আমি তো লিখিনা কবিতার কথামালা,
ছন্দ মেলানো মানেই কবিতা নাকি?
আমি তো অপটু সরু, মোটা তুলি দিয়ে,
বুক চাপা যত যন্ত্রণাগুলো আঁকি।
আঁকবার কোনো ব্যাকরণ জানা নেই,
আনমনে দিই উদাসী তুলির টান,
হোক না সে রেখা ভবঘুরে, এলোমেলো,
বুঝবেই মানে, লাগবেনা অভিধান।
কবি বা শিল্পী তক্মা চাইনা আমি,
মানুষের ভিড়ে আমি সাধারণ কেউ,
বেঁচে থাকবার অসম লড়াই, তাই-
মুখে হাসিখুশি, বুকে কান্নার ঢেউ।
বাসে, ট্রামে,ট্রেনে হোক না যতই ভিড়,
ফোন, খেলা, ঘাম, কষ্ট, ক্লান্তি, গ্লানি,
খুঁজলেই পাবে সহযাত্রী সে কোনো,
অভুক্ত, ব্যথিত, তবু মুখে হাসি খানি।
জনারণ্য যে পথ ঘাট সব আজ,
খুঁজলেই পাবে শান্ত মানুষটিকে,
স্বাভাবিক চোখে লাজুক অশ্রু ফোঁটা,
কারো ভ্রুক্ষেপ থাকবেনা সেই দিকে।
কর্মক্ষেত্রে আজ মানুষের ভিড়,
মাস মাইনের রোজগার করে যারা,
খুঁজলেই পাবে সহকর্মী সে কোনো,
অমায়িক, নেই ঘরে ফিরবার তাড়া।
পথ ঘাটে সাজ, রোশনাই, হইচই,
ক্রিসমাস, ঈদ, পূজো-প্রীতি বন্ধন,
সে আলো ছাড়িয়ে দূর কোনো ছোটো ঘরে,
একা, ভারী বুকে জীবনের স্পন্দন।
মানুষের ভিড় সমুদ্র সৈকতে,
হাসিমুখে শিশু কুড়াচ্ছে ঝিনুক,
খুশির জোয়ারে জমায়েত ভাসলেও,
খুঁজে পাবে কোনো ভাবলেশহীন মুখ।
আমি তো শুনেছি জীবনের জয়গান,
শীত-গ্রীস্মেও সাবওয়ে, ফুটপাতে,
সারি সারি শুয়ে শক্ত চোয়ালগুলো,
রাত কেটে, ওঠে আরেকটি প্রভাতে।
উন্নয়নের যতই ঘোষণা হোক,
হতভাগাদের ওখানেই আশ্রয়,
কী তীব্র বাসনা তবু বেঁচে থাকবার,
কত অবহেলা, ওরা যে ভোটার নয়।
আমি তো দেখেছি কষ্টের পরাজয়,
হুইলচেয়ারে, পঙ্গু, হাত পা হীন,
উজ্জ্বল চোখে আশা ভরসার ছাপ,
অস্ফুটে বলে ‘আমাকে বাঁচতে দিন’।
আমি তো দেখেছি মলিন শিশুর মুখ,
ফুটপাত জুড়ে হেঁশেল আর সংসার,
ভাঙ্গা খেলনায় তারই মাঝে আহ্লাদ,
আকাশের নিচে আশা কত বাঁচবার।
কেউ কি দেখেছো অন্ধ মানুষটিকে?
খুব আঁধারেও কত আলো খুঁজে পায়,
এ জগৎ তার ভাবনার রঙে গড়া,
হাসিমুখে তার পথখানি হাতড়ায়।
ভীরু, কাপুরুষ, শিরদাঁড়াহীন যারা,
বাঁচবার তারা মানে খুঁজে পায় না যে,
জীবন যুদ্ধে ভারী আলসেমি যত,
পালাই-পালাই দুঃখ কষ্ট মাঝে।
তবু যারা বাঁচে বাঁচার লড়াই ক’রে,
তাদের জীবনে কেন আজ এত বাধা?
ভুল ব্যবহার দেখেছি যে শক্তির,
ভালো সাজে দোষী, আর দোষী সিধেসাদা।
ছন্দ মিলেছে মানেই কবিতা নয়,
যন্ত্রণা দিয়ে আঁকিবুকি টানি আমি,
লড়াইয়ে আমার নিথর দেহের পাশে,
হয়ত সেদিন এ রেখাই হবে দামি।