বাসের ভেতর খুব হই-চই গানের শব্দ, সকলে মিলে পিকনিকে যাওয়া হচ্ছে,যাওয়ার পথে অনিক বলল; আমি শর্টকাট রাস্তা একটা জানি,সে রাস্তা দিয়ে গেলে,,,,ভালো হয় তাড়াতাড়ি পৌঁছাব আর তাড়াতাড়ি পৌঁছালে তো ভালো আমরা সব থেকে ভালো জায়গাটা নিতে পারব।অনিকের কথামতন সকলেই রাজি হয়ে যায়।

শর্টকাট রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে অনিক দেখলো একটি মেয়ে সালোয়ার পরা, বাস টার দিকে তাকিয়ে আছে,অনিক ভাবল হয়তো বাস টাকে দাঁড় করাতে চাই। কিন্তু বাসটা পার হয়ে গেল মেয়েটি কিছুই বলল না। অনিক জোরে বলল;বাস থামাও,,তোমরা দেখতে পাচ্ছে না একটি অসহায় মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেমন তোমরা। সাথে-সাথে বাস থেমে গেল,অনিক বাস থেকে নেমে মেয়েটির সামনে গিয়ে বলে; আপনি এখানে কি করছেন একা-একা আমরা কোন সাহায্য করতে পারি কি আপনাকে? মেয়েটি খুব ধীরগতিতে বলল; আমার নাম অপর্ণা,আমি এখানে পিকনিকে এসেছিলাম আমার বন্ধু বান্ধবীর ছিল আমার সাথে,আমি বাসের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম, হঠাৎ আমার কানের দুলটা পড়ে যায় আর বাসও খুব ধীর গতিতে চলছিল আমি ভাবলাম বাসের থেকে নেমে দুলটা তুলেই বাসে উঠে যাব ,তাই নেমে পরি তারপর দুলটা নিয়ে যখন বাসে ওঠতে যাই তখন দেখি বাস খুব দ্রুতগতিতে চলতে লাগলো, আমি অনেক দৌড়েও বাসটাকে ধরতে পারলামনা এত বললাম বাস থামাও কেও আমার কথা শুনতেই পেলনা। সব কথা শুনে অনিক হেসে-হেসে বলল; তাহলে চলুন আমাদের সাথে আমরাও তো পিকনিকে যাচ্ছি সেখানে গিয়ে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবীদের পেয়ে যাবেন,এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তো আর পাবেন না তাদেরকে? তাছাড়া সবাই এক জায়গাতেই যাব,আশাকরি আমাদের সাথে গেলে আপনার মন্দ লাগবে না।
                  
                 অপর্ণার মুচকি হেসে দেরি না করে বাসে উঠে যায়। অনেকের পাশের সিট টা খালি ছিল,অপর্ণা সেখানেই গিয়েই বসে,আর সকলের সাথে গানের লড়াই যোগান দেয়।অপর্ণা খুব মিশুকে,খুব কম সময়ে সকলের সাথে খুব সহজে মিশে যায় সকলের মনেই হচ্ছিল না যে অপর্ণা আচেনাকি মেয়ে। অনিক অপর্ণার দিকে খুব ভালো করে দেখছিল, অপর্ণার চোখ গুলো বেশী বড় নয় ছোট্ট চুলগুলোও কোমর পর্যন্ত  লম্বা নয় গায়ের রং শ্যামবর্ণ তবুও অনিকের কাছে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরী মেয়েটি আজ তার পাশে বসে আছে। অনিক অপর্ণাকে জিজ্ঞাসা করে অপর্ণার বাড়ি কোথায় কি করে বাড়িতে কে কে আছে।এ কথায় সে কথায় অনিক অপর্ণার কাছে থেকে ফোন নাম্বারের চায় আর অপর্ণা দিয়ে দেয়,অনিক মনে-মনে ভাবে হয়তো আমি আজ জীবন সঙ্গী পেয়ে গেছি।
পিকনিকের জাগায়তে পৌঁছানোর পর। সকলে বাস থেকে নেমে দেখে পিকনিকের জায়গায় খুব ভিড় অনেক পুলিশ নিউজ চ্যানেল কি হয়েছে কেউ কিছু বুঝতে পারছিল না। আর অপর্ণাকেও কোথাও দেখা যাচ্ছিল না অনিক অপর্ণাকে খুঁজে পাগলপারা, অপর্ণার ফোনও নট রিচেবল বলছিল,তখনই দেখতে পেল জল থেকে একটি মেয়ের মৃতদেহ বের করা হচ্ছে, মৃতদেহটি সামনে গিয়ে দেখে সবাই অবাক ‌হয়ে যায় ঠিক অপর্ণার মতন দেখতে একই গায়ের রং একই চেহারা একই রঙের সালোয়ার পরা, কখন কি হলো কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না।

              তখনই অনিকের গ্রামের এক কাকাবাবুকে দেখতে পায় কাকাবাবু খুব কাঁদছিল,অনিক সামনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল; তুমি এখানে কি করছো, এই মেয়েটাকে তুমি চিনতে নাকি?মেয়েটি কিভাবে মারা গেছে কখন মারা গেছে মেয়েটা তো আমার সাথেই ছিল। গ্রামের কাকাবাবু কেঁদে কেঁদে বলে; এই মেয়েটির নাম অপর্ণা এই মেয়েটির সঙ্গেই তোর বিয়ের কথাবার্তা চলছিলো যেই মেয়েটির গায়ের রং চাপা বলে তোর আপত্তি ছিল? মেয়েটি গতকাল এখানে পিকনিক করতে আসেছিল হঠাৎ ও বাস থেকে নেমে যায় আর পা পিছলিয়ে পাহাড় থেকে ঝর্নাতে পড়ে মৃত্যু ঘটে। অপর্ণার তোর সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল সেটা আর পূরণ হলো না, ও খুব ভালো মেয়ে ছিল রে, একথা শুনে অনিকে থমকে রইল পিকনিকের আনন্দ হই-চই কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল সকলেই অবাক শুধু অবাক।