আমরা খুব ঠিকই জানি, সময় তো সময়-ই
আমরা খুব ঠিকই জানি, স্থান-ই তো স্থান
আমরা খুব ঠিকই জানি, স্থানেই সময়
আমরা খুব সঠিক জানি, সময়েই স্থান।

আমরা এত সঠিক জেনে খুব বেঁচে আছি
নিষ্পলক গাছের ছায়ে স্বচ্ছন্দতা গিলে,
পা থেকে হৃদয় কিংবা যকৃত ও মাথা
সর্বস্ব খালি করে খুব বেঁচে আছি
সেইদিন থেকে যবে ঈশ্বর বলেছেন,
'এইসব হাড়গোড় কি এখনও জীবিত?'

ফলের মত সিঁড়ি বেয়ে আমরা উঠি-নামি,
হাওয়ায় উড়িয়ে দিই গোলাপ কালো চুল
যে সেতারে আজ আর সঙ্গীত ওঠেনা
ভৌতিক বিস্ময় দিয়ে চুরি করি সুর;
এভাবেই শব্দহীন কথা রাখা যায়
যদিও আমাদের বাক্য, জানি, মূল্যহীন,
মূল্যবান কথাহীন শব্দটি, হে রাজা,
উচ্চারণ করো তুমি---- আশ্বস্ত করো----

আমার আর আশা নেই ফিরে তাকাবার
আমার আর শোকার্ত হয়েও কোনো প্রাপ্তি নেই
আমি তাই প্রার্থনা করি বিস্মৃতির তলে
নিরানন্দে - আনন্দে অন্তরালে যাই!

আমরা আজ জানি যে, আর কিছু জানব না
তাই গাছের শুভ্র ফুল - বসন্তের আগুন
গায়ে মেখে বসে থাকি শিক্ষা নেব বলে,
পাপীদের মৃত্যুর ঘন্টার কম্পাঙ্ক কত!



                             ২

এছাড়াও আরেকটি সত্য রহস্যাবৃত -
প্রত্যেকটি চাঁদের রাতে কেউ এখানে আসে :
উড়বার মতো তার ডানা আর নেই
বর্ণান্ধের রঙে তাই সে হেঁটে বেড়ায়;
আমরাও পিছু পিছু অত্যন্ত সুধীরে
যেইভাবে প্রেম নামক গন্ধ উবে যায়
প্রগাঢ় জ্ঞানের এক অন্ধকারে ঢুকি
আমাদের বিতাড়নেও ফিসফাস হয়।

হে আমার সুহৃদজন, ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা
যে কথা হয়নি বলা - শোনা হয়নি : থাক্!
চলো, আমরা আজ একটু নৈঃশব্দে বসি
হারানো - ব্যয়িত সব শব্দচর্চা হোক্ -
যদিও যথেষ্ঠ জানি, নির্ভুল কাল
কিংবা সঠিক স্থান কিছুই এ নয়;
যে মাটি হারিয়ে গেছে বোধহীনতায়,
রাজন জাগেন কন্ঠরুদ্ধ কোলাহলে।
প্রার্থনা করি, যেন আকন্দের আঠায়
সক্কলে দৃষ্টি পাই শেষ সূর্যোদয়ে।



                             ৩

এইবার টানাপোড়ন জন্মে - মরণে,
সমস্ত দিবাস্বপ্ন লয়হীনতায়
ছেড়ে যাই; শিখতে নামি কুৎসা, অবহেলা।
সত্যটি সত্য-ই যে আমার শান্তিরা
(নদীর কাছে, ঘাসের কাছে স্বস্তি পেতে চায়
যদিও) তাঁর অনুগ্রহে, 'তিনি'র ইচ্ছায়।

অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা অসমাপ্ত হয়
অশ্রুসিক্ত বিরহতাপ প্রবল সুখের -
হে আমার সহোদরা, হে প্রেয়সী মোর,
আমাদের প্রসূতি, হে জননী, ক্ষমা করো;
আমরা আর ফিরবো না কোনো ভেদাভেদে
কারণ এই যাত্রার যে শেষ : শূন্যতা।

তবে সকল চাবুক-দাগ পিঠে তুলে নিয়ে
দাবিহীন শুধু একটি অধিকার আছে :
আমাদের স্থান দাও; এই ধরাভূমে
মানুষের বাসযোগ্য স্থানাভাব বড়ো!



(Inspired by T. S. Eliot's 'Ash Wednesday')