(গত ২৯-০৬-২০১৯ তারিখে কবি অরিন্দম ঘোষ মহাশ‌য় "আলোচনা দরকার" শিরোনামে একটি লেখা দিয়েছিলেন, সেটি পড়ার পরে পাহাড়প্রমাণ ভাবনা সব ভিড় করল মনে, লিখলুম, কোনো নিয়ম না মেনে,যা এল মনে, অগোছালো, এলোমেলো...)

(মূলত যুবসমাজ ও আধুনিক কবিতা (যেমনটি ছিল আলোচনা) মাথায় রেখেই লিখতে শুরু করেছিলাম ,তারপর কোনদিকে মোড় নিয়ে কোথায় পৌঁছল আমি নিজেই জানি না, কিছুটা অভিজ্ঞতা থেকেও লিখেছি, শুধু নিবেদন এই লেখা আধুনিকতার সাথে দ্বন্দ্ব নয়, কিংবা নতুন মানেই 'খারাপ' এমনটিও বলা নয়, কিছু স্বতস্ফূর্ত মনোভাব ব্যক্ত করেছি মাত্র।আলোচনার পাতায় এটি আমার প্রথম লেখা ,তাই ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন কবিগণ)

কবিতা সমাজের দর্পণ ,নিঃসন্দেহে,তার থেকেও বেশী কবিতা মনের দর্পণ ,
চোখ রাখবে যে জন কবিতাতে
দেখবে আপনারে...
কিন্তু প্রশ্ন হলো কি দেখবে? কীভাবে দেখবে? তার ৫০% নির্ভর করে কবির  উপর,৫০% পাঠকের উপর...এখানেই সমস্যা যত।বিষয় ,কি নিয়ে লিখব কবিতা, প্রকৃতি?  
আচ্ছা ,
প্রথম পংক্তি :
বিস্তৃত জলরাশি খেলা করছে চোখের সামনে
দ্বিতীয় পংক্তি:
'হলুদ' সূর্যটা জানান দিচ্ছে দিন পালাল দিগন্তের দেশে
তৃতীয় পংক্তি:
প্রিন্সেপ ঘাটে তোর হাতে আমার হাত...মনে পড়ে......

যাহ!

আচ্ছা প্রকৃতি না, প্রেম নিয়েই লিখি
চতুর্থ পংক্তি ...
নীল সমুদ্র চোখে তোর হারিয়ে গেছিলাম আমি,
শূন্য কপাল চাপড়ে বলেছিলাম আমিও সুখী,
একটা গোলাপ তখনও কাঁদছে পকেটে,
দিতে পারিনি,
তোর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলতে পারিনি তোকে ভালবাসি..
এক পাহাড় অন্ধকার ঠেলে তোর বাড়ি পর্যন্ত গেলাম ,তবু বলতে পারিনি ।
তুই স্বার্থপর না, বিশ্বাস কর ;
আমিই চেয়েছিলাম তোকে আমার থেকেও বেশী
বরষার প্রথম বৃষ্টি তুই ,
কেমন আছিস নিজের নতুন ঘরে?
ওও কি তোকে আদ...

এরপর কোথায় কোন অজান্তে যে লেখা গিয়ে ঠেকবে তা বলা থাক ...

যুবসমাজ যদি প্রেমের উন্মত্ততা না লেখে, যদি বিচ্ছেদ না বোঝে, যদি রাজনীতি নিয়ে চর্চা না করে তবে সে যুব হতেই পারে না-  এমনি একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে আজকের দিনে, এবং দিনে দিনে বাড়ছে, কারণ তা প্রশ্রয় পাচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ায়, বন্ধুদের মাঝে ইত্যাদি ইত্যাদি ,ওই যাকে বলে ট্রেন্ডিং, সেখানে ভুল ঠিক,অশালীনতা (যদিও কিছু ব্যক্তির কাছে আধুনিকতা)
এসব ভাবাটাই বড়ো বালাই।

এবার দ্বিতীয় দিক , তাহলে কবিতার জগৎ থেকে বাকি বিষয় হারিয়ে যাচ্ছে কেন?
প্রকৃতি? কিংবা মা, ভাই বোন কে নিয়ে লেখা ? দেশে ভালো কি কিছুই হয় না?
প্রেম নিয়ে যদি একশ কবিতা হয় এসব নিয়ে একটিও না কেন?
জানেন,  আমার কি মনে হয় তার প্রধান কারণ ,আমরা জানি কতটুকু প্রকৃতিকে? মা কে? এই দেশের ভালো কে?
সে সব না দেখা যায় টিভিতে,না খবরের কাগজে,
প্রকৃতি চোখের সামনে থাকলেও বন্ধুটির হাত ধরে ঘটা করে প্রিন্সেপ ঘাট,কিংবা শিলং কিংবা দার্জিলিং না গেলে কি আর প্রকৃতির দেখা মেলে? ওই আকাশ ,সূর্যোদয়,সূর্যাস্ত এগুলো পাওয়া আজকের দিনে ভাগ্যের ব্যাপার,প্রকৃতি একটা সাধনা, তা একদিনের হাওয়া বদলে হবে না;

কাজের জন্য সবাই কম বেশী বাসে , ট্রামে, ট্যাক্সিতে যাতায়াত করি, অথচ মোবাইলের ওপারের জগৎটা এত বেশী প্রিয় হয়ে উঠছে যে, জনালার বাইরে, সামনে, সচক্ষে কিছুই দেখা হয়ে ওঠে না, তাই সে সব কথা লেখাও হয়ে ওঠে না,ফলে আধুনিকতার উপাসকদের তা পড়াও হয়ে ওঠে না, প্রকৃতিকে ভালবাসা হয়ে ওঠে না ( তার যত্ন করা তো দূরের কথা,অহংকারের ঠেলায় তার অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে, ফলে আমরাও, অক্সিজেন কোথায়? জল কোথায় ? বলে চিৎকার করছি,যা নিয়ে ভাবনা করার কোনো প্রয়োজনই ছিল না,তাই নিয়ে ভাবতে হচ্ছে...)

এবার আসি মোটিভেশন,অনুপ্রেরণায়
রাস্তার পাশে জমে থাকা বৃষ্টির জলে চড়ুইটা স্নান করে গেল দেখা হল না,  একজন লজেন্স বিক্রেতা পিছনের বাস থেকে নেমে দৌড়চ্ছে সামনের বাসের দিকে( সংগ্রাম), অন্ধ ধূপ বিক্রেতা অপেক্ষা করছে কখন শুনতে পাবে বাস থামার শব্দ (প্রতিকূলতায় হার না মানা লড়াই) ,আকাশে তখন সূর্যাস্তের রাঙা প্রভা..মৃদু বাতসে চকের গুঁড়ো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে শিল্পীর আঁকা থেকে,তবুও তার মনে এক শ্রান্ত শীতলতা (প্রাপ্তির আনন্দ) ....কই দেখিনি তো!

অতঃপর মনের দর্পণে প্রেমিকের আলেখ্য মানুষরূপী হয়েই থাকল প্রেম হল না, অথচ সোজা সাপটা প্রেমের কবিতায় শুধুই বিচ্ছেদ,সেদিকেও খামতি কেন?ভুল বোঝাবুঝি?নাকি ইচ্ছে ? সহানুভূতি লাভের আশা?

কবি তোমার নিবের কালি কি কেঁদেছিল শব্দগুলো লেখার সময়,
তুমি অনুভব করেছিলে  আমার হৃদয়টাকে?
একগুচ্ছ প্রশংসা ঝুলি ভর্তি করে তুমি চলে গেলে
আমার ব্যর্থ প্রেমের ক্ষতে নুন ঢেলে, বলনা কি লাভ পেলে?
এ প্রশ্ন কেই বা করে কালে
পাঠকও যে মিথ্যাচারে ভোলে...

তাই ওরাও বলে আমরাও শুনি তারপর ভুলে যাই,আবার বলে ,শুনি,আবার ভুলে যাই,নতুন কিছু চাই; ততক্ষণে প্রেমিকা পালটে গেছে,প্রেমিকও পালটে গেছে,অগত্যা নতুন কিছু...

আচ্ছা প্রেম ছাড়া কি পৃথিবীতে আর কোনো সম্পর্ক নেই? বাবা, মা,ভাই-বোন (ওই বৃদ্ধাশ্রম বাদে) ---ওঃ ,মায়ের সঙ্গে ভালো করে কথা হয়নি অনেকদিন ? তুমি ব্যস্ত,মা ব্যস্ত....
কথা হয়না?, হয়ে ওঠেনা?
তাই সেসব নিয়ে লেখাও হয়ে ওঠে না..

আসলে যাকে আমরা ভালবাসি, তার যত্ন নিই, সবার সামনে ,ক্যামেরার সামনে কিংবা ঘটা করে অনুষ্ঠান করে নয়; সবার আড়ালে, মন থেকে হয়তো মনের অজান্তেই, তাই আজ যা যা হারাচ্ছে পৃথিবী থেকে, সাহিত্য থেকে আমরা তাদের ভালবাসা ছেড়ে দিয়েছি, এটা কালের হাওয়া,আধুনিকতা কিংবা নতুন সমাজ নয়, এটা অভাব,মননশীলতার অভাব।
শেষমেষ বলি,

কবিতা ধর্ষক নয়,
কবিতা বাঁচার আশা,
কবিতা ভরা সভায় বস্ত্রহরণ নয়,
কবিতা  শাড়ির আঁচল সামলে রাখা সেফটিপিনের ভাষা,
কবিতা জোয়ারের উপচে পড়া নদীর জল
ভাটা শেষের চিকচিকে সাদা বালি
কবিতা নয় কোনো মরা নদীর কঙ্কাল,
সে যে ভবিষ্যতের হ্রদ সৃষ্টির  বাণী।

সবশেষে কবি অরিন্দম ঘোষ মহাশয় ও সমস্ত কবিগণকে জানাই অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।