[কতরকম কবিতা পড়ার সুযোগ হয়। কোথাও কান্নার সুর তো কোথাও অভিমান; কোথাও আনন্দোল্লাস তো কোথাও বিয়োগব্যথা কিংবা বিরহকাতরতা। কবিতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে তার প্রকৃত স্বাদ পাওয়ার চেষ্টা করার অভ্যাস (বা বদভ্যাস) আমার তো আছেই। তার সাথে জুড়েছিল আমার কৌতূহল। কেমন হয় এসব রঙ বেরঙের বিভিন্ন কবিতার কারখানাগুলি। বেরিয়েছিলাম কল্পনার টর্চখানি হাতে। কোন কারখানা শীততাপনিয়ন্ত্রিত ‘আই এস ও’ (ISO) শংসাকৃত তো কোনটি আবার ছিন্ন টালির ছাউনি দেওয়া। কোথাও দামী সোফায় আধশোয়া হাতের লেটেস্ট গ্যাজেটে আঙুল বোলানো , তো কোথাও ঘরের মেঝেতে উপুড় হয়ে কাগজের উপর খস খস। অথচ সবগুলিতেই অভিন্ন সৃষ্টিসুখের উল্লাস। এরকম এক রুগ্ন কারখানায় উঁকি দিলাম। দেখলাম। সেখানের মুখ্যকারিগর যেন ঠিক এভাবেই অবিকল বলে গেলেন, অবলীলায়, নিঃসংকোচে : ]
সর্বস্বান্ত হয়েছি এ সংসারে;
তবুও অটুট ধীর, স্থির, হাবভাবে;
যদি উঁকি দাও আমার ছোট্ট ঘরে,
স্মিত হাসিমুখে আমাকে দেখতে পাবে।
চাপা কষ্টেরা ভিড় করে থাকে মনে;
এখানে আমার একাকিত্বের রাজ;
অশ্রুতে ভেজা আমার বালিশখানি,
আমাকেই দেয় কষ্টের আন্দাজ।
এখানে আমার গোছগাছহীন ঘর;
পর্দার পাশে পিঁপড়ের মাতামাতি;
ঝুল পড়া খাটে ময়লা বিছানা, ধুলো -
এরাই আমার প্রতিদিনকার সাথী।
আলসেমি আর অরুচিতে হয় খাওয়া;
আশেপাশে পাই খাবারের সুঘ্রাণ;
এখানে আমার কষ্টেরা ঘুম কাড়ে,
নিরুপায়, শুনি’ নিশুতি রাতের গান।
এখানে আমার বুকচাপা ব্যথাগুলো,
দেওয়ালে দেওয়ালে ধ্বনিত প্রতিধ্বনি;
সার ঘর জুড়ে আমি শুধু আমি একা,
রাত কেটে ভোর, ব্যাকুল প্রহর গণি’।
একাকিত্বের গন্ধ বর্ণ দিয়ে,
উঁকি মেরে দেখো’ এ ঘর যে ভরপুর;
কান পাতলেই স্পষ্ট শুনতে পাবে,
বিচিত্র এক নিঃশব্দতার সুর।
এখানে আমার নিদারুণ শীত কাটে,
শীতের প্রকোপে নিজেকে বাঁচানো দায়;
এখানে শিখেছি কষ্টের গভীরেই,
অদ্ভুৎ এক ভালোলাগা খুঁজে পাই।
এখানে আমার গ্রীষ্মের দিনগুলো -
স্তব্ধ দুপুরে হাওয়ারা পেয়েছে ছুটি;
এ যেন লড়াই তবু বেঁচে থাকবার;
উষ্ণ কষ্টে অদ্ভুৎ মেতে উঠি।
এখানে আমার পরিপাটিহীন থাকা,
ঘর জুড়ে খেলে বৃশ্চিক, আরশোলা;
উদাস দু’চোখে কখনো ওদেরই দেখি,
ওদের জন্য সর্বদা দ্বার খোলা।
এখানে আমার প্রতিবেশী কেউ নেই,
খুব বিপদেও কেউ দেবে নাকো সাড়া;
রুটিন বেঁধেই চলাফেরা করি আমি,
এখানে আমাকে চেনেনা আমার পাড়া।
আমাকে দেখেই হয়ত প্রকৃতি হাসে,
হয়ত বা দেয় ধিক্, শত ধিক্ তাই;
এখানে আমার পথ ফেরা পানে চেয়ে,
কেউ থাকে নাকো আমার প্রতীক্ষায়।
ছুটির দিনের সকাল সন্ধ্যাগুলো,
সময় তো তার নিয়ম মেনেই চলে।
কখনো বা দেখি বুকটা মোচড় দেয়;
একাকিত্বটা বেশ ভারী হয়ে ওঠে।
স্বপ্নে আসেনা বিলাসী অট্টালিকা;
হয়না বাসনা অভিজাত সাজবার;
স্বপ্ন দেখেছি ছোট ডিঙিখানি বেয়ে,
হাসিমুখে আর খুব সুখে বাঁচবার।
সাথে আছে কত মানুষের শুভাশিস,
তাই আজও আমি জীবনের কাছাকাছি;
যদি উঁকি দাও আমার ছোট্ট ঘরে,
সৃষ্টিসুখেই দেখো’ আমি বেঁচে আছি।