দেখতে দেখতে পেরিয়ে এলাম ষোলটি বছর!
দিন গড়িয়ে রাত - রাত গড়িয়ে দিন হলো, বাড়লো শুধু সময়, সীমারেখা হলো ছোটো।
বিদায় নিলো ষোলটি বিবর্ণ বসন্ত!
কত উৎসব হলো, কত আয়োজন হলো, কতবার ভিজে গেলো বৃষ্টিতে খোলা ছাদ, কদম ভিজলো, বেলী ভিজলো, আমিও ভিজলাম- ভিজে যাচ্ছি ষোলটি বছর শুধুই চাপা অশ্রুতে।
এমন কি কথা ছিলো মৃত্যুঞ্জয়?
সুবোলের চায়ের দোকানে আমাদের প্রথম দেখা;
তোমার মনে আছে মৃত্যুঞ্জয়?
আমার দিকে কেমন করে, তাকিয়ে ছিলে ফ্যালফেলিয়ে
চাপা খুনির দৃষ্টি দিয়ে।
লজ্জা পেয়ে ভীষণ, আমি পালালাম এক দৌড়ে।
কি অদ্ভুত বলো! ভাবিনি তখন এমনও আবার হয়?
আবার হলো দেখা,  ৩১৩নং ক্লাসরুম, কলাভবন।
এবার হলো পরিচয়, চলছিলো দিন অন্যরকম বেশ।
একসাথে থিয়েটারে যাওয়া, মিউজিক ক্লাসে সুর নিয়ে খেলা, বিকাল হলে হাকিম চত্তরের গরম গরম চপ-পাকুড়া , বলাকায় সিনেমা দেখা, ক্যাম্পাসের খোলা মাঠটাতে ফানুস ওড়ানো, বৃষ্টি এলেই রিক্সা করে পুরো ক্যাম্পাস চক্কর দেওয়া, রোজ ক্যন্টিনের এক টাকার স্পেশাল সিংড়া খাওয়া, সন্ধ্যা নামার পর তোমার হাত ধরে ফুলার রোড দিয়ে প্রতিদিন হেঁটে যাওয়া, আরো কত্তো পাগলামি......
সিগারেট বড্ড বেশিই জ্বালাতে তুমি
দিয়াশলাইটা ও ভীষণ ছিল দামী।
সিগারেট জ্বালানোয় আমিও পটু ছিলাম বেশ
এটাই ছিলো আমার একমাত্র বদভ্যেস।
সে সময়টাতে একটা মেয়ের ঠোঁটে সিগারেট দেখাটাই ছিলো রীতিমতো ব্যাঙের সাপ গেলার মত অবস্হা;
আজকাল যদিও সেটা ফ্যাশান।
থাকগে আজ সেসব কথা---
তুমি আমার শক্তি ছিলে মৃত্যুঞ্জয়!
তোমার মনে আছে?
একদিন হঠাৎ, ক্যাম্পাসের ঠিক মাঝে- মলচত্তরে,
বসলে হাঁটু গেড়ে;
চারিপাশে উৎসুক দৃষ্টিতে দেখছিলো সব চেয়ে,
এক গুচ্ছ গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে তুমি,
বললে এবার, গোলাপ ছুঁয়ে বলো-- বাসবে আমায় ভালো।
নাছোড়বান্দা তুমি, এবার ওঠো বললাম আমি;
আমার তখন চোখর কোনে, হঠাৎ কেনো জল?
বুঝলাম আমি, আর কিছু তা নয়--
সে ছিলো নতুন কিছু পাবার বিনিময়।
সেই থেকে হলো শুরু, দিনগুলি কাটছিলো বেশ অন্যরকম, নতুন কিছু, অন্য জীবন।
হোষ্টেলে থাকতে তুমি, আমি আজিমপুরে বাবার বাড়িতে;
রোজ বিকেলে আসতো চিঠি আমার নামে হলুদ খামে;
আগন্তুক কেউ রোজ সকালে দিয়ে যেত- বরষা এলে বেলী-কদম, শরত দিনে কাশ-শেফালি, ফাগুন এলে পলাশ-শিমুল, কখনও বা রক্ত জবা।
বুঝতে আমার হতো না ভুল চিঠির ভাষা, ফুলের ভাষা।
বলতো তারা নীরব ভাষায় তোমার মনের গল্পগাঁথা।
আসলে কোন বিশেষ দিন
উপহার ছিলো তোমার শখের উইনটাইন।
বাতাস এলে বাজতো যখন টুনটুনিয়ে
মনে হতো বাজছে তোমার গলার স্বর,
আমার কানে গুনগিনিয়ে।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো ছয়টি বছর;
এবার তোমার ইচ্ছা গুলো অন্যরকম, করবে বিয়ে এক গোধূলি সাক্ষী রেখে;
আমায় নাকি আরো বেশী বাসবে ভালো ।
হলো কি তা?
কেমন করে বদলে গেলো এক লহমায় স্বপ্নগুলো;
এখন আমার অন্য জীবন, চারিপাশে শুধুই বাঁধন
শুরু হলো ভেঙে যেতে ভালবাসার অবুঝ ভুবন।
এখন তুমি অন্য নেশায়, ব্যস্ত সময় অন্য কাজে;
মুক্ত পাখি খাঁচার ভিতর কাটাচ্ছে দিন কেমন করে--
খোঁজ নিলে না;
পাশাপাশি থাকি দুজন তবু যেন খুব অচেনা।
এমন কি কথা ছিলো মৃত্যুঞ্জয়?
এমন জীবন চাই নি আমি!
আমি চেয়েছিলাম পাখির জীবন, বাঁধন হারা খোলা আকাশ- মুক্ত পবন, চেয়েছিলাম- ভেজা শ্রাবন।
হলো না তা!
বর্নচোরা সময়গুলো পরিয়ে দিলো শিকলবেড়ি অষ্টপৃষ্ঠে- সীমারেখার।
খুঁজতে জীবন ঘাসফড়িংয়ের---
সকল বাঁধন ছিন্ন করে যাচ্ছি চলে,বাবার গড়া সেই বাড়িটায়--
দেখতে খুব ছোট হলেও একলা থাকার যায়গা আছে,
ছোট একাটা বারান আছে,
মাথার উপর একটা স্বাধীন আকাশ আছে,
বৃষ্টি হলেই রোজ ভেজা যায় ইচ্ছে মতন;
তুমিতো জানতে মৃত্যুঞ্জয়-- চেয়েছিলামতো এমন!
আজকে আমি লক্ষীছাড়া, বাঁধন হারা
চুকিয়ে দিলাম সকল বাঁধন;
ভালবেসো তুমি তোমার ব্যস্ত সময়, কাটিও দিন অবহেলায়।
আবার আমি চিলেকোঠায় থাকবো বসে রোজ অপেক্ষায়--
আবার যদি চিঠি আসে রোজ বিকালে হলুদ খামে আমার নামে;
আগন্তুক কেউ রোজ সকালে দিয়ে যায় বরষা এলে বেলি-কদম, শরৎ বেলায় কাশ-শেফালি, ফাগুন দিনে পলাশ-শিমুল,
কখনও বা রক্তজবা।
ভুল হবে না বুঝতে এবার চিঠির ভাষা, ফুলের ভাষা।

২০২০৭২৩।