কত অজানারে দেখি ফিরে ফিরে মাঠ পেরিয়ে গাঙ পেরিয়ে
কোথাও মরা নদীর চরে কোথাও সবুজ শূন্য ঘরের দাওয়ায়
পথের বাঁকে বটের তলে শুকনো নালা-খালের পাড়ে খেয়া ঘাটে
লক্ষ কন্ঠের বাজ আগুনে ঝলসে ওঠা নোনা বাতাস যাচ্ছে ধেয়ে।
গাঁয়ের মানুষ মনের মানুষ, ওরা ভালবাসতে জানে এতো সবাই জানে
বাদায় হেঁটে পেরিয়ে খেয়া গিয়েছি নানা কাজে আজো তা মনে পড়ে
কখনো বা মোটর লঞ্চে সাওয়ার হয়ে দক্ষিন থেকে উত্তরে; কোর্টে
পথের ধুলো কাদা মাঠের আল সঙ্গী ছিল, ওরা আমায় চেনে
চিনত খেয়া ঘাটের মাঝি, হাটে মাঠের সহজ সরল মানুষ
ভাবছি কেবল নিজের মনে কেমন করে হারিয়ে গেল শান্তির ফানুস।
শুয়ে বসে রাতদুপুরে শুনতে পেতাম একাত্তরের গোলার আওয়াজ
দেখিনি সমস্বরে জেগেওঠা গ্রামের দূর্গার প্রতিবাদ, রন-চণ্ডীর সাজ
চুরি ডাকাতি ছূটকো ছাটকা, আসত পুলিশ লঞ্চে করে চলত ধরপাকড়
খাল ছিল দখল মুক্ত, কলমি শাকে ঢাকা ছলছল জল থাকত সারা বছর
হয়ত টাকা পয়সার আকাল ছিল, সময়ে জুটত খেত মজুরের কাজ
তবুও মানুষ গুলোর শান্তি ছিল, অভাব থাকলেও ছিল সম্ভ্রমের সাজ।
সৈনিক বোটের যাতায়াত মাতলা হয়ে বিদ্যাধরী তারপর কোন ঘাটে
মরিচঝাঁপির কাঁচা কাঠে বোঝাই নৌকা বিকাতো গ্রামের নানা হাটে
হরিনামে অষ্টম প্রহর চলত গ্রামে গ্রামে, ভাবত না কেউ যাবে মান
দূরের জেলার কীর্তনিয়ার দল আসত বাড়ি বাড়ি শোনাতে নামগান
ক্ষেতে ক্ষেতে দুটো ফসল উচ্ছে ঝিঙে কুমড়ো লংকা, মূল শস্য ধান
কেরোসিনের কুপি ছিল, হাঁস মুরগি গরু মোষ ছাগল চরত মাঠে মাঠে।
এক ফসলার দুঃখ শেষ, কোথাও কোথাও ফলছে ফসল বারোমাস
নানা সুখের ঝাঁপি খোলা হাত বাড়ালেই মেলে, নেই কোথাও দীর্ঘশ্বাস
চলতে চলতে ভাবি সবুজ ছায়া গেলো কোথায়, বদলে গিয়েছে বিন্যাস
গ্রামের বুড়ো পাড়ার খুড়ো এখনো কি নজরে রাখে শাসনের রাশ
মানুষ ছিল আজো আছে, বদলেছে কথার ধরন কেন ভীষণ অবিশ্বাস
তাড়াতে ডাকাত রাত জাগে কী পাড়ার যুবক? একআত্মায় ফেলে শ্বাস !
দুধে ভাতের দিন গিয়েছে, নানা খানায় নানা সজ্জায় যে যার মতন
মাটির পথ হয়েছে পাকা, স্কুল কলেজ স্বাস্থ্যকেন্দ্র সামাজিক উন্নতির লক্ষণ
এগিয়ে চলায় এটাই হবার ছিল, কেন তবে হচ্ছে আত্মার অবনয়ন
শান্তিরা গেল কোথায় মানুষের মন ছেড়ে কেন করল সে পলায়ন
নাকি আমার মনের ভুল, আগের মত খোলা মনেই করছে মানুষ যাপন
বোকা বোকা প্রশ্ন করি নিজের কাছে, খুঁজে বেড়াই রুক্ষ পথে কারণ।
সোনারপুর
০১.০৩.২০২৪