মোদের গাঁয়ের চন্টু চোরা, ইনিয়ে বিনিয়ে হাঁটে,
রাত্রি হইলে লোকদের ঘরে, লুকিয়ে সিঁধ কাটে।
একদা  রাতে আসিলো সে, মোর ঘরে চুরি করিবার,
জাগিয়া জাগিয়া দেখিতে ছিনু, চন্টু চোরের কারবার।
হঠাৎ করি বলিয়া উঠিলাম, খবর কি হে চন্টু চোরা?
দিতে আসিয়াছ কী এই রাত্রে, মোর ঘরখানা পাহারা?
তো বলিলেই হইত, আসিবা তুমি, খুলিয়া রাখিতাম দোর,
কথা শুনিয়া চন্টু মিঞা,  ভয়ে মারিলো দৌড়।
মাস কয়েক বাদে হঠাৎ দেখা, বিন্দু ছরির ঘাটে,
গাছ তলের টং এর খাটে, বসিয়া সে, আমিও বসিলাম সাথে।
কইলাম কি ব্যাপার চন্টু মসাই, পালাইছিলা কেন ওই রাতে?
আজ তুমি কই পালাইবা,  পেয়েছি তোমায় বাটে।
শুনিয়া চন্টুর শুকাইল গলার পানি,
কাঁদো গলায় কইল, শাস্তি নিবে মানি।
প্রশ্ন করিলাম,  করো কেন এমন কাজ?
কেন তুমি ধরিয়াছ, চোরের সাঁজ?
সময় কম জলদি কও শুনি, কি তোমার সে কাহিনি।
চন্টুর মুখে বিষাদের ছাপ পরিল, দীর্ঘ এক শ্বাসে  বলিতে শুরু করিলো।
বাবা মরিছে সেই ছোট তাতে,
মা ভাগিছে জানি না কারবা সাথে,
একা আমি, এতিম হইলাম সেই হতে,
সবাই তুলিয়া দিলো চাচার হাতে।
চাচা ছিলো সহজ সরল,  চাচি খুবই বদ মেজাজি।
ছোট দুটি ভাই ছিলো মোর,  তারা বড্ড পাজি।
ভাই দুটিতে দোষ করিলে, মোর ঘারে চাপিতো,
চাচি আম্মা তাই শুনিয়া, মোরে ধরে মারিতো।
নিজ ছেলেদের আদর করিতো, মোরে দিতো না ভাত,
খিদের তরে জল গিলে, কাঁদিয়া জাগি ছিনু রাত।
হঠাৎ একদিন সকাল সকালে, ডাকিয়া মোরে উঠাইলো,
কইলো তুই চুরি করিয়াছিস, মিথ্যা দোষেতে পিটাইলো,
বাড়ি থেকে বের করিলো,  ধাক্কাইয়া মোর কাঁধ,
সেই দিন চুরি না করিয়াই, পাইয়া ছিনু অপবাদ।  
কত জায়গায় কাজ খুঁজিনু, খিদের চোটে হাত দিয়াছিনু বাড়িয়ে।
কেউ দেয়নি কাজ মোরে, গালি দিয়া, দিয়াছিলো তাড়িয়ে।
সেই হইতে পেটের দায়ে, ধরিনু এই চুরির কাজ,
বেঁচে থাকিবার তাগিদে মোর, ভাঙ্গিলো সব লাজ।
আসলে আমি চোর হইবার চাই নাই,
মোর আছিল কত স্বপ্নের ছন্দ,
কিন্তু এই ভাগ্য, সমাজ,স্বজন,
করিয়াছে মোরে মন্দ।

শুনিয়া ওর কথা, ভিজিলো চোখের কোণ,
নিজের মাঝেই সে কত গল্প,  করেছে যে দাফন।
আসলেই এই সমাজ দেখে, কে কতটা নষ্ট,
কিন্তু দেখিয়াও দেখেনাকো,  নষ্টের পিছনের কষ্ট..

(ভালো লাগলে একটি মন্তব্য করবেন ধন্যবাদ)