এক কবি বন্ধুর আমন্ত্রণেই আজ ঢুকেছিলাম আলোচনা সভায়। এলাম। দেখলাম। মোটামুটি একই বিষয়ের বেশ কিছু রচনা পড়লাম (এমনকি আসরেও একই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত একটি কবিতা পেলাম)। কিছুটা বুঝলাম। কিছুটা বুঝলাম না। কিছু কথা ভালো লাগলো। কিছু লাগলো না। কোথাও আশার আলো পেলাম, কোথাও আবছাভাবে এক আঁধারিমাময় ভবিষ্যতের গন্ধ পেলাম। কোথাও ভরসার কিরণ, তো কোথাও নৈরাশ্যের নেতিবাচকতা। সব মিলিয়ে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার আঙ্গিকে ভাবলাম আলাদাভাবে এক কবিতাপ্রেমীর অনুভূতির কথা বলাই যায়।
মাঝে কিছুদিন আসর থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে আজ সকালে ঢুঁ মারলাম। কিছু কবিতা পড়লাম। কিছু কবিতায় মন্তব্যও করলাম। আমি সময় পেলে কবিতা পড়ি। কবিতা পড়ার আনন্দে পড়ি। যেহেতু কোন কবিতা-তত্ত্বের ধার ধারিনা (বা বুঝিও না, বুঝতে চাইও বা) তাই যে কোন কবিতার হাত ধ’রে ধেই ধেই করে কিছুটা নাচতে আমার কোন অসুবিধা হয়না। সহজেই যে কোন কবিতাকে আপন করে নিতে, হাতে হাত ধরে কিছুক্ষণ ঘুরতে, একসাথে কিছুক্ষণ থাকতে আমার না কোন অসুবিধা হয়, না কোন দ্বিধা, না কোন সংকোচ। কবিতার পংক্তিগুলোর অলিতে গলিতে ঘুরে ঘুরে এখানে ওখানে পড়ে থাকা অনুভবের মধুরিমাটুকু খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করি। পাইও তো বেশ। এই কবিতাগুলো যারা উপহার দিচ্ছেন আসরে, এরা যাদের মানস সন্তান, সেই সব অভিভাবকদের প্রতি (বাংলায় যাদের কবি ও ইংরেজীতে পোয়েট/পোয়েটেস, poet/poetess বলে) কিছু কথা বলার বাসনা হ’ল। শুনবেন কি?
এই আসরে আমার অনিয়মিত ও স্বল্পসময়ের বিচরণের ফলে আসরের অনেক ঘটনাপ্রবাহ আমার পক্ষে অনুসরণ করা সম্ভব হয়না। তাই অবাক হয়ে দেখি, যখনই কিছুদিনের বিচ্ছিন্নতার পরে আসরে ঢুকে পড়ি, তখন এক এক সময় এক এক রকমের বায়ু পরিবর্তনের অনুভব পাই। কখনো দমকা হাওয়া, কখনো ঝোড়ো সাইক্লোন, তো কখনো আবার কারো দু’চোখ বেয়ে বয়ে আসা অশ্রুধারা। কখনো অভিমানের সুর তো কখনো প্রতিবাদের ঝড়। কখনো ভালোবাসার মূর্ছনা তো কখনো আবার বেদনার ফল্গুধারা। কেউ আসর ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘোষণা (কখনো প্রচ্ছন্ন তো কখনো প্রত্যক্ষ) করছেন তো কেউ আবার ভুল বোঝাবুঝিকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন কখনো ইচ্ছাকৃত ও কখনো অনিচ্ছাকৃতভাবেই। যেটুকু সময় থাকি, তাতেই এই বিবিধ অনুভূতির রসধারা বয়ে যেতে দেখি তো। আমি এমনিতে এত বেশি ইতিবাচক চিন্তাভাবনায় বিশ্বাস করি (ও করতে চাই) যে, এসবের মধ্যেও আমি মাঝে মাঝে সৃজনশীলতা ও মননশীলতার সুর খুঁজি। সত্যি তো, কবিতাময় এমন এক সৃজনশীল আসরের হাঁচিতে কাশিতে, কষ্টে বেদনায়, সুখে আনন্দের সব অনুভবই তো হবে এক একটা কবিতা, কবিতার পংক্তি,কবিতার স্তবক। কিন্তু তার সবই হ'তে হবে সব সময় গঠনমূলক ও ইতিবাচক। আমি যেহেতু কবিতা বিশেষজ্ঞ নই, তাই কবি ও কবিতার সংজ্ঞা ও নিয়ম কানুন (এসব নিয়ে বিশেষজ্ঞেরা আছেন চর্চা ও আমাদের অবহিত করার জন্য) সম্বন্ধে আমার সত্যি কোন সম্যক ধারণা নেই। আমি শুধু এটুকু বুঝি যে , যে শব্দ বা কথার গুচ্ছ বা মালা চোখ ও মন দিয়ে গিলে ফেলার পর আমাদের হৃদয়ের গভীর থেকে এক পরিতৃপ্তির উদগার ওঠে, মনের মধ্যে এক অনুভবের দোলা পাই, চোখ মুখে এক ভালোলাগা মাখা আভা ফুটে ওঠে, তখন আন্দাজ করে নিতে পারা যায় যে, একটি সফল কবিতা পাঠ করলাম এই মাত্র। ছন্দ বা ছন্দের নিয়মকানুন বা কবিতা লেখার নিয়মকানুন সাহিত্যের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রযোজ্য হ’তে পারে (কারন ওগুলো পড়ে, বুঝে, কখনো মুখস্থ করে পরীক্ষায় নম্বর পেয়ে পাশ করতে হবে) , তাই বলে একজন কবি ওসব মাথায় রেখে লিখতে বসেন কি? আর বসলেও তা’তে কবিতা লেখার তৃপ্তি পাওয়া যায় কি? কবি তৃপ্তি পেলেও পাঠক কবিতা আস্বাদনের পর পরিতৃপ্তির ঢেকুর তোলেন কি? একজন কবিতাপ্রেমী পাঠক হিসাবে আমি তো শুধু আমার কথা বলতে পারি। বাকি কথা তো আপনারা, অভিভাবকেরা ও অন্যান্য পাঠকেরা বলবেন।
ইদানীং আসরে আবার গদ্য বনাম পদ্যের অপ্রত্যাশিত লড়াই চোখে পড়ল। আমি নিদারুণ কষ্ট পেয়েছি আমার খুব প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় একজন কবি বন্ধুকে বেশ ব্যক্তিগত ভাবে আক্রান্ত হ’তে দেখেও। এ ধরণের প্রয়াসকে আর যাই বলা যাক, সৃজনশীল ও গঠনমূলক ভাবনা প্রসূত বলে আমি অন্ততঃ মানতে পারব না। আর গদ্য বনাম পদ্য? ছন্দ বনাম ছন্দহীনতা? এ তো সেই নারী বনাম পুরুষের বিতর্কের মত। শুভকামী মানুষ মাত্রই নীরবে মান্যতা দেবেন যে, যেমন করে নারী ও পুরুষের সমান সম্মাননা ও গুরুত্বজ্ঞাপনের মধ্য দিয়েই মানবজাতির কল্যাণ, ঠিক তেমনি এইসব গদ্য বা পদ্য নিয়ে নয়, উভয়কে সাহিত্যের এক এক প্রকাশভঙ্গী হিসাবে মেনে নিয়ে সমান ভাবে আদর করাতেই সাহিত্যের ও সৃজনশীলতার পূজো সম্পূর্ণ হবে। আমি তো এও বিশ্বাস করি যে, সত্যিকার কবি কখনোই পদ্য ছন্দে বা গদ্য ছন্দে লিখব ভেবে লেখেন না, লেখার পরে যেটা ফুটে ওঠে, তা’তে তিনি দেখতে পান যে কখনো তা পদ্য বা কখনো আবার গদ্যের রূপ পেয়েছে। কারো কারো বেলায় সব সময় যদি পদ্য ছন্দেই তাঁর রচনা প্রকাশ পায়, তাহলে তা’তেই বা দোষের কি? আর জানিনা, এসব লড়াইয়ে যারা উৎসাহ পান বা উৎসাহ দেন, তারা এই লড়াইয়ের শেষে প্রকৃতপক্ষে কোথায় পৌঁছাতে চান। সব চেয়ে বড় কথা মনে হয়, যারা অনেক বেশি বেশি কবিতা পড়েন (অবশ্যই মন দিয়ে, দায়সারা নয়), যারা সৈকতে ‘পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইলো’ গোছের সহজ ও সরল ছন্দের নুড়ি নিয়ে খেলতে খেলতে ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন কাব্যসমুদ্রের দিকে, তাদের কবিতার কাব্যরসের ঢেউ পাঠক মনকে বেশি আন্দোলিত করতে পারে। আমি খুব আশাবাদী যে, আসরে এই ধরণের নিতান্ত অপ্রয়োজনীয় যুক্তি-তর্ক-হেঁয়ালি একদিন বন্ধ হয়ে, আমরা শুধুই নির্ভেজাল কবিতা সাধনায় (কবিতা রচনা-পাঠ-গঠনমূলক আলোচনা) মেতে উঠতে উৎসাহিত বোধ করব। ( যদি কোনদিন বাংলা কবিতার আঙ্গিকে ‘বাংলা তর্ক ডট কম’ নামক কোন পোর্টাল উপলব্ধ হয়ও, এসব অন্তহীন আলোচনার ও বিতর্কের বিষয়গুলো সেখানের জন্য এখন থেকে থাক না আলমারিতে তোলা ।)
প্লেজিয়ারিজমের মত বেশ ইন্টারেস্টিং বিষয় উঠে আসতে দেখে কিছুটা পুলকিত ও কিছুটা বিস্মিতও হয়েছি। দেশ ও ভাষা নির্বিশেষে ভাব ও ভাবনার অনুকরণের ছাপ একের উপর অন্যের পড়াটা সত্যিই অসম্ভব নয়। যদিও একই ভাষায় বাক্যের পর বাক্য জুড়ে, অনুচ্ছেদের পর অনুচ্ছেদ অনুকরণ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হ’তে পারেনা। কিছু কথা যখন আমাদের সূত্র হিসাবে অনুকরণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তখন তা কিন্তু মূল লেখকের প্রতি যথাযোগ্য সম্মাননা ও গুরুত্ব প্রদর্শন ক'রে ( যা পাঠকের কাছে সুস্পষ্টভাবে পৌঁছানো দরকার) তবেই করা যেতে পারে। যেক্ষেত্রে এরকম অনুকরণ করার দরকার পড়ে সেখানে কিন্তু তথ্য সূত্র সুস্পষ্ট হওয়াটা জরুরী। যেমন আমি যদি ‘রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা, ভাবিনি সম্ভব হবে কোনোদিন …’ উল্লেখ ক’রে বলি যে কোন এক স্বনামধন্য কবির কবিতা থেকে নেওয়া বা প্রখ্যাত কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া, তাহলে তা কিন্তু যথেষ্ট হ’তে পারেনা। আমার সোজা কথায় বলা উচিৎ , রবি ঠাকুরের ‘হঠাৎ দেখা’। যদি অনলাইন মাধ্যম থেকে নেওয়া হয়, তাহলে তো সূত্র দেওয়া আরো সহজ, কারন সেখানে সরাসরি লিঙ্ক দিয়ে দেওয়াটা কাঙ্ক্ষিতই নয়, মনে হয় বাধ্যতামূলক। আরো লক্ষণীয় যে, যদি কোন রচনা শুধু এক পোর্টাল থেকে অন্য পোর্টালের পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার স্বার্থে প্রকাশ করা হয়, তাহলে সেখানে তো শুধুই লিঙ্ক দিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট। কারন যে পাঠক অনলাইন আছেন, তিনি যে সাধ্য সাধনা করে ঐ অনুপ্রকাশিত লেখাটি পড়তে পারবেন, সেটুকু প্রয়াসেই ঐ লিঙ্কে ক্লিক করেও পড়ে নিতে পারবেন।
আমরা সবাই কিন্তু জীবনে চলার পথে, যে কোন পরিস্থিতিতেই বেশ কিছু অলিখিত নিয়ম কানুন মেনে চলে থাকি। যেমন, পাশের ঘরে অসুস্থ আত্মীয়টি শুয়ে থাকলে, আমাদের যে বেশি গোলোযোগ করা উচিৎ নয়, বা বাড়ির সামনেটা নোংরা করা উচিৎ নয়, বা অফিসে করিডরে থুতু বা পানের পিক ফেলা উচিৎ নয় বা গুরু গম্ভীর আসরে উচ্চ স্বরে কথা বলা উচিৎ নয়, এসব কিন্তু আমাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে নোটিশ লিখে জানানোর দরকার হয়না। যেদিন এই দরকার বাধ্যতামূলক হয়ে উঠবে, সেদিন বুঝে নিতে হবে আমাদের মানবজাতির আরো বেশি দুর্দিন ঘনিয়ে এসেছে। সৌজন্যবোধের প্রকাশ, চেতনার উন্মেষ, বিবেকের জাগরণ – অন্ততঃ এগুলো যত বেশি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে স্বতঃস্ফূর্ত উদ্দীপনায় প্রকাশ পাবে, তত বেশি আমরা কিন্তু সুন্দর মনের মানুষ হয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে যেতে পারব। আজ সত্যি, শুধু এই আসরে বলে নয়, আমাদের চারিধারে, চলার পথে, যেখানে সেখানে সুন্দর মনের মানুষের সংখ্যা বড় কমে যাচ্ছে। আসুন আমরা সবাই বেশি বেশি করে সেই অভাব পূরণের পথে এগোতে উৎসাহ বোধ করি।
মানুষ মাত্রই আবেগপ্রবণ হবেই। মানুষের সাথে একটি মেশিনের এখানেই তফাৎ। হ্যাঁ, তফাৎ আরেক ক্ষেত্রেও। মেশিন শুধুই শেখানো বুলি আউড়ায় কিন্তু মানুষ তার নিজস্ব বিচার ও বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করে তবে কিছু বলে। এই সূক্ষ তফাৎ খুব অতি সূক্ষভাবেই কিন্তু আমরা যে কেউ অনুভব করতেও পারি। অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ আমরা হ’তেই পারি, কিন্তু তার নিয়ন্ত্রিত ও সুবিবেচিত প্রকাশেই কিন্তু আমাদের স্ব স্ব অস্তিত্বের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত হবে। আগেই বলেছি কবি শব্দের সংজ্ঞা বা রূপরেখা আমার জানা নেই। তবে এটুকু বিশ্বাস করি যে, কবি মানেই তাঁর সৃজনশীল ও গঠনমূলক চিন্তাভাবনা দিয়ে অন্যের (মানে যারা পাঠক হিসাবে ধরা দেন) মননকে ইতিবাচক ও সাবলীলভাবে প্রভাবিত করবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। কবির আচরণ ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশের ধরণও আমাদের কাছে শিক্ষণীয় ( কখনো সখনো অনুকরণীয়) হয়ে উঠতে পারে। সেদিক দিয়ে অভিভাবকদের আরো বেশি দায়িত্ববান ও যত্নবান হওয়া দরকার বলেই এই কবিতাপ্রেমিক পাঠকটি মনে করছে।
শুধু এই আসরে নয়, আমাদের চলার পথেও সব কিছু, সব কথা, সব পরিস্থিতি আমাদের পছন্দের অনুকুলে নাও যেতে পারে কিন্তু। যা কিছু আমার পছন্দের রেখা বরাবর আছে তাই ভালো, আর বাকি সব মন্দ – এই বহুলপ্রচলিত ভুলটি কিন্তু আমরা যত কম করব, আমাদের সবার জন্য ততই মঙ্গল। অনেকেই খুব সহজে ও অনতিবিলম্বে সমালোচনাকারীকে সুস্পষ্টভাবে তার অপছন্দের মানুষের তালিকাবদ্ধ ক'রে ফেলেন। আমরা কেউই ভুল ত্রুটির ঊর্দ্ধ্বে নিজেকে রাখার দাবী করতে পারিনা। মানুষমাত্রেই ভুল হ’তে পারে। তাই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও ইতিবাচক জীবনবোধের সন্ধানে আমরা সব দিক দিয়েই লাভবান হ’তে পারি। আমাদের মহাত্মাজী একটি চমৎকার কথা বলেছেন, “Be the change you want to see in the world.” আমরা সত্যি যদি আমাদের চারপাশটা বদলে ফেলতে চাই, তা শুরু করা উচিৎ নিজেকে দিয়েই। নিজের কিছু ধারণা (অনেক সময় যা ভ্রান্ত হ’লেও বদ্ধমূল থাকে), কিছু আচরণ ( যা আমাদের বিশ্বাস, এতদিন ভুল ছিলনা), কিছু পছন্দ ( আমরা ভ্রান্তভাবে ভেবে বসি যে, একজনের পছন্দ অপছন্দ অপরিবর্তনীয়) যদি একটু ঘষামাজা, একটু এদিক ওদিক করে নিতে পারি, তাহলে হয়ত অচিরেই দেখা যাবে, যে আমাদের চারপাশটা আগের থেকে আরো উজ্জ্বল মনে হচ্ছে, সামনের গাছটায় রোজ শিস দেওয়া দোয়েলটি যেন আরো বেশ মিষ্টতায় গান গাইছে, সন্ধ্যার আঁধারেও সব কিছু বেশ স্পষ্টতর মনে হচ্ছে। এ কোন তত্ত্ব কথা তো নয়, বহুল পরীক্ষিত সত্য। আমরা যে কেউ পরীক্ষা করলেই ফল হাতে নাতে। হ্যাঁ, গ্যারান্টি রইল।
আমি অনেকক্ষণ ধ’রে অনেক কিছু বলে গেলাম, আমার ব্যস্ততার মাঝেও সময়টুকু বের করে নিয়ে। কেন জানেন? আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাই, আমরা একসাথে যেন সবাই আরো আরো আনন্দে থাকতে পারি। আরো বেশি উৎসাহে সাহিত্য সাধনায় মেতে উঠতে পারি। আরো বেশি বেশি সুন্দর মনের মানুষ হয়ে উঠতে পারি। আমি তো এই আসরে এলাম, দু’চারদিন এসে আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব। আবার হয়ত আসব। কিন্তু আপনারা যারা নিয়মিত এখানে আছেন ও থাকবেন, তাদের কিন্তু এই আসরের মূল আনন্দময় ও সৃষ্টিশীল উল্লাসের সুরটুকু অক্ষুণ্ণ রাখাটা শুধু খেয়াল করা উচিৎ তা নয়, মনে হয় কর্তব্যও। এই আসরের ছন্দ পতন হ’লে আমাদের সবাইকে সমানভাবে মাথা পেতে সেই দায় নেওয়াটা উচিৎই নয়, বাধ্যতামূলকও।
সব শেষে, আমি মার্জনা ভিক্ষা করছি সেইসব অভিভাবকদের কাছে যাদের মনে আমার এই রচনার যে কোন কথা বা শব্দের দ্বারা অনিচ্ছাকৃতভাবে পীড়ার উদ্রেক করেছে। আমার প্রজ্ঞা প্রকাশ এই রচনার উদ্দেশ্য নয়, বরং কিছু কথা নিয়ে নতুন ক'রে ভেবে যদি আসরের সৌন্দর্য আরো বর্দ্ধন করা যায়, সে বাসনা নিয়েই এই প্রয়াস। আপনাদের সবার সব কবিতা সব সময় পড়ার সময় ও সুযোগ না হ’লেও এটুকু মনে প্রাণে বিশ্বাস করেছি ( আজও করি এবং আগামীতেও করব) যে এই আসরে আমার থেকে অসীম ও বহুগুণে অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ বহু কবিতার অভিভাবক (অর্থাৎ মানসপিতা) এই আসর উজ্জ্বল করে রেখেছেন। সবার কাছে অনুরোধ রইল, আমার এই প্রকাশনাটিকে এক নিতান্ত কবিতাপ্রেমীর সহজ সরল মনের কথা হিসাবেই নেবেন ও যে কোন অনিচ্ছাকৃত আচরণগত ভাষাগত ত্রুটির জন্য মার্জনা করবেন।
আসুন সবাই আনন্দে থাকি। সবাই ভালো থাকি। সবাই সুস্থ থাকি।