তুমি স্বদেশ চেয়েছিলে
বিকাশচন্দ্র সরকার
একটা দেশ
একটা শৃঙ্খল পরে ছিল।
একটা দেশ
আপাদমস্তক পরাধীনতায় ধুকছিল।
একটা জাতি
ভয়ে ছিল জড়সড়।
একটা মা, দীর্ঘশ্বাসের গ্লানি মুছে
মুক্তি চাইছিল।
একটা চেতনা
একটা বিবেকী সত্তায় মিশে,
একটা প্রাণ গড়েছিল।
একটা সাহস একটা পাহাড় ডিঙিয়ে,
একটা সন্তান জাগিয়ে ছিল আশা।
এঁকে ছিল মুক্তির ছবি।
এক বুক দীপ্যমান উচ্ছ্বাস এনে,
সে চেয়ে ছিল আলো আসুক।
চেতনার বিস্ফোরনে আসুক মুক্তি।
দেশের মানুষ সেদিন,
বরণ করেছিল তাকে অন্তরের কোমলতায়।
প্রতিঞ্জার টিকা দেখেছিল
তার দৃঢ়তার কপালে।
ক্ষীপ্তময়ী পদক্ষেপে সে পথে নেমেছিল।
মেকি দেশ ভক্তের দল
ভয় পেয়ে সেদিন,
আঁকড়ে ধরেছিল পদ।
তারা ছাড়তে চাইনি কাঙ্খিত ক্ষমতা।
তবু সে স্বদেশ চেয়েছিল।
সে চেয়েছিল মানুষ গুলো মুক্ত হোক।
সে চেয়েছিল
স্বাধীনতা আসুক অর্জনে
স্বাধীনতা আসুক রক্তের বিনিময়ে
সহস্র আত্মত্যাগের নির্মোহ অঙ্গীকারে।
যারা তার সাথে পথ হেঁটেছিল
তাদের কল্পনায় অমরত্বের আলিঙ্গন ছিল না,
ছিল না কিছু হারাবার ভয়।
সে মানবিক আত্মায় প্রেমিক মুখ গড়ে,
আজন্ম লালিত ভয়
ছুঁড়ে ফেলে ছিল।
তার ইচ্ছায় ছিল স্বাধীনতা
তার স্বপ্ন ছিল স্বদেশ।
সে ঘর ছেড়েছিল
দেশ ছেড়েছিল,
হেঁটে ছিল অন্ধকারে
এক বুক দাবানল জ্বেলে।
সে আর ফিরে আসে নি।
আমরা প্রার্থনায় স্বাধীনতা পেয়েছি,
পেয়েছি সৌখিনতায় স্বদেশ।
আমরা নেতাজি পাই নি।
যারা গদি চেয়েছিল
তারা দেশটাকে ভেঙে করেছে খানখান।
ধ্বংসস্তূপে গড়েছে রত্ন সিংহাসন।
এখনো সারা দেশ জুড়ে,
ওড়ে বক্তৃতা মালা।
মিথ্যারা দাপাদাপি করে খোলা বাতাসে,
রক্তাক্ত চোখের উল্লাসী ইশারায়।
এখনো নিছক নেতা হওয়ার জন্য
মানুষ ফেরি করে মানুষের লাস।
এখন আর তেরঙ্গায় ভাসে না প্রাণ,
যতোটা ফুর্তি ওঠে স্বকীয় লাল, নীলে।
তবু এতোটা বছর পার হওয়ার পর,
এখনো প্রত্যাশী নিঃশ্বাস
বাতাসে ভেসে উঠতে চায়।
একটা প্রতিসৃত জয়ধ্বনি
খুঁজে ফেরে তাকে।
একটা শঙ্খ নিনাদ,
এখনো গুমড়ে কাঁদে।
একটা বজ্রদীপ্ত কন্ঠ,
শেষ উচ্চারণের আগে নামে মিছিলে
নগ্নতার পাশ ঠেলে রাস্তায় হাঁটে
সন্ধানী মুক্তির দৃষ্টি।
এখনো আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে
তীক্ষ্ম চিৎকার ওঠে-
"একটা স্বদেশ দিতে পার।"
"তুমি" স্বদেশ চেয়েছিলে।