শুনলাম আরো একটা মুখ পুড়ির মুখ পুড়েছে,
শহরের প্রান্তে কয়েকটা দানব মুখপুড়ি টাকে টেনে নিয়ে গিয়ে আলের প্রান্তে,
মুখপুড়ি টার মুখে চুন-কালী লেপে দিছে।
অবশ্য শুধু যে মুখ পুড়িটার মুখে লেপেছে তা নয়, তার সঙ্গে তার পরিবারের মুখেও লেপে দিছে।
মুখ পুড়িটার একটাই দোষ সে "নারী"।
বাবু-সাহেব রা বলছে অল্প একটু চুন-কালির ছিঁটে দিছে তাতে কি হইছে!!
আমি বাবু অতো শত বুঝিনি, গরিব মানুষ আমি।
বাবুদের কাছে যা অল্প, আমার কাছে তা অফুরান।
আমি বাবু গরিব মানুষ অতো শত বুঝিনি।
কয়েক জন বাবু-সাহেব এসেছিল ঠান্ডা গাড়িতে করে,
ওরা বলে গেছে মুখ পুড়িটার হয়ে বদলা নেবে ওয়ার।
আমি বাবু গরিব মানুষ অতো শত বুঝি না।
ঠান্ডা গাড়িতে আসা বাবু গুলো বলেছে, কাল শহরে মোমবাতি হাতে মিছিল করবে।
আমাদের সবাইকে ওই মিছিলে মোমবাতি হাতে ঘুরতে হবে,
বাবুরা ও আসবে অনেক কিছু বলবে,
তবে যাই হোক মুখ পুড়িটার হয়ে বদলা লিবে।


আমিও উপস্থিত হয়েছিলাম মোমবাতি হাতে মৌন মিছিলে,
আমি থাকি শহরের এক ভাড়া বাড়িতে, আমার স্ত্রী ও একটা বছর পনেরো মেয়েকে নিয়ে।
আমি খুব একটা মাথা ঘামাই না, এই সব ব্যাপার গুলো নিয়ে।
নিহাতই আজ ছুটির দিন ছিল, বাজারে এসেছিলাম মাছ আনতে।
তাই চৌ-রাস্তার মোড়ে এই মৌন মিছিল দেখে,
একটা সেলফি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেবো তাই এসেছিলাম।
এই সব পোস্ট গুলোতে অনেক লাইক, শেয়ার পাওয়া যায়।
সেলফি তুলবো পকেট থেকে মোবাইলটা বার করছি, অমন সময় মিছিল থেকে কেউ একজন বললো -
"আরে নিরঞ্জন কাকু-যে এই মোমবাতিটা নাও, এগিয়ে চলো"
আমি কিছু সময়ের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম, কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
মনে মনে ভাবছিলাম,  ও!! এই মিছিলে প্রতিবাদ করছে ধর্ষণের!!
ওর বানানো এম-এম-এস এ ওই মেয়েটিকে যে কতো চোখ ধর্ষণ করেছে, তার ঠিক আছে।
ওর কি লজ্যা করছে না!! মিছিলে ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে।
ভাবতে ভাবতে কিছু আর বলা হলো না, মিছিলের সঙ্গে এগিয়ে চললাম।
অনেক ভারাক্রান্ত মুখ এই মিছিলের অংশ, আবার অনেকের চোখে এভারেস্ট জয়ের আনন্দ।

কাকু বলা ছেলেটি আমার পাশের পাড়ার ছেলে, মুখ চেনা আছে।
আমাদের বাড়ির পাশের ক্লাবটাতে প্রায় আসতো, এখন আসে কিনা জানি না।
দু-মাস মতো আগে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছিলো ওকে, শুনেছিলাম ও নাকি ওর গার্লফ্রেন্ডের এম-এম-এস বানিয়ে ভাইরাল করে দিয়েছিল।
ওর বাবা অবশ্য গণ্য পুরুষ আমাদের পাড়ায়-ও, তাই কোনো কেচাল ছাড়াই ছেলেকে সন্ধ্যা বেলা বাড়ি নিয়ে চলে আসে।
যাইহোক,
এই ঘটনা শোনার পর আমার মামন-কে আমি অনেক বার সাবধান করেছি।
আমার মামন সোনার টুকরো মেয়ে, ওর ছেলে বন্ধু নেই।
এটাই আমার স্বস্তির বিষয়।


মুখপুড়ির হয়ে লড়তে যে, আমার সম্বলের এক জড়া জুতা ছিঁড়ে গেল।
মোমবাতি হাতে পুরা দিন হাঁটলুম বিশাল মিছিলে।

এখন ঠান্ডা গাড়িতে আসা বাবু বলছে, মুখপুড়িটা খুব ঢ্যমনা ছিল।
শহরের প্রান্তে ছেলে গুলাকে ওই লইয়া গেছে, ছেলে গুলা বেকসুর।
ওয়ারা এখন একজন ডাক্তার, আর একজন মাস্টর আরো কতো কি!!

আমি বাবু গরিব মানুষ অতো শত বুঝিনি।