আমাদের শেষ দেখা কফিশপে, খালিশপুরে।
তুমি পরেছিলে হলুদ পেড়ে লাল টুকটুকে শাড়ি, কপাল জোড়া টিপ, চোখের নিচে কাজল, দুহাত ভরা কাঁকন- রং বেরঙের।
আমি পরেছিলাম তোমার দেওয়া বছর খানেক আগের সেই নীল পাঞ্জাবিটা।
বরাবরের মতোই আমার ছিল অনেকটা দেরি
ভেবেছিলাম তোমার থাকবে মুখটা ভীষণ ভারী, রেগে গিয়েই প্রশ্ন করবে- দেরি কেন? যদিও, হলো না তা।
মুচকি হেসে বললে তুমি- এখন বসো, কেমন আছো?
বেশতো আছি, চলছে দিন ভালো- উত্তর দিলাম;
তবে হঠাৎ কেন?
সেসব কথা হোক না একটু পরে, কফির মগটা বাড়িয়ে দিয়ে বললে তুমি- চলো এবার ওষ্ঠ ভেজায়, শব্দ দিয়ে গল্প সাঁজায়।
আমায় নিয়ে স্বপ্ন দ্যাখো? কোলে তুলে হাটবে পথ মাইল খানেক? মেঘের ভেলায় উড়বে তুমি আমায় নিয়ে? সাগর জলে ভাসবে ভেলায়? হাতটি চেপে বললে হঠাৎ আজকে আমায় করবে বিয়ে?
মুখের ভাষা হঠৎ তখন যায় হারিয়ে , চোখের ভাষায় কথা হলো বেশ কিছুক্ষন।
বললাম আমি- ধৈর্য্য ধরো বছর দুয়েক।
চোখের জলে ভিজিয়ে কাজল বললে তুমি- বছর দুয়েক? আর কি তবে দেখা হবে?
মৌনী থেকে বেশ কছুক্ষণ বললে তুমি- আমায় একটু পৌঁছে দেবে স্টেশনে? উঠিয়ে দেবে শেষের ট্রেনে?
এত্ত বড়ো লাগেজ কেনো?
বললে তুমি- লাগেজ ভরা স্বপ্ন আছে, ভবিষ্যতের গল্প আছে।
উড়িয়ে দিব আজ বাতাসে স্বপ্ন গুলো, গল্প গুলো।
কি সব বলো কঠিন ভাষায়! বুঝি না ছাই;
বললাম আমি- আবার কবে দেখা হবে?
হেয়ালি করে বললে তুমি- আবার যেদিন আসবো ফিরে শেষের ট্রেনে।
স্টেশনে দাঁড়িয়ে তুমি তাকিয়ে ছিলে অন্য দিকে, বলেছিলে চিঠি দিও গোটা চারেক প্রতি মাসে, ভুল ঠিকানায়।
সেই যে ট্রেন ছেড়ে গেলো ফিরলো না আর, ফিরলো না আর স্বপ্ন নিয়ে, গল্প নিয়ে।
বছর দুয়েক পেরিয়ে গেছে--
আজও আমি লিখছি চিঠি ভুল ঠিকানায়-
আজও বসে স্টেশনে, ফিরবে কবে শেষের ট্রেন;
স্বপ্ন নিয়ে, গল্প নিয়ে!
১৩ই জুন, ২০২০
শালবাগান, রাজশাহী।