জয় নিজের জায়গায় ফিরে ভাবতে থাকে, বাবুকে কি বোলবে ? গাড়ীর দুলুনিতে ঘুম পায়
গাড়ী গন্তব্যে পৌঁছায় , বাবু উঠে আসেন, দরজা থেকে ডাক দেয় – জয় উঠে আয়
বাবুর ডাকে ঘুম ভাঙে, সুটকেস মাথায় এগিয়ে আসে, বাবু আগে পিছনে জয়
ইস্টিশনের বাইরে দাঁড়ানো গাড়ির একটাতে ওঠেন বাবু, বাক্সটা রাখতে বলেন পাশে
চালককে কিছু বলেন বাবু, সে ইশারায় জয় কে ডাকে, চালকের পাশে জয় বসে
জয়ের দু-চোখ বিস্ময়ে বিভোর, রাস্তার দু-পারেই দোকান, লোহার পাতের উপরে চলা গাড়ী
মানুষ নিয়ে ছোটে মানুষ দু-চাকায়; যেন পিঠে নিয়ে ধায়, মাথা উঁচু করে সার সার বাড়ি
কোথাও রাস্তার পাশে বগ-বগিয়ে ওঠে ঘোলা জল, ভোঁ ভোঁ ভেঁপু বাজায় চালক মাঝে মাঝে
আরো কিছু পরে গাড়ী এসে থামে তে-মাথার মোড়ে, বেশ বড় এক ইট রঙা বাড়ির নিচে
ভেঁপু বাজায় চালক, লোহার দরজা খোলে গুঁপো দরোয়ান, গাড়ী এসে থামে উঠোনের মাঝে।
রামু এসে দাঁড়ায় নমস্কার করে, বাক্সটা নামায়, বাবু বলেন জয় কে নিয়ে যা তোদের ঘরে
আজ্ঞে বোলে ঘাড় নেড়ে বাক্স নিয়ে দোতলায় উঠে যায়, হাতে পুঁটলি নিয়ে আসে ফিরে
বলে এসো ভায়া এদিকে এসো, নিয়ে যায় দালানের শেষে বড় একটা ঘরে রাস্তা ঘেঁসা
জানলার পাখি দিয়ে লাল মেঝেতে রোদ্দুরের ছটা, দক্ষিণ-পশ্চিমে ঘরটা বেশ খাসা
রামু বলে, শোনো ভায়া এই ঘরে আমরা তিনজন থাকি, এখন তোমার নম্বর হলো গে চার
দ্যখো চার গাছা দড়ি টাঙানো আছে, ঐ কোনেরটা ফাঁকা, ওটা কাপড় রাখার জায়গা তোমার
মাদুর আর বালিশ পেয়ে যাবে শোবার, এই পুঁটলিটা রাখো বড় মা দিয়েছে, পোশাক আছে
জয় পুঁটলিটা নামিয়ে রেখে বলে, দাদা চানের জায়গা... রামু বলে হ্যাঁ, ঐ যে চাঁপা গাছের কাছে
বাইরে কুয়ো, ভিতরে জলের কল, কাপড় ধোয়ার জায়গা, পায়খানা সব আছে, আমাদের জন্যে
তা তুমি যদি চাও নেয়ে ধুয়ে এসো, দেখি ভাত তরকারি কি পাওয়া যাবে এখন এই অপরাহ্ণে।
বেলা প্রায় শেষ জয় দালানে একা বসে, রামু কেটলি হাতে এসে বলে ভায়ার চা চলে নাকি
জয় মাথা নেড়ে বলে না, বেশ বেশ – আমিও খেতুম না, এই বাড়িতে এসে ধরেছি ঝক্কি
রামুও জয়ের সামনেই বসে, চায়ে চুমুক দিয়ে বলে আঃ – গীতার মা আজ করেছে ভালো
জয় চুপ করে শোনে, রামু বয়সে বেশ খানিক বড়ই হবে, সন্ধ্যা হয় ঘর দালানে জ্বলে আলো
রামু চা শেষ করে বলে, তুমি বসো – কাজ গুলো সেরে আসি, পা চালিয়ে চলে যায় অন্য পাশে
বেশ অনেকটা সময় পরে রামু মাদুর বালিশ দিয়ে যায়, সারা দিনের ধকলে জয়ের ঘুম আসে
ঘরে তার জায়গায় মাদুর বিছিয়ে শুয়ে পড়ে জয়, ঘুম ভাঙে রামুর ডাকে, ঘুমচোখে উঠে বসে
বলে হ্যাঁ ঘুমিয়ে... রামু বলে চল খেয়ে আসি, জয় বলে না, ভায়া ঘুমোবে তো – খেয়ে এসে
জয় শুয়ে পড়ে, গভীর ঘুমে স্বপ্ন দ্যাখে – সেই জখম বন্য বরাহ যেন আসছে রে রে করে
ধড়মড়িয়ে উঠে বসে, শুনতে পায় ফড় ফড়, ঘড় ঘড়, ফুসস-স্ , ঘুম আসে না শব্দ-বাহারে।
সোনারপুর
৩১.০৮.২০২১