জীবনের অবসানে -
তোমাদের শ্মশানে এ' দেহ যাবে না,
তাই তা' ভস্মও হবে না।
মৃতদেহ সৎকারে শত আয়োজন,
এ'সবের নেই আর কোন প্রয়োজন।
পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন
বাড়ির অন্দরে এসে-
অবশেষে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাবে,
এ'দেহ কারো আর দেখা হবে না।
কোন শোক বাণী লেখা হবে না।
পাহাড়ী টিলা আর সমতল মিলে
যে প্রিয়তমা তিলে তিলে
যুবতী হয়েছে; যার সাথে মিশে আছে
শৈশব, কৈশোর,
যৌবনের ভোর, তপ্ত দুপুর,
প্রিয় পথ-প্রান্তর, পুকুরের ঘাট,
সবুজের মাঠ, মাটির ঘর
যাদের জন্য আজো কাঁদে অন্তর;
যৌবনে বধূ হয়ে এসেছিল যে,
যেই ঘরে হয়েছিল সুখের বাসর,
যেই ঘর হতে বধূ অসীমের পথে
চলে গেছে অর্ধযুগ আগে,
আজো জাগে বেদনার সুর,
সেই দূর গ্রামে, সেই ঘরে এ দেহ যাবে না।
নিথর দেহের 'পরে-
হাহাকার করে লুটোপুটি কেউ খাবে না,
ফ্যাকাসে মুখের দিকে চেয়ে দু'গণ্ড বেয়ে
কারো চোখে ঝরবে না অশ্রু ধারা,
হৃদয় বিদির্ণ করে আত্মহারা
কেউ হবে না। একান্ত আপনজন, তরুণের দল
হবে না চঞ্চল এটা ওটা হাজারো কাজে।
শবাধার সাজে কারো নেই ব্যস্ততা,
সুনসান নিরবতা, চিতা তো সাজাতেই হবে না।
মুখাগ্নি করতে কেউ শ্মশানে যাবে না।
হবে না ফুলেল বিদায়।
থাকবে না কারো কোন দায়।
অনিত্য সভায় পুণ্যদান, স্মৃতিচারণ!
সকলই বারণ । কারো বিরক্তির কারণ
হবো না। সাপ্তাহিক ক্রিয়া কিংবা বাৎসরিক কোন অনুষ্ঠান, কোন তিথি,
কোন প্রয়োজন নেই, সব নিবৃত্তি।
মৃত্যুর পর-
সোজা হিমঘর নিয়ে যাবে দেহ।
টেবিলের 'পর রাখা হবে,
একদল শিক্ষানবীশ দু'পাশে দাঁড়াবে।
দক্ষ হাতে উন্মুক্ত হবে দেহ অভ্যন্তর।
অতঃপর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে
সব পরিচয়, কার্যকারিতা বুঝিয়ে দেবে।
শিক্ষার্থীরা নোট করে নেবে।
শুধু জানা হবে না তাদের-
এ'চোখে স্বপ্ন ছিল কত,
হৃদপিণ্ডে ফল্গুধারা বইত অবিরত,
মস্তিষ্কের কোষে কোষে হাজারো স্মৃতি
সুখ-দুঃখ, প্রেম, প্রীতি, হারানো বেদনা,
না পাওয়ার জ্বালা, মানুষের ভালবাসা,
কত অবহেলা!
শত কাটাকুটি করে কিছুই রবে না আর
এ'দেহ চেনার। এক পিণ্ড মাংসের দলা,
মাটির গভীরে পুঁতে দেবে
এই ধরা গ্রাস করে নেবে।