ে, পিসি ঠাম্মার ঐ বাক্সতে কেউকে কোনদিনও হাত দিতে দেখিনি, কারণ সেটা ওনার একদম ই পছন্দনা বর্তমান সবাই উঠনে অনেক পুরনো কথা নিয়ে বসেছে, যাদের আমি জানি ও না। এই ঘরে এখনতো মনে হয় না যে কেউ আসবে, এই সুযোগে আমি এই বাক্সটা খুলে দেখি তো কি আছে? বাক্স খুলতেই দেখি অনেক শাড়ি তবে কিছু শাড়ির নিচে একটা পুরনো লাল বানারশী শাড়ি। শাড়িটার গায়ের জোরে টানতে গিয়ে ওফ্ পুরো ভাঁজ খুলে গেল আমি খুব ভয়ে-ভয়ে ভাঁজ করার সময় দেখি একটা চিঠি, মনে হচ্ছে চিঠিটা খুবই পুরনো ভাঁজে হালকা ছিঁড়ে গেছে, চিঠিতে সুক্ষেন্দ্র নাম লেখা। এই নামে আমাদের পরিচিত কেউ আছে বলে তো আমি জানা নেই?  শব্দ শুনতে পেলাম কেউ আসছে তাই তাড়াহুড়ো করে ঠিক যেমন ছিল তেমনভাবেই গুছিয়ে চিঠিটা নিয়ে ছাঁদে এলাম, আর নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না তারাতারি চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করি

      
              "অপর্ণা আশা করি তুমি আমাকে একটু বোঝর চেষ্টা করবে। আমি মেজ থেকে বাড়ি ফিরে দেখি মহাজন বাবাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে হিসাবে নয়-ছয় করে বুঝিয়েছে যে আমারা মহাজনের আছে অনেক ঋণ,তিনি শর্ত রাখলেন যে তার জন্ম থেকেই কথা বলতে না পারা মেয়েটিকে যদি আমি বিয়ে করি তাহলে সকল ঋণ মাফ। বিশ্বাস করো তোমাকে দিয়ে আসা কথার মান রাখার অনেক চেষ্টা করেছি,অনেক সংঘর্ষ করেও কিছুতেই মহাজনকে ভুল প্রমাণিত করতে পারিনি তাই শেষে কোনো পথ না দেখতে পেয়ে বিয়ে করে নিয়েছি,আমার শ্বশুর মশাই যেমনি হোক না কেন আমার স্ত্রী কিন্তু অনেক নম্র এবং খুবই সহজ সরল স্বভাবের মেয়ে। আমরা একে অপরের সাথে বলা কথাটা যে ছিল "যদি আমরা একে অপরকে না পাই তাহলে সারা জীবন অবিবাহিত থাকবো, দ্বিতীয়বার প্রেম আমাদের দ্বারা কখনোই হবে না কথাটা আমি মিথ্যে প্রমাণ করেছি তুমি ও মিথ্যে প্রমাণ করে দিও।"

                                             ইতি,
                         তোমার ব্যর্থ প্রেমিক সুক্ষেন্দ্র



চিঠিটা পরে আমার মাথায় সব ঘুরপাক হতে শুরু হল, গা দিয়ে ঘাম ঝরতে লাগল, আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না, ছাঁদ থেকে নিচে নামে সবার পুরনো আলোচনার মাঝে বসে শুনি, আমার ঠাম্মা পিসি ঠাম্মার ছবির দিকে তাকিয়ে বলছে;" ভাবা যায় সে কেমন ছেলে সেই যে গেলো তো গেলোই  কি জানি বাপু বিয়ে ঠাওয়া করেছে কিনা?একটিবারও কোন যোগাযোগ করলো না অপর্ণা কতই না অপেক্ষা করলো চিঠির একটা শেষ চিঠির।" আমি আর কোন কিছু না বলে সবার আড়ালে পিসি ঠাম্মার ছবির পাশে এই ঘিয়ের প্রদীপটা জ্বলছে এখানে জ্বলন্ত শিখাতে শেষ চিঠির শেষ সমাপ্ত দিয়ে দিলাম।