স্বর্ণলতা গাছের ডালে বাসা বাঁধিয়াছিলো জোরা পাখি,
সাঁঝ নামিলে নীড়ে ফিরতো তারা, করুন সুরে ডাকি।
নিরব চিত্তে আঁধার কৃত্য রোজ শুনিতাম গীত,
রোজ প্রভাতে ডেকে ডেকে ভাঙ্গাইত মোর নিন্দ।
পাখি দুটি বৃষ্টি কালে উইড়া উইড়া নাচিত,
নাচন শেষে খিড়কির পাশে, ডানা গুলি ঝাপটাইত।
পাখি জোড়ার প্রণয় দেখি আনমনে মন ভাবিতো,
ভাগ্যিস এরা হয়নি মানব, নয়ত কবেই এ প্রণয় ভাঙ্গিত।
ভাবতে ছিলাম কি দেয়া যায় তাহাদের ডাক নাম,
ভাবিতে ভাবিতে ছাড়িলাম নাওয়া, খাওয়া,দাওয়া সব কাম।
তারপর বাছি দিয়াছিনু নাম, ইনু আর বিনু,
ডাকিয়া দুটিরে তখনি নামের কথা যেই কনু,
শুনিয়া দুজনে ডানা নাচাইয়া, সে কি উড়াউড়ি,
কিচিরমিচির করিয়া কইয়াছিলো যেন, নাম খানা হইছে ভারি।
তারপর যখনি ডাকিতাম দুটিরে ইনু বিনু নামে,
আসিত ছুটি, পাখি দুটি, আমার খিড়কির পানে।
সহসা একদিন চাইয়া দেখি, বিনু বসে একা ভাসায়,
ঝিমানি চোখে তাকাইয়া আছে যেন প্রিয় ইনুর আসায়।
এর পরে দেখিতাম রোজ বিনু থাকিত একা বসে,
ইনু ঘুরে ঘুরে খাবার এনে বিনুর মুখে দিত ঠেসে।
কিন্তু ইনু কিছু খাইত না, করেছিলো তার অসুখ,
সুখ পাখি দু'টির জীবনে নামিয়া ছিলো করুন এক দুুখ।
কিচিরমিচির করিত না আর, দুটি হয়েছিলো চুপ,
হঠাৎ এক ভোর সকালে, বিনুর নিভিলো জীবন কুপ।
স্বর্ণলতা গাছের নিচে বিনুরে করলাম দাফন,
ইনু ও ছাড়িলো নাওয়া খাওয়া,  যেন সেও নিয়াছিলো মরার পন।
দুটি ডানা, মাটিতে লুটাইয়া, বিনুর কবরের পাশে সে থাকিত পড়িয়া,
খাবার, পানি দিলে তাকে, ভুলেও দেখিত না ছুঁইয়া।
এমনি করিয়া কদিন পরে ইনুর ও আসিলো মৃত্যু খবর,
স্বর্ণলতা গাছের নিচে ওরেও দিয়েছিলাম কবর।
আজো আমি খিড়কি খুলিলে নিরবে শুধু কাঁদি,
স্বর্নলতা গাছের নিচে দেখি মোর ইনু বিনুর সমাধি।