সে এসেছিল আমার সঞ্চিত একান্নবতী বাসায়। পহেলা বৈশাখ ১৪০০ সাল ছিল সেদিন। সাদা শাড়ি লাল পাড় আর কপালে টিপ । আমার বন্ধুর আত্মজ বান্ধবী রাফাতের কথা বলছি । আমরা যাকে ‘বাংলিশ’ বলে ডাকতাম। ক্যাম্পাসের উঁচু-নীচু টিলা, টিলায় দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষরাজি, সবুজ ঘাস, টেনিস গ্রাউন্ড, দীঘির পাড়, শহীদমিনার, সবখানে তাদের স্মৃতি পাঠ করে আসলাম আজ একান্তে । পড়ার নামে লাইব্রেরীতে তাদের প্রেমের পাঠ চলতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ।
দীর্ঘ ছয় বছরের রচনা নিশ্চয় কোন ছোটগল্প নয়, উপন্যাসের বিশাল উপাখ্যান। হঠাৎ একদিন একঝড় এসে সব তছনছ করে দিল । শেষ উপাখ্যান অরচিত রয়ে গেল। আমার বন্ধুর কষ্টে সেদিন আমি আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিলাম। তারপর দীর্ঘ নিঃসঙ্গতা মাড়িয়ে আমার বন্ধু যুগলবন্দী হল । সেদিন আমার চিত্তে পৃথিবীর সব সুখ প্রবাহিত হয়েছিল, যদিও আমি ছিলাম উদ্বাস্তু প্যারিসে।
শুনেছি রাফাত আমেরিকায় তিন সন্তানের জননী, পিছনের সব স্মৃতি দু’পায়ে মাড়িয়ে স্বামীর সংসারে বেশ সুখেই আছে। সময় থেমে থাকেনা। আমরা সবাই জীবন সায়াহ্নের উপকূল ছুঁইছুঁই । একদিন সায়াহ্নের আলিঙ্গনে চলে যাবো । তখনো এমসি কলেজ ক্যাম্পাস থাকবে , আমাদের উত্তরসূরিরা পদছাপ আঁকবে মুখরিত ক্যাম্পাসে অথচ তারা কেউ বুঝবেনা পনের বছর এখানে রচিত হয়েছিল শেষ উপাখ্যানহীন এক দীর্ঘ উপন্যাস।