[দিল্লী থেকে]
বন্ধুর প্রতি-০১
................................................।।
তোমরা ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ দেখেছ
দেখনি ক্ষয়িঞ্চু হৃদয়
অপুষ্টি আর অবহেলায় এ হৃদয়
ইটে চাপা ঘাসের মতো ফ্যাকাসে সাদা।
অনেকদিন কারো সমাচার
কর্ণ কুঠুরিতে প্রবেশ করে না
বাংলার বুকে তোমরা অসংখ্য তারা
তবুও মাঝে মাঝে মনে হয়
তোমরা আকাশের তারাদের মতই নির্বাক
আমি নাহয় খসে পড়লাম, ক্ষুদ্র উল্কা হয়ে
সভ্যতার কোন এক পঁচা নর্দমায়।
জানি, একদিন পঁচা নর্দমাও কষ্ট পাবে
তার বুকে গড়ে তুলবে উচু ইমারত
সৃষ্টি করবে কালের আধুনিক ইতিহাস
অথচ, আমি যে ওখানেই আছি
একটুকুও কি কষ্ট হবেনা তোমাদের
ইমারত দিয়ে চাপা দিতে
কষ্ট কি পাবেনা
আমাকে ধ্বংস করে কার্বন ডাই অক্সাইডের
সভ্যতা গড়ে তুলতে?
যদি তাই হয়, হোক, আমি সন্তুষ্ট
অন্তত: তোমাদের ইমারতের চাপে
লোপ পাবে আমার বুকের বিশাল শূণ্যতা।
কুচুরি পানা দেখেছ?
কোমরের নীচে এক গুচ্ছ শেকড়
অথচ নেই কোথাও ঠাঁই,
এই কুচুরি পানার জীবনই হওয়ার কথা ছিল আমার
অথচ বাংলার পতাকার লাল বৃত্তে অনুভব করি
আমার হৃৎপিন্ডের শেকড়
সবুজ রঙে দেখতে পাই
লাল রঙে ভিজে যাওয়া আমার অপরিচিত চেহারা
এক প্রকার জোর করেই পতাকার লাল গোলকে
রেখেছি আমার রাঙা চোখ
দেখেছি তোমাদের সোনার বাংলা
অথচ তোমরা দেখেও আমায় দেখনি
আমি এখনও অনুভব করি
আমার রাঙা চোখে তোমাদের ছায়া
এই ছায়ার ভারে হয়তো একদিন প্রয়োজন হবে
মাইনাস পাওয়ারের কোন বিকল্প চোখ।
বন্ধু, ভেবেছি আমার ফ্যাকাসে চেহারায়
খুঁজে পাবে আমার কষ্টের গভীরতা
ভেবেছি, আমার চোখের মনিতে
খুঁজে পাবে তোমাদের অস্তিত্ব
হয়নি; এর কিছুই হয়নি?
ভেবেছি, পাথরেও বৃক্ষ হয়, লতা হয়
জানা ছিলনা এই বেসম্ভব।
তবে, পাথর ফুঁড়ে বৃক্ষের উদয় হয়
তুমি যতই ইমারতের চাপা দিয়ে রাখনা কেন
আমি ইটের পাঁজরে পাঁজরে শেকড় গেরে
উঠে যাবো ঠিক তোমার ইমারতের উচু চূঁড়ায়
তোমার পাকা ফ্লোর ভেদ করে
শুয়ে থাকবো তোমার শেগুন কাঠের বিছানা হয়ে
তার পরেও কি আমায় চিনবে না?
নাকি সেই লোকটিই মনে হবে
যার দুটো হাতই বাঁ হাত!
কেমন আছো বন্ধু, আমি জানি
তোমার হৃৎপিন্ডের তৃতীয় ফুঁটোর অবস্থান
যেখানে রক্তের বদলে ঝড়ে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা ভীষন আঠালো পদার্থ
অথচ জোড়া লাগেনা কোনদিন যেভাবে কাঁঠাল গাছও
পারেনা নিজের আঠালো রস দিয়ে জোড়া লাগাতে নিজের ক্ষত।
জানি বন্ধু, কালের আধারে তোমার অস্তিত্ব
ইটের ভাঁজে ভাঁজে গাথা থাকবে
তোমার হাত তালিতে চলে আসবে
৪২টি সাদা কবুতর
তোমার শখের পুরানো আধুলী ঘষে মেজে
চড়া দামে বিক্রি হবে এক সময়
যেভাবে বিক্রি হয় পুড়ানো ডাক টিকিট।
তার পরেও কি মনে করো ক্ষরণ বন্ধ হবে?
যেখানেই যাও বন্ধু
এখনও সময় আছে
সূর্যের আলোয় প্রেমিক চেনা দায়
রংধনুর মতোই দেখবে তাদের দেহে ৭টি রং
মিল খুঁজে পাবেনা নিজের রঙের সাথে
বুকে হাত রাখো, দেখবে নিজের হাতই ঈশ্বরের হাত
যদি মনে করো, যদি বিশ্বাস করো
মাটির ১.৫ফুট নীচে তোমার আমার দেখা হবে
তখনই ক্ষরণ বন্ধ হবে। এভাবেই ভাবো।
আমার আরেক বন্ধু, আমার এক্স রুমমেইট
যে কিনা হৃদয়ের অধিপতি
যার হৃদয়ে টান পড়লেই ঝড়ে পড়ে তারার মতো অসংখ্য কবিতা
যার মুখে ২ ইঞ্চি সিগারেট পুড়লেই
মাথায় খেলে সুমন কিংবা রবীন্দ্রনাথের সুর
ভালোবাসার মদে তন্ময় হলে যার মাথায় অবস্থান করে স্বয়ং ঈশ্বর
যার ঈশারায় দেয়াল ফুড়ে বেড় হয় প্রেমিকের নাম
হ্যাঁ সেই তুমি বন্ধু
তুমি কি এখনো খোঁজ সেই ২ইঞ্চি জমি, পেয়েছ কি সন্ধান
যেখানে স্বয়ং ঈশ্বর লুকিয়ে রাখেন স্বর্গীয় মদের ফেনা
তোমার ঈশ্বর কি দিয়েছে কোন হদিস?