আমি একজন নার্স,
রোগীর সেবা আমার ধর্ম,
কিন্তু, আজ দরকারে আমার সেবা করে কে ?

---ঃ---------ঃ---------ঃ---------ঃ---------ঃ---------

জন্ম আমার গ্রাম-বাংলার
মুসলিম পরিবারে,
ইঞ্জিনীয়ার আব্বা বহুকাল
থাকেন দূর-দেশান্তরে ।

বঞ্চনার শুরু তখন থেকেই
যখন ছিলাম মায়ের পেটে,
গর্ভবতী মায়ের যত্ন-আত্তি
ঠিকঠাক নাহি জোটে ।

পৃথিবীতে এলাম
কান্নার শব্দে ভরল ঘরখানি,
ছেলে নয়, মেয়ে ? সবাইকে
খুশি করতে পারিনি ।

ছোটবেলা কেটে গেল
নিজের গ্রামেতেই,
হাইস্কুলে পড়তে গেলাম
আব্বার কাছেতেই ।

আব্বার বদলির চাকরি
তাই ঘুরেছি বহু শহর,
এ ভাবেই কেটে গেল
আমার কৈশোর ।

জন্ম থেকেই দুর্বল
পড়া মনে থাকত না,
সেদিন এল বদলে দিল
আমার জীবনখানা ।

পড়তে বসে হঠাৎ
কেমন মাথা ঘুরে গেল,
পানির ছিটা দিয়েও
হুঁশ ফিরে নাহি এল ।

ডাক্তার বলেন,- "মিনারেল্স
থাকছে না শরীরে,
সুগার, প্রেশার কম, ক্ষতি
করছে কিডনিরে" ।

পড়ার ক্ষতি হতে লাগল,
কোন রকমে পাশ,
তবু নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছি
মেটাতে মনের আশ ।

সেবা ধর্ম চাইলাম নিতে
নার্সিং ট্রেনিং করে,
আল্লার দুয়ায় নিলাম একটা
চাকরি যোগাড় করে ।

মহকুমা হাসপাতালের
নার্স হয়ে গেলাম,
ল্যাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট দীপকের
সেখানেই দেখা পেলাম ।

রোজ'ই মাথা ঘোরায়
শরীর দুর্বল হতে থাকে,
দীপক প্রেমের হাতছানি দিল
নিকাহ্ করলাম তাকে ।

দীপক হিন্দু ব্রাহ্মণ, আর
আমি মুসলমানের মেয়ে,
দু-বাড়ির লোক ক্ষেপল,
সম্পর্ক গেল শেষ হয়ে ।

শ্বশুরবাসা হল না দেখা
আব্বা-মা'ও চিনল না,
দুনিয়ায় চেনা রইল
শুধু স্বামীর বাসাখানা ।

সে বাসাও অচেনা হল,
ডাক্তার বললেন যেদিন,
"অতি দুর্বল, প্রেগন্যান্সি
চাইবেন না কোনদিন "।

এতদিনের ভালবাসা, মাত্র
দু-মাসে ফুড়ুৎ হল,
স্বজনহারাকে আমার সাজন
আরো একা করে দিল ।

আজ আমি ষাটের গোড়ায়,
কিন্ত, চাকরি ছাড়িনি,
সেবা ব্রত মহান ব্রত,
তাকে কখনো ভুলিনি ।

-----ঃ-----------ঃ-----------ঃ-----------

আমি নার্স, -  জাহানারা বেগম,
সেবা আমার ধর্ম,
কিন্তু, আমার সেবা করে কে .... ?
আজ কর্মজীবন শেষে,
জীবন-যুদ্ধের ক্লান্ত ফৌজি,
আমায় দেখে কে ?