" ভালো মানুষের খোঁজে"
           বিপ্লব দাস

খুঁজতে খুঁজতে দিনের ওপর কত দিন চাপা পড়ে গেছে ,
কত পায়ের স্যান্ডেল ছিঁড়ে গেছে
তার হিসেব নেই।
অসুখ  ছুঁয়েছে আকাশ।
শহরটাও লাগে হারানো সেফটিপিনের মত,
আমি দিশাহারা পথিক,
দুচোখে আজও অনাবিল আকাঙ্ক্ষা।
অপেক্ষার অসংখ্য চড়ুই বিষণ্ণে উড়ে গেছে অন্য এক শহরের বুকে।
তবু দিনশেষে খাতার পৃষ্ঠায় সূর্য আঁকি ঘষে ঘষে,
যেন একটু আলো থাকে শহরে।
চিরকালীন ঝরে থাকা আমি তো ব্যথিত পাতা, ফুল।

রাতের পর রাত দুচোখে অশ্রুতে ভিজেছে বালিশ,
কোনো ঋতুতেই ফোটেনি আমার জন্য নিঃস্বার্থ আঙ্গুল।
আজও ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে জানান দেয়
কেউ নেই...
কেউ নেই আমার কাছে।
কত শত গোধূলির ছায়াছবি ডুব দিয়েছে আত্রেয়ীর বুকে,
আমাকে কাছে করে রাখার করো মহাকরণের ব্যাখ্যা শুনিনি,
দূরত্ব বাড়ানোর বেলুন উড়িয়ে সরে গেছে সবাই।
যাদের নেই কখনো, কোনোদিন মন ভর্তি আফসোস।

আমার মন সরল সমীকরণে আঁকা,
শুধু খুঁজেছি ছুটতে ছুটতে মানুষ ।
যার মান আর হুশের কোনো ফারাক নেই,
চোখের পাতা পড়ার আগেই বলে দেবে এমন–
দেখেছো মানুষ খোঁজা পথিক,
"তোমার জন্ম মৃত্যু থেকে,
শুরু থেকে অন্ত চলে যাওয়ার পরেও
তোমার সঙ্গে 'আছি থাকবো'।
তোমার জীবন তো আমার"

তবে এমন কোনো মুহূর্তের সাক্ষী হয়নি
কোনো সূর্যাস্ত,
বা বৃষ্টি ভেজা দিন, মধ্যরাত,
নীল আকাশ, ঝলমলে দিনের আলো,
সে _চেনা -অচেনা রাস্তা, বা রাস্তার পাশে মানুষের দল।
এমন সরল সামান্য 'থাকবো' কথাটির বিন্দু বিন্দু আলো জ্বালতে পারেনি কেউই,
শুধু ছেড়ে যাওয়ার কোলাহল, মনভারের গল্প পাঠ।

ভালো মানুষ খুঁজতে খুঁজতে হয়েছি দগ্ধ, লন্ডভন্ড।
এই শহরে ঘোরে শুধু লক্ষ লক্ষ মানুষ নামের  পিচাশ, হারামি।
মানুষ খোঁজার চক্করে স্নানের ঘরে ক্ষয়ে গেছে বহু সুগন্ধি সাবান,
অকেজো হয়েছে বহু শার্ট, চিরুনি, টুথব্রাশ,শিশিরে আঁকা সোনালী দিনসহ বহু জিনিস,
তবুও পাইনি ভালো বাতাসে ভরা বিশুদ্ধ মানুষ।
মানুষ খুঁজতে খুঁজতে আমিও হুঁশ হারিয়ে ফেলেছি,
এক জনম নয়,
হাজার হাজার জনম ধরেও মানুষ খোঁজা সহজ নয়।

যেদিন থাকে মানুষ খোঁজা  থেকে অবকাশ  নিয়েছি,
মানুষ নামক প্রাণীর কোনো কল্পনা নেই মনের মধ্যে,
সেদিন থেকেই এই প্রকৃতি আমার ভালো মানুষ,
ভালো বন্ধু।
সে আপন প্রকৃতির থেকেও উড়ে আসা এক অজানা পাখি বেসুরো গলায় বলে যায় ' আছি , থাকবো' বোকা পথিক,
তোমার জীবন তো আমার...
তোমার জীবন তো আমার...

রচনা–বিপ্লব দাস
তাং–১৪/০৩/২০২৩