তুই কেমন আছিস ফাল্গুনী?
কত দিন দেখিনি তোকে
কত দিন বৃষ্টিতে ভিজিনি তোর সাথে
কত দিন নির্জন রাতে মশারিতে জোনাকি ভরে রাতের আকাশের কাছাকাছি থাকিনি।
কত দিন মেঘ হয়ে তারা ছুয়ে চুম্বন করিনি রাতের আকাশ।কত দিন লাল পলাশের বনে যাইনি। লুকোচুরি খেলিনি সাদা কাশফুলের ভীড়ে।
খুব ভোরে উঠে শিবরাত্রির জন্য ভাট ফুল তুলিনি কতদিন আমরা।
তুই কোথায় আছিস ফাল্গুনী? কেমন আছিস?
শেষ বার যাবার আগে বলে ছিলিস 'তুই একটু বস' 'আমি সতু দের বাড়ী থেকে আসছি।'
আমি আজও বসে আছি ফাল্গুনী।বসে থাকতে থাকতে ভগ্নপ্রায় ঐতিহাসিক সভ্যতা হয়েগেছি।সতুদের বাড়ির উঠনে প্রতিটি কোনা কামছিতে তন্ন তন্ন করে কত দিন খুঁজেছি তোকে।চিৎকার করে বলেছি ফাল্গুনী তুই কোথায়? ফিরে আয় ফিরে আয়, আয়না ফিরে একটি বার!
কথা দিচ্ছি আর তোকে বিরক্ত করবো না।
চিমটি কাটবো না তোর গায়ে, চুলের বিনুনি ধরে আর টানবো না কখনও। কথা দিলাম আর লাল কাকড়া ছাড়বো না তোর পায়ে।তুই আয়, আমরা আবার কাটাকুটি খেলবো তোর খাতা জুড়ে।
কিন্ত কোনো জবাব আসেনি।
সতুদের বাড়ি থেকে ফিরতেই সেদিন কে একজন বলে ছিলো ফাল্গুনী মারা গেছে জলে ডুবে।
আমি বিশ্বাস করিনি জানিস? আচ্ছা তুই বল এ ভাবে কেউ মারা যায়?
তুই তো কত ভালো সাঁতার পারতিস।
কত দিন সেই বৃষ্টি প্লাবিত দিঘি সাঁতরে পার হয়েছি একসাথে।কতদিন ভেসে গেছি সমুদ্রস্রোতে আগাছার মতন।
তবে আজ কেন ওরা বলল তুই জলে ডুবে গেছিস?
শুনেছিলাম তোর নিথর দেহটা দেখতে ছুটে গিয়েছিল সবাই। কেঁদেছিল গোটা গ্রাম শোকার্ত বেহুলার মতন।শুধু আমি কাঁদিনি, কেন জানিস? আমি জানি তুই আবার ফিরে আসবি।মুছে দিবি আমার জলভরা মেঘ মনের সব অভিমান।
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরবি আমার চোখের পাতায়।ভাবনার রোদ্দুর হয়ে খেলা করে যাবি আমার পড়ন্ত বিকেলে।
তুই আসবি তো ফাল্গুনী? আমি বড্ড ক্লান্ত আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? ফিরে আয় ফাল্গুনী..
আয়না একাটি বার। আমরা আবার মেতে উঠি শৈশবের কাটাকুটি খেলায়।
জানিস আজও তোর সহজ পাঠ বইটা সযত্নে তুলে রেখেছি আলমারিতে।
যেখানে তোর হাতে লেখা আছে ফাল্গুনী চক্রবর্তী চতুর্থ শ্রেনী। ক্রমিক নং -১..