অনুশীলন শেষে রঘু অন্য সকলের পরিচয় করায়, জয়ের প্রথম দিন শেষ হয়
জয় এটুকু বুঝতে পারে অন্য ছেলেরা বেশ বড় ঘরের, ঠিক তার মত নয়
এরা সবাই লেখাপড়া জানে, কিন্তু বুঝতে পারে না এরা কেন এখানে আসে
বাবুর কাছারিতে ও আসত এদের মতই কয়েকজন, চলে যেত রাত শেষে
নিধিকে জিজ্ঞেস করেও উত্তর পায়নি আগে, সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে
গুরু রঘু, নিজে ও পাকানো চেহারার নরহরি, তিনজন আলাদা মাদুরে ছেড়ে ছেড়ে
জয় ভোরে উঠে আখড়ার উঠনে গিয়ে বসে, মনে হল পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে
তোর কি ঘুম হয়নি ? ঘাড় হেলিয়ে বলে হ্যাঁ, কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না কাছে
মনে সন্দেহ হয়, ধীরে উঠে দাঁড়ায়, এদিক ওদিক তাকায়, কাউকে দেখতে পায় না
দূরে চট কলের বাঁশির শব্দ ভেসে যায় ভোরের গঙ্গা জুড়ে, এ শব্দ তার অচেনা
হটাতই জয়ের মনে পড়ে গাঁয়ের কথা, সেখানেও নদীপারে জঙ্গল ফুঁড়ে সূর্য ওঠে
ধীরে ছড়িয়ে পড়ে বাদাবন জুড়ে, লাল কাঁকড়ার আনাগোনা গর্ত মুখে নদী তটে
নিঃশব্দ চলাচলে বিন্দু বিন্দু দাগে এঁকে যায় কত ছবি ভাটির ভেজা বালির বুকে
জোয়ারের সময় ঠিক বোঝে, গর্ত মুখে বালি এঁটে সযত্নে, থাকে নিশ্চিন্তে সুখে।
সকাল বিকেল নিয়ম করে অনুশীলন ছাড়াও জয় আরো কিছু শেখে গুরুর কাছে
জয়ের আগ্রহে গুরুও বেশ খুশী, যত্নকরে শেখায় আত্মরক্ষা; আক্রমণ কৌশল যত আছে
সন্ধ্যার নীরব নিস্তব্ধায় আখড়া ছেড়ে গঙ্গার পাড়ে গুরু শিষ্যের আলাপ জমে ওঠে
জয় শুনতে ভালোবাসে বলার চেয়ে, কখনো কখনো দুজনেই চুপ ঢেউ ভাঙে তটে
পনেরো দিন পার হয়ে গেল জয় এখানে আছে, বাড়ির বা বাবুর খবর জানে না সে
ভাবে গুরুর অনুমতি নিয়ে যাবে, কিন্তু মনে ভীষণ দোটানা, পথ চিনে পারবে যেতে
অচেনা শহর, মানুষজন ও কেমন একটু আলাদা, গাঁয়ের ছেলে সে ভয় ভয় করে
এমন সাত পাঁচ ভেবে দিন কেটে যায় অনুশীলন আর টুকিটাকি কাজ অবসরে
বৃহস্পতিবার আখড়ায় ছুটি, বেলার দিকে রামু আর পালোয়ান পোঁটলা নিয়ে আসে
বাবু পাঠিয়েছেন, কয়েক জোড়া ধুতি, গামছা, ঘি, শুকনো মিষ্টি আখড়া গুরুর সকাশে
জয় একে একে সকলের খবর নেয় রামুর কাছে, জানতে পারে বাবুর শরীর ভালো নেই
মকদ্দামায় খুব ব্যস্ত বাবু, রামু বলে টাকা থাকলিও জ্বালা অনেক, জ্ঞাতি শত্তুরের নড়াই
জয় এত শত বোঝে না, ভাবে জ্ঞাতি আবার শত্তুর হয় নাকি ! কখনো শোনেনি আগে
আখড়া গুরু বলে; রামু খাওয়া দাওয়া করবে তো হে ! তবে বলে দিই নরহরি কে।
সোনারপুর
২০/০১/২০২২