না আমার বাবার অনেক পয়সা ছিল না।
ছোটবেলায় হাড়িতে কালি না পরলেও,
বাবার চোখের তলায় বিকেল নামতে দেখেছি।
ধীরে ধীরে রাতের অন্ধকারে ডুবেছে শরীর।
রোদ পোড়া শরীর নিয়ে ছুটতে দেখেছি বাবাকে।
সারা শরীর জুড়ে অভাবের ক্ষতচিহ্ন আঁকড়ে আছে।
বই কেনার সামর্থ্য ছিল না আমাদের।
নতুন বইয়ের যে গন্ধ, ছোটবেলায় তা অনেক বড় ব্যাপার ছিল।
স্কুল ছুটিতে ঘুরতে যাবার খবর রাখা হতো না কোনোদিন।
খবর রাখতে হত পাশের বাড়ির দাদা উত্তির্ন হল কিনা।
ওর বইগুলো তো এবার আমার পড়বার পালা।
না! আমার বাবার জীবনে ছুটি ছিলো না।
রুটি খোঁজার জন্য ছুটতে হত এক মাথা বৃষ্টি নিয়ে।
গতবার যে ছাতাটা কিনেছিলো, ওটা দমকা হাওয়ায় থমকে গেছে।
বাবার দুটো প্যান্ট ছিল। আর দু- তিনটে শার্ট।
ছোটো কাকার পুরোনো জামা বাবা পড়ত।
মা হাতে সেলাই করে দিত ,জামার অগোছালো বোতাম গুলো।
পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলেই, বাবা কেঁদে ফেলতো।
তখন বুঝতে অসুবিধা হলেও এখন তা পরিস্কার।
লোকটা টাকার অভাবে বন্ধ করেছিল স্কুল।
বোলপুর থেকে কলকাতা। একটাকা পকেটে।
এই শত অভাবের ঝড়ের আঁচ পড়েনি আমাদের শরীরে।
স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের
ক্লাসে পৌঁছে দিয়েছে আমাকে।
নিজের শ্রমের প্রতি আস্থা রেখে গেলো আজীবন।
এখন বাবার চুল পেকেছে। জীবনদায়ী ওষুধের সাথে বন্ধুত্ব বেড়েছে ।
বাবার এখন আর অন্যের জামা পড়তে হয়না।
মা এর এখন প্রায় চার জোড়া জুতো।
বাবার পকেটে একটাকা থেকে এখন একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন এসেছে।
ঘরে এসি না হলেও, ফ্যানের হাওয়ায় ঘুমতে পারে শান্তিতে।
বাবার শত অভাবের মধ্যেও, থমকে যায়নি আমাদের শিক্ষা।
বাবা বলে, যা তোমার শ্রমের দ্বারা অর্জিত তাই তোমার।
অন্যের কোনো কিছুর অপেক্ষায় নিজেকে থামিয়ে দিও না।
না ,আমার বাবার উচ্চতর বিদ্যালয়ের শিক্ষা নেই।
মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার শিক্ষায় আমার থেকেও অনেক বেশি শিক্ষিত ।ওই মানুষটা।
১১ জুলাই ২০২৩