বুড়ো রামদাস একা করে বাস ছোট্ট একটি ঘরে ।
তার তিন ছেলে গিয়েছে যে ফেলে ফ্ল্যাট কিনেছে শহরে ।।
টিভি দেখে তার দিন কাটা ভার তবু টিভি তার সঙ্গী ।
দুঃখের কালে সুখ দেয় ঢেলে কোথা পাবে অন্তরঙ্গী ।।
যবে রামদাস করে হাঁস ফাঁস কথা বলিবার তরে ।
টিভি দেয় খুলে সব দুখ ভুলে মন আনন্দে যায় ভরে ।।
রামদাস যবে রেগে কথা কবে টিভি দেয় নাকো সাড়া ।
ছেলে বৌ হলে না জানি কি ছলে খেয়ে যেত কত ঝাড়া ।।
এত কথা কয় তবু সব সয় টিভিই জীবন সাথী ।
এই টিভি তার ভরে সংসার এ যে তার নাতিপুঁতি ।।
ছোটছেলে যবে এক বছরের হবে তবে বৌ তার ম'রে ।
ছেলে তিনটিরে শিক্ষিত করে দুঃখ ঘোচাবার তরে ।।
নিজে চাপরাশি দুখ সয় হাসি সংসারে করে কাজ ।
স্কুলে যায় চলে ঠিক ন'টা হলে পিওনের পরে সাজ ।।
ঠিক পাঁচটায় ঘরে ফিরে যায় নিজে করে সারাকাজ ।
ছেলেদের বলে (যেন) না আসে পড়া ফেলে যদি বা ডাকে যমরাজ ।।
চান্স পাওয়া ভার হতে ডাক্তার প্রতিযোগিতা যে বড় ।
তার বড় ছেলে করে হেসে খেলে অনেক অঙ্ক জড়ো ।।
রুখিবে কে আর হওয়া ডাক্তার খুশী মনে বলে রাম ।
জানিত কভু কি সবি বুজরুকী কে দেবে ত্যাগের দাম ।।
তিনছেলে তার হল ডাক্তার ঘর কিনিয়াছে দুরে ।
রামে গেছে ফেলে দুঃখের কোলে স্ব্পনেরে ভেঙ্গে চুরে ।।
করিতে মানুষ আশার ফানুস হঠাৎ গিয়েছে ফেটে ।
দুরে রেখে আশ মায়া মোহপাশ কয়েক বছরে কাটে ।।
পেন্সনভোগী প্রেশারের রোগী ছেলেরা আসে না আর ।
বোঝে এত দিনে এ তিন ভুবনে পয়সার কারবার ।।
কোনোমতে বাঁচে কথাতেই আছে স্বভাব যায় না মলে ।
আজ ও যদি দেখে কেউ আছে দুখে নিজের দুঃখ ভোলে ।।
দাঁড়াইয়া পাশে তারে আশ্বাসে শোনায় আশার বাণী ।
নিজের খাবারে তুলে দেয় তারে করুণ তার পরাণি ।।